।। নিউজ ডেস্ক ।।
এক সময় গ্রামাঞ্চলে ধান ভানার জন্য ব্যবহার করা হতো উড়ুন-গাইন ও ঢেঁকি। দিনে কিংবা রাতে শোনা যেত ধান ভানার এই ছন্দময় শব্দ। বাড়ির মহিলারা হস্ত ও পা চালিত এসব যন্ত্র ব্যবহার করে দিনের পর দিন ধান ভেনে খাবার তুলে দিত পরিবারের অন্যান্য সদস্যদর মুখে। কিন্তু যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে এসব হস্ত ও পা চালিত যন্ত্র। আধুনিকতার ছোঁয়া মানুষকে সবকিছু সহজলভ্য করে দিলেও বিশুদ্ধতার জায়গা দখল করে নিয়েছে অস্বাস্থ্যকর পণ্য ও খাবার। বর্তমান বাজারে চিকন চালের নামে ভোক্তাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন ক্যামিকেল মিশ্রিত চকচকে চাল। যা মানবদেহের জন্য বয়ে আনছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। আর এই স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে নিজেই ঢেঁকিছাটা লাল চাল উৎপাদনের উদ্যোগ নেন মোশাররফ হোসেন ফারুক।
কুড়িগ্রাম জেলা শহরের কৃষ্ণপুর পাইকপাড়া গ্রামের শিক্ষিত ও সচেতন যুবক মোশাররফ হোসেন ফারুক। শহরের এমএ সাত্তার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তিনি। নিজে একজন উচ্চ প্রেসারের রোগী, স্ত্রীও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। দেহের সুস্থ্যতার জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শে লাল চালের ভাত খাওয়া শুরু করেন। প্রথমদিকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে ঢেঁকিছাটা লাল চাল কিনে খেতে হতো তাদেরকে। যা ছিল অনেক কষ্টকর। তাই এক সময় তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজেই এই চাল তৈরি করবেন। প্রথমে ইউটিউব ঘেঁটে দুটি ঢেঁকি স্থাপন করলেও সফল হতে পারেননি তিনি। এরপর ঠাকুরগাঁও জেলায় গিয়ে এ রকম পদ্ধতি অনুসরণ করে এখন নিজেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঢেঁকিছাটা চাল উৎপাদন করছেন। সেই চাল এখন বিক্রি হচ্ছে, রংপুর, বগুড়া, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
উদ্যোক্তা মোশাররফ হোসেন ফারুক বলেন, এই যান্ত্রিক ঢেঁকি তৈরিতে আমার প্রায় ২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। উৎপাদিত চাল আমি নিজে খেতে পারছি ও উচ্চবিত্তদের মাঝে বিক্রিও করছি। বর্তমান স্বল্প পরিসরে উৎপাদন হওয়ায় দাম একটু বেশি, তবে বেশি মানুষ যদি এই কাজে সম্পৃক্ত হয় তাহলে চালের মূল্য অনেক কমে যাবে।
উদ্যোক্তার স্ত্রী জেসমিন নাহার বেলি বলেন, প্রথমে মনে হয়েছে পাগলামি করছে। পরে যখন লাল চাল উৎপাদন শুরু হলো, আমরা খেতে লাগলাম এবং প্রতিবেশীদের দিলাম, তখন মনে হচ্ছে একটি ভালো কাজ করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. এস, এম আমিনুল ইসলাম বলেন, ঢেঁকিছাটা লাল চালের পুষ্টিগুণ অনেক। দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্প্রতি কুড়িগ্রামে লাল চাল উৎপাদন হচ্ছে এবং এই চালের গুণগত মান ও স্বাদ বজায় আছে। এই লাল চাল উৎপাদনে মানুষের আগ্রহ বাড়লে এটি মানুষের রোগ-ব্যাধি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।