।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
উলিপুরে নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর অন্তর্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ জন রোগী আসে। বৃহস্পতিবার (০১ ফেব্রুয়ারি) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬২ জন তার মধ্যে শিশুর সংখ্যা ১১ জন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেঝে ও বারান্দায় থেকেই চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা। তবে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নেওয়াটা যেমন রোগীর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত নয়, তেমন দৃষ্টিকটু ও অশোভন।
কুড়িগ্রাম জেলার অন্যতম বৃহৎ একটি উপজেলা উলিপুর। একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নের জনসংখ্যা প্রায় ৭ লক্ষ। ১৯৮২ সালে উলিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার ৪১ বছরেও নির্মিত হয়নি শিশু ওয়ার্ড ও ডায়রিয়া ওয়ার্ড। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বারান্দায় ১০টি শয্যায় ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।
সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে জানা গেছে, ১৮ থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে জেলায় মৃদু ও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় শীতের প্রকোপ বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত নানা রোগ। গত ১০ দিনে ঠান্ডাজনিত নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে শিশু ও বৃদ্ধ মানুষ ভর্তি হয়েছে দুই শতাধিক। বৃহস্পতিবার (০১ ফেব্রুয়ারি) এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১১ জন শিশুসহ ১৩ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। শয্যা না পেয়ে অনেক রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেঝে ও বারান্দায় অবস্থান নিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন।
উৎসব (১১ মাস) ও আহসান হাবীব (১৬ মাস) নামের দুইজন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর স্বজনেরা জানান, শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডের কোন ব্যবস্থা নেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, অবস্থা খুব খারাপ। পুরো বারান্দায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী দিয়ে ভর্তি। অনেক রোগী বেড না পেয়ে মেঝেতে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। শীতের সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়া রোগীদের ভোগান্তিও বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্বিগুণ হারে।
ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী শামীমা বেগম (২৮) ও মিনারা বেগম (৩০) জানান, বারান্দার গ্রিলে টাঙানো হয়েছে ছেড়া পলিথিন, দিন-রাত শো শো করে বাতাস আসে ভিতরে। শীতের কনকনে ঠান্ডায় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন তারা। নিরুপায় হয়ে এমন পরিবেশে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে তাদের।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স ইনচার্জ মাহবুবা বেগম জানান, ঠান্ডাজনিত কারণে ডায়রিয়ায় শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি। প্রয়োজনের তুলনায় বেড না থাকায় এত সংখ্যক রোগীকে মেঝেতে বিছানা পেতে দিয়ে সবাইকে চিকিৎসা দিতে সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন তারা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মেহেরুল ইসলাম বলেন, শীতজনিত রোগ বাড়লেও চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে সুরক্ষায় অভিভাবকদের সচেতনতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মেশকাতুল আবেদ বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি ৩১ শয্যা থেকে ধীরে ধীরে ৫০ শয্যায় রূপান্তরিত হলেও কিন্তু ভবন বাড়ে নি। যার কারণে এখনও আলাদাভাবে শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ড নেই। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিশেষ করে শিশু বিশেষজ্ঞ ও গাইনি ডাক্তার নেই। তবুও সীমিত জনবল দিয়েও রোগীদের যথাসাধ্য চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
//নিউজ//উলিপুর//মালেক/ফেব্রুয়ারি/০১/২৪