।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের বিস্তৃর্ণ রাজিবপুরের চর এলাকার পতিত জমিতে প্রথম বারের মত সূর্যমুখী চাষ করে নতুন সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। এতে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে, আয় বাড়বে, অন্যদিকে অনাবাদি পতিত জমিকে কাজে লাগিয়ে লাভবান হবেন তারা। এছাড়াও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ করবে কৃষকদের এই সূর্যমুখী চাষ।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাজিবপুরের কোদালকাটি ইউনিয়নের চর সাজাই মন্ডলপাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, স্নিগ্ধ রোদ এবং ঝিরিঝিরি বাতাসে দুলছে দিগন্তজোড়া মাঠভরা সূর্যমুখী ফুল। এমন দৃশ্য চরাঞ্চলের মানুষ আগে কখনো দেখেনি। তাই বিকেল হলেই ফুল দেখতে অনেকেই ভিড় জমায় সূর্যমুখীর জমিগুলোতে। সূর্যমুখী ফুল অনেকেই মনে করে এটি শুধু ফুলই। আসলে ঠিক তা নয়, এই ফুল একটি অর্থকরী ফসল। পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ভোজ্য তেলের কাঁচামাল। ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সূর্যমুখী সৌন্দর্য বাড়াচ্ছে চরাঞ্চলের। এতে নতুন স্বপ্ন বুনছেন সূর্যমুখী চাষিরা।
এ বছর এই প্রথম বারের মত রাজিবপুরের বিভিন্ন চরাঞ্চলের পতিত জমিতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ৩০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষের জন্য কৃষি প্রণোদনা দিয়েছে রাজিবপুর কৃষি অফিস। সেই বীজ নিয়েই সূর্যমুখী চাষ করেছেন কৃষকরা। কিছুদিন পর ফুল কাটা শুরু করবেন চাষিরা। সূর্যমুখী স্বল্প মেয়াদি ফসল। খরচ ও পরিশ্রমের তুলনায় উৎপাদন ভালো। তাই এই ফুল চাষে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে।
এ বিষয়ে চর সাজাই দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক আমিনুর রহমান (সূর্যমুখী চাষী) জানান, “চরের পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। মোটামুটি ভালোই দেখা যাচ্ছে। রাজিবপুর কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় সূর্যমুখী সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। তাই আমি ১ একর জমিতে আবাদ করেছি। আশা করছি ভালো একটা লাভ পাবো। এ এলাকায় এটা প্রচলিত ফসল না, আমার ফসল দেখে সবাই আগ্রহী হবে। তাই আমি প্রথমেই শুরু করেছি, কৃষক ভাইয়েরা সবাই যাতে আগ্রহী হয়।”
সূর্যমুখী চাষিদের অনুপ্রেরণা ও পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। আগামী বছর আবাদ বাড়াতে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন রাজিবপুর কৃষি কর্মকর্তারা। চলতি বছর ৩০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে রাজিবপুরের বিভিন্ন চরাঞ্চলে। আগামীতে দ্বিগুণ অথবা তারও বেশি চাষ হবে বলে আশা করছেন তারা।
স্থানীয় কৃষক এরশাদ আলী, আব্দুল মালেকসহ বেশ কয়েকজন জানান, “সূর্যমুখী এর আগে এই অঞ্চলে কেউ আবাদ করে নাই। অন্যান্য ফসলে যে পরিমাণ সার, কীটনাশক, পানি দেয়া হয় এ ফসলে তার অর্ধেক। আবার ফলন মনে হয় ভালো হবে। আমরাও সামনের বছর আবাদ করব।”
রাজিবপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রতন মিয়া জানান, “রাজিবপুর উপজেলায় এ বছর আমরা কৃষি প্রণোদনার আওতায় ৩০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করিয়েছি। সূর্যমুখী সম্পর্কে অনেকেই মনে করেন ফুলের জন্য চাষ করা হয়। এটি একটি তেল জাতীয় পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফসল। আমাদের রাজিবপুর উপজেলার চরাঞ্চলের জন্য সূর্যমুখী চাষ ব্যাপক সম্ভাবনাময় ফসল। আমরা তাদের সাথে আছি, প্রতিনিয়ত কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। আগামীতে দ্বিগুণ বা তারও বেশি চাষ হবে বলে আমি মনে করি।
//নিউজ/রাজিবপুর//সুজন-মাহমুদ/ফেব্রুয়ারি/১৪/২৪