।। নিউজ ডেস্ক ।।
নাগেশ্বরীতে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের হস্তক্ষেপে বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে এক কিশোরী। বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া ওই কিশোরী উপজেলার বেরুবাড়ী ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রাম এলাকার এক দিনমজুরের মেয়ে। উক্ত কিশোরী ৫ম শ্রেণি থেকে লেখাপড়া করার পর বাবার আর্থিক সমস্যার কারণে লেখাপড়া করতে পারেনি বলে জানা গেছে।
ওই কিশোরী জানায়, তার জন্ম ২০০৯ সালে। ৫ম শ্রেণি থেকে লেখাপড়া করার পর অভাবের কারণে এখন স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে পরিবার। এখন মাদ্রাসায় পড়ছে সে। বিয়ের পিঁড়িতে না বসে করতে চায় লেখাপড়া।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্পের নাগেশ্বরী উপজেলার কিশোর-কিশোরী ক্লাবের জেন্ডার প্রোমোটার মমতাজ শারমিন লুনা জানান, গোপন সংবাদ পেয়ে তিনি ৯৯৯-এ ফোন করলে নাগেশ্বরী থানার এসআই মনজুরুল ইসলাম, সংবাদকর্মী ও রায়গঞ্জ ইউনিয়নের কিশোর-কিশোরী ক্লাবের আবৃত্তি শিক্ষক হাফিজুর রহমান হৃদয় এবং কেদার ইউনিয়ন কিশোর- কিশোরী ক্লাবের সঙ্গীত শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিকের সহযোগিতায় রোববার (০৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে ওই কিশোরীর বাড়িতে গেলে বিয়েবাড়ির লোকজন পালিয়ে যায়।
পরে বেরুবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান সোলায়মান আলীকে খবর দিলে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ইউপি সদস্য আব্দুল মোতালেবের সহযোগিতায় বাল্যবিয়ের শিকার কিশোরী ও তার বাবা-মাকে ডেকে নিয়ে কিশোরীর বাল্যবিয়ে বন্ধ করেন তারা। এ সময় মেয়ের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেবে না বলে জানান, কিশোরীর বাবা-মা। অপরদিকে ওই কিশোরীর লেখাপড়া করানোর জন্য যাবতীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন কিশোর-কিশোরী ক্লাবের কর্মরত জেন্ডার প্রোমোটার ও শিক্ষকসহ উপস্থিত জনপ্রতিনিধিগণ।
এ বিষয়ে বেরুবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান সোলায়মান আলী বলেন, খবর পেয়ে সাথে সাথে আমি ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে দেখি কিশোরীর পরিবারের কেউ বাড়িতে নেই। পরে ইউপি সদস্য ও গ্রাম্য পুলিশের সহযোগিতায় মেয়ে ও তার বাবা-মাকে খুঁজে বের করে নিয়ে তাদেরকে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে বললে তারা মেয়েকে ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেবে না বলে কথা দিয়েছে। মেয়ের পরিবার অত্যন্ত গরিব হওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তার লেখাপড়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করা হবে।
নাগেশ্বরী থানার এসআই মনজুরুল ইসলাম বলেন ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে আমাদের ওসি স্যারের নির্দেশনায় আমরা দুইজন পুলিশ সদস্য সাথে সাথে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্যদের সাথে ওই কিশোরীর বাড়িতে গেলে বিয়েবাড়ির লোকজন পালিয়ে যায়। পরে চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে কিশোরীর পরিবারকে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে জানালে তারা মেয়ের বয়স পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আর বিয়ে দেবে না বলে জানিয়েছে।
নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ রূপ কুমার সরকার বলেন, জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ থেকে একটা বাল্যবিয়ের সংবাদ পেয়ে উপজেলা প্রশাসনকে জানাই। পরে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের এক প্রতিনিধিসহ আমাদের একটি পুলিশ টিম পাঠানো হয়। তারা সেখানে গেলে জানা যায় মেয়েটার বয়স ১৩-১৪ বছর। সে ৫ম শ্রেণি থেকে লেখাপড়া করেছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে বুঝিয়ে বিয়েটা বন্ধ করা হয়।