।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
উলিপুর গুনাইগাছ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফিরোজ ইমাম আমীনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের আজীবন দাতা সদস্য পরিচয়দানকারী সোলেয়মান আলী নামে এক ব্যক্তি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি জানাজানি হলে সচেতন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
অভিযোগ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৫ জুন উলিপুরের ঐতিহ্যবাহী গুনাইগাছ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম হোসেন অবসর গ্রহণ করেন। কিন্তু বিধি বহির্ভূতভাবে তৎকালীন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা পর্ষদ ওই প্রতিষ্ঠানের শরীরচর্চা ও ক্রীড়া শিক্ষক ফিরোজ ইমাম আমীনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়। দায়িত্ব গ্রহণের পর ওই প্রতিষ্ঠানের আজীবন দাতা সদস্য সোলেয়মান আলীকে বাদ দিয়ে পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে ব্যবস্থাপনা পর্ষদ গঠন করেন তিনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সোলেয়মান আলী আদালতে মামলা করেন, যা বিচারাধীন। পরে ২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর চতুর শিক্ষক ফিরোজ ইমাম আমীন সকল নিয়ম কানুনকে বৃদাঙ্গুলি দেখিয়ে তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ্ মো. তারিকুল ইসলামের যোগসাজসে শরীরচর্চা ও ক্রীড়া শিক্ষক থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ বাগিয়ে নেন। তার অনিয়মের চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হন তিনি।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফিরোজ ইমাম আমীন রাতের আঁধারে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেন। ওই কমিটির মাধ্যমে তিনি প্রধান শিক্ষক হওয়ার জন্য গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। পরিপত্র অনুযায়ী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বহুল প্রচারিত একটি জাতীয় দৈনিক ও স্থানীয় পত্রিকা এবং বিদ্যালয়ে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার কথা থাকলেও সেসবের কিছুই মানা হয়নি। অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফিরোজ ইমাম আমীন নিজে প্রধান শিক্ষক হওয়ার জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে তার কিছু আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে নামকাওয়াস্তে আবেদন করান বলে সোলেয়মান আলী তার অভিযোগে উল্লেখ করেন।
উপজেলা শিক্ষক সমাজের একটি সূত্র জানায়, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে শিক্ষকরা জানতে পারেন গুনাইগাছ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হবে। তারা নিয়মিত বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে খোঁজখবর রাখেন। কিন্তু শিক্ষকগণ কোনো নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য পাননি। হঠাৎ ৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রাধান শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখতে পান তারা। যা পত্রিকা প্রকাশের তারিখ থেকে ৩১ জানুয়ারি আবেদনের শেষ তারিখ পর্যন্ত ওয়েব সাইট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো প্রচারণা দেখা যায়নি। যা শূন্য পদে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনুসরণীয় নির্দেশমালা ১০ জানুয়ারি ২০২৪ সালের পরিপত্রে ২.২ (ক) ও (খ) এবং ২.৩ (ক) নং নীতিমালা লঙ্ঘন হয়েছে।
জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফিরোজ ইমাম আমীন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি, বিদ্যালয়ের জমি বেদখল, প্রতিষ্ঠানের মার্কেটের টাকা ও বিভিন্ন সামগ্রী একায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ভোগ দখল করে আসছেন। এ নিয়ে কোনো শিক্ষক কথা বললে তাদের ভয়ভীতি দেখান। এছাড়া তিনি প্রায় সময় অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন বলেও সূত্রটি জানিয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফিরোজ ইমাম আমীন বলেন, ‘যা হয়েছে সব বিধি মোতাবেক হয়েছে।
উলিপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহাতাব হোসেন বলেন, ওই প্রধান শিক্ষক অনেক চালাক মানুষ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুল আলম বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বিধি মোতাবেক হয়নি। ওয়েব সাইট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। এ ছাড়া একাধিক মামলা বিচারধীন রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, নিয়োগ বোর্ডে প্রতিনিধি চেয়ে আমার কাছে আবেদন করা হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নিয়মের কিছু ব্যত্যয় হয়েছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তবে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে অবশ্যই স্বচ্ছতার সহিত করা হবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।
//নিউজ//উলিপুর//মালেক/ফেব্রুয়ারি/১৬/২৪