।। নিউজ ডেস্ক ।।
কুড়িগ্রামে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও চাকুরীজীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। অনেকে অভিযোগ করেও প্রতিকার না পেয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতার পরেও ভুক্তভোগী ফিরে পাচ্ছে না হারানো অর্থ।
ভুক্তভোগী ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্র কলেজ মোড়ে অবস্থিত রুপসী বাংলা নামে একটি হোটেলে প্রতারক চক্র মোবাইলে দুই দফায় ৩৯ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এর আগে ওই এলাকার নান্না বিরিয়ানি নামে আরেক হোটেল মালিকের কাছ থেকেও হাতিয়ে নেয়া হয় ১৭ হাজার টাকা। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) একই এলাকার লেদ ব্যবসায়ী মতিউল ইসলাম নয়নের কাছ থেকে যন্ত্রাংশ ডেলিভারির কথা বলে ১৯ হাজার ৫শ’ টাকা বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়। এছাড়াও গত বছরের ২৬ নভেম্বর (রবিবার) এক মাদ্রাসা শিক্ষকের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ২ লক্ষ টাকা তুলে নেয়। শহরে এরকম বেশ কয়েকটি মোবাইল প্রতারণার ঘটনা ঘটলেও প্রতারকরা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আধূনিক টেকনোলজি শুধু মানুষের উপকারেই আসছে না, এক শ্রেণির প্রতারক অসাধুভাবে এই টেকনোলজি ব্যবহার করে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রশাসন যদি এদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারে তাহলে পোয়াবারো অবস্থা হবে প্রতারকদের।
রুপসী বাংলার ম্যানেজার শহিদুল্লা কায়সার জানান, গত ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টার সময় জেলা প্রশাসনের কর্মচারী পরিচয়ে (০১৯৯৮৩৮২৩০৬) নম্বর থেকে ১৭ হাজার টাকার খাবারের অর্ডার দেয়া হয়। পরে ম্যানেজারের দেয়া রকেট নম্বরে ১৯ হাজার ৩৮০ টাকার একটি এসএমএস আসে। পরে অর্ডার বাতিল করে সেই টাকা ফেরত চাইলে তাদের প্রদেয় (০১৯৩৬৮১৩৭৫৫) বিকাশ নম্বরে ১৫ হাজার টাকা ক্যাশ ইন করা হয়। এর মধ্যে পূর্বের রকেট নম্বরে আবার ম্যানেজারের মোবাইলে ২৪ হাজার ৪৮০ টাকার মেসেজ আসে। সেই টাকা আবার বিকাশে ফেরত চাওয়া হলে হোটেল ম্যানেজার আবার বিকাশে ২৪ হাজার টাকা ক্যাশ ইন করেন। প্রতারক আবার টাকা পাঠানোর কথা বললে সন্দেহ হওয়ায় ম্যানেজার কল কেটে দেন। একইভাবে রুপসী বাংলার উল্টোদিকে অবস্থিত নান্না বিরিয়ানি হোটেলে উলিপুর থেকে খাবারের অর্ডার দিয়ে প্রতারণা করে ১৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রটি। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই যেন সম্মোহন করে মোবাইলে মিথ্যে মেসেজ দিয়ে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেয় ওই চক্রটি।
নয়ন ওয়ার্কশপের মালিক মতিউল ইসলাম নয়ন জানান, জেলার নাগেশ্বরীর রায়গঞ্জ থেকে রাসেল নামে এক ব্যক্তি মোটরসাইকেলের ট্যাংকির অর্ডার দেন। পরে (০১৬০৬১৫৯৬২২) নম্বর থেকে নয়ন ওয়ার্কশপের নাম ভাঙিয়ে রাসেলের কাছ থেকে ১৯ হাজার ৫শ’ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়।
একইভাবে কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক সাইদুল ইসলামের মোবাইলে ২৬ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে (০১৩২৪০৫৫৩০২) মোবাইল নম্বর থেকে জানানো হয় আপনি গত দুই বছর জেলার নাগেশ্বরী ও ফুলবাড়ী উপজেলায় দুইবার ব্যবহারিক পরীক্ষার ডিউটি করেছেন। মাদ্রাসা বোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয়ে তার বকেয়া পাওনা দেয়ার নামে কৌশলে তার নামীয় আইএফআইসি ব্যাংকের ডেভিট কার্ডের ভেলিডেটি নম্বর সংগ্রহ করে। এর মধ্যে মোবাইলে ৫ হাজার টাকার একটি মেসেজ আসে। পরপর ৪ বার মেসেজ আসার পর ওটিটি নম্বর লক হয়ে যায়। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে জানানো হয় আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে ২ লক্ষ টাকা উইথড্রো করা হয়েছে।
এভাবে মোবাইলে নানান কায়দায় মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। সচেতন হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না মানুষ। তার আগেই ফেঁসে যাচ্ছে। জমানো অর্থ হারিয়ে অনেকে দিশেহারা হয়ে পরছেন।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমান জানান, মানুষকে সজাগ করার পরও ঘটনাগুলো ফেক আইডি থেকে ঘটানো হচ্ছে। বেশিরভাগ মোবাইলে কল আসে নোয়াখালী ও ফরিদপুরের ভাঙা এলাকা থেকে। ইতিমধ্যে ঢাকা ডিবি থেকে ২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ব্যাপারে একজনকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে সব রকমের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে