।। নিউজ ডেস্ক ।।
চিলমারীতে ঝুঁকিপূর্ণ আশ্রয়ণ প্রকল্পে শত শত মানুষ পরিবার নিয়ে বসবাস করছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগে সংস্কার না হলে আশ্রয়হীন হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে এসব পরিবার।
তিস্তা নদী এবং ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বেষ্টিত চিলমারীর বিচ্ছিন্ন চিলমারী ইউনিয়নের বিশারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২০টি ব্যারাকে ১২০টি পরিবারের বসবাস। প্রায় ৫-৬ বছর আগে নির্মিত এসব ব্যারাক দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ১৮টি চরের ৪৪৫টি ব্যারাকে ২ হাজার ৩২৫টি পরিবার ঝুঁকিতে জীবনযাপন করছে। গত বন্যা ও বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যারাক অনেকেই ঋণ করে সংস্কার করে থাকলেও এবার আরও ঝুঁকিতে পড়েছেন। সহায় সম্বলহীন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসবাসকৃত পরিবারগুলো আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগে সংস্কার না হলে আশ্রয়হীন হবার শঙ্কায় পড়েছেন।
বিশারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আছিমন বলেন, হামার (আমাদের) ঘরবাড়ি সব নদীতে চলে গেছে। প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে এই আশ্রয় প্রকল্পের মধ্যে পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। এখন এসব ঘরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই ভেঙে পড়ার শঙ্কা আছে। বন্যা হলে তো আরও ভয়ংকর পরিস্থিতি হবে। এখন দুশ্চিন্তায় আছি সামনের দিনগুলো কি হবে?
আরেক বাসিন্দা পরিনা বেগম বলেন, গত বছর বৃষ্টির পানিতে মাটি ধুয়ে আমার থাকার ঘরের সামনে বড় একটি কুড়া (গর্ত) পড়ে। পরে সুদের পর ৪০ হাজার টাকা নিয়ে সেই জায়গায় মাটি ভরাট করেছি। কিন্তু টেকসই হয় নাই। কোন রকমে আছি আবাসনের মধ্যে। এই বন্যার আগে আবাসন ঠিক করা না গেলে হামাক গুলাক (আমাদেরকে) খোলা আকাশের নিচে থাকা লাগবে।
বাসিন্দা জোবায়দুল ইসলাম বলেন, এই আবাসনের মধ্যে ১২০ পরিবার থাকি। কমবেশি সবগুলো ঘরেই সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে পানি নামার রাস্তা না থাকায় আবাসনের প্রায় ২৫-৩০টি ঘর অতি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। মেঝের তল থেকে মাটি খসে গেছে। ঘরের সিঁড়ি ভেঙে গেছে। এমন হাজারো সমস্যা নিয়ে আমাদের বসবাস করতে হচ্ছে।
বাসিন্দা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মিত হলেও গাইড ওয়াল এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর বৃষ্টি এবং বন্যায় বালু মাটি ধুয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে সরকারের বৃহৎ এই প্রকল্প। আশ্রিত এসব ব্যারাক ভেঙে গেলে শত শত মানুষ তাদের পরিবার নিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়বে। তার দাবি সরকারিভাবে দ্রুত এসব ব্যারাক সংস্কার করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।
চিলমারী ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে আমার ইউনিয়নে ১০টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের মধ্যে ১টি ভেঙে গেছে। আর বাকিগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। আমাদের এদিকে বন্যা এবং রেইন কাট বেশি হওয়ায় আবাসনগুলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দ্রুত এগুলো সংস্কার করা না গেলে প্রায় ৭-৮শ পরিবার হুমকিতে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
চিলমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ রুকুনুজ্জামান শাহিন বলেন, চিলমারীতে নির্মিত এসব আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করার দীর্ঘদিন পার হলেও বরাদ্দ না থাকায় এসবের সংস্কার সম্ভব হয়নি। সরকারিভাবে বরাদ্দ দিয়ে দ্রুত এসব ব্যারাক সংস্কার করে বসবাসের উপযোগী করে তোলার দাবি জানান তিনি।
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুল ইসলাম জানান, আবাসন প্রকল্পের যেসব ব্যারাক ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে তা সংস্কারের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই সংস্কার কাজ শুরু হবে।