।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
আমি ভাবতেও পারি নাই থানাটাই আমাদের এই অজপাড়া দুর্গম চরে আসবে। এখান থেকেই সব অভিযোগ ও সমাধান পাব। আমার জমিজমা নিয়ে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। আজকে এখানে থানা বসেছে, আমার এতদিন চলে আসা জমির ঝামেলাটা আজকে শেষ হলো। জমিটা নিয়ে অনেক সমস্যায় ছিলাম। বিভিন্ন জায়গায় অনেক টাকা-পয়সা খোয়েছি। এমন হাসিমাখা অশ্রু চোখে কথা গুলো বলছিলেন কোদালকাটি ইউনিয়নের কাদের মেম্বারপাড়া গ্রামের মৃত আরান আলীর ছেলে ষাট বছরের আলিম উদ্দিন।
শনিবার (০২ মার্চ) সকাল ১১টায় রাজিবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আশিকুর রহমান পিপিএম এর উদ্যোগে কোদালকাটিতে অস্থায়ী পুলিশি সেবা কেন্দ্র গড়ার লক্ষ্যে তিনি পুরো টিম নিয়ে বিভিন্ন চর ও ধুলাবালি নাকেমুখে মেখে দুর্গম কোদালকাটি ইউনিয়নে পৌঁছান।
পরে বিভিন্ন চর থেকে আসা ভুক্তভোগীদের অভিযোগ নেন তিনি। যেসমস্ত অভিযোগ সমাধান করার সেগুলো তৎক্ষণাৎ সমাধান করেন ওসি আশিকুর রহমান। এমন মহতী উদ্যোগে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন তিনিসহ গোটা টিম।
মন্ডলপাড়া গ্রামের আমিনুর রহমান মাষ্টার বলেন, কোদালকাটির ইতিহাসে এমন উদ্যোগ নিতে দেখিনি। তাঁর এমন মহতী উদ্যোগে আমরা সত্যি আনন্দিত, উচ্ছ্বাসিত। প্রথম দিনেই তিনি ২০ বছর ধরে চলে আসা একটা মামলার সমস্যা মুহূর্তেই সমাধান করে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। তাঁর এমন কাজে প্রশংসা না করে পারছি না।
সাজাই সরকারপাড়া মৃত নছের আলীর মেয়ে ভুক্তভোগী নাজমা খাতুন (৪০) জানান, পারিবারিক সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন অস্বস্তিতে ছিলাম। রাজিবপুর এত দূরে হওয়ায় মহিলা মানুষ হয়ে থানায় না যেতে পারায় অনেক নির্যাতন সহ্য করে ছিলাম। আজকে আমাদের এখানে থানার কার্যক্রম শুরু করেছেন। আমি এতদিনের নির্যাতনের বিষয় এখানে জানানোর পর তাঁরা একটা সুষ্ঠু সমাধান করে দিলেন।
সমাজসেবক শফিক জুয়েল বলেন, প্রতি সপ্তাহে যে একদিন এখানে থানা বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেটি সত্যি প্রশংসাজনক। এই ইউনিয়নটি নদী বেষ্টিত হওয়ায় ভুক্তভোগীদের রাজিবপুর যেতে অনেক ধকল পোহাতে হয়। এখানে একদিন থানা বসায় এই ইউনিয়নের মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।
কোদালকাটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ছক্কু বলেন, রাজিবপুর সদর থেকে আমার ইউনিয়নে আসতে শুষ্ক মৌসুমে ঘোড়ার গাড়ি ও মোটরসাইকেল ছাড়া যাতায়াত করা যায় না। এবং বর্ষা মৌসুমে একমাত্র যান নৌকা। এছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে আমরা রাজিবপুরে যেতে পারি না। রাজিবপুর থানা পুলিশ আমার জনগণের কথা চিন্তা করে যে মহতী উদ্যোগ নিয়েছে এর জন্য আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই ওসি আশিকুর রহমানকে। তাঁর এমন উদ্যোগে আমার এলাকায় মাদকদ্রব্যের যে উৎপাত ছিল তা অনেকাংশেই কমে যাবে এবং আমার এলাকার মানুষ আবারও শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।
তাঁর এমন মহতী উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজিবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আশিকুর রহমান পিপিএম বলেন, এই যে, সেবাটা আমি ইউনিয়ন কেন্দ্রিক দিব থানার সেবাটা ইউনিয়নে বসেই পাবে। গতকাল হাটবার ছিল হাটে আমরা ঢোলাই করেছি লোকাল চেয়ারম্যানকে বলেছি মেম্বার সাহেবরা জানে, চৌকিদার দফাদাররা জানে। তাদের মাধ্যমে অ্যানাউন্স করা হয়েছে যে, পুলিশি সেবাটা এখন থেকে কোদালকাটিতে সপ্তাহে একদিন প্রতি শনিবার কোদালকাটি ইউনিয়ন থেকেই পাবে। কিছু অভিযোগকারী এখানে এসেছে। আজকে আমার প্রথম অফিস এখানে। তিনজন অভিযোগকারী ইতিমধ্যে এসেছে এদের মধ্যে একজনের অভিযোগের বিষয়ে একাধিকবার গ্রাম আদালতে বিচারের কার্য পরিচালনার জন্য বিবাদীকে ডাকা হয়েছে তিমি হাজির হননি। তাৎক্ষণিক আমি অফিসার পাঠিয়েছি বিবাদী আসছে আমরা তাকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। তিনিও রাজি হয়েছেন যে, হ্যাঁ তিনি (বাদী) ৯ শতাংশ জমি পায় আমি তাকে বুঝিয়ে দিব। এই যে, দীর্ঘ ২০-২৫ বছর ধরে চলে আসা জমির ঝামেলা আজকে শেষ করতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, মূলত পুলিশি সেবাটা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্যই আমার এমন উদ্যোগ। ইতিমধ্যে আইজিপি মহোদয় কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার মহোদয় পুলিশকে গণমুখী করার জন্য নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তারই অংশ হিসেবে আমার আজকের এই উদ্যোগ।
//নিউজ/রাজিবপুর//সুজন-মাহমুদ/মার্চ/০৩/২৪