।। নিউজ ডেস্ক ।।
আজ ২১ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) মহান ‘শহীদ দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। মাতৃভাষা আন্দোলনের আজ ৭২ বছরের পূর্ণতা পাওয়া বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বলের অন্যতম স্মরণীয় দিন মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। পৃথিবীর একমাত্র জাতি হিসেবে ভাষার জন্য জীবন দেওয়া শহীদদের আত্মত্যাগের এই দিনটিকে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। তাই এ দিনটিকে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার ঘাটতি পূরণে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিকে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।
১৯৫২ সালের এইদিনে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের নির্দেশে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষায় স্বীকৃতি না দেওয়া এবং উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ায় ঢাকার ছাত্র ও সাধারণ জনগণ এর তীব্র প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমে আসে। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র ও সাধারণ জনগণের ওপর নির্মমভাবে গুলিবর্ষণ করে পাকিস্তানের পুলিশ বাহিনী। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছাত্র সালাম, বরকত, রফিক, শফিউর, জব্বার শহীদ হন। এর থেকে দিনটিকে শহীদ দিবস বলা হয় এবং ২০১০ সালে জাতিসংঘের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিবছর ভাষা শহীদদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের স্মরণে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘অমর একুশে’, ভাষা শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়।
১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে পূর্ব বাংলার রাজধানী ঢাকায় প্রথম ভাষা-বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। এরপর থেকে ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে এ নিয়ে সীমিত পর্যায়ে আন্দোলন হয় এবং পর্যায়ক্রমে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার, বাংলা ৮ ফাল্গুন ঐদিনে চরম প্রকাশের মধ্য দিয়ে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ চালাতে থাকে। এর মধ্যে কিছু ছাত্র শহীদ হন। আবার পরের দিন অর্থ্যাৎ ২২ ফেব্রুয়ারি শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাতে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
সেই সময় মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে উক্ত ভাষা শহীদদের জন্য অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায় অংশগ্রহণ করেন তাঁরা। পরে ভাষা শহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখতে ২৩ ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে ওঠে, পরবর্তীতে তৎকালীন সরকার তা ২৬ ফেব্রুয়ারিতে গুঁড়িয়ে দেয়। ২১ ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়ে ওঠে। পরে ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৭ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয়। জাতীয় সংসদে ‘বাংলা ভাষা প্রচলন বিল’ ১৯৮৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পাস হয় এবং পরবর্তীতে তা ১৯৮৭ সালের ৮ মার্চ থেকে এর কার্যকরী রূপ প্রকাশ পায়।
বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বলের এ দিনটিকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভা ও নানা কর্মসূচি আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাতি অমর একুশের মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। শহীদদের প্রতি প্রাণঢালা ভালোবাসা ও স্মৃতিচারণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে একুশের কর্মসূচি শুরু করা হবে। এছাড়াও কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরিসহ আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা জানিয়ে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস দিনটি পালন করা হয়।