।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
উলিপুরে প্রচলিত পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি ও চারা রোপণ না করে প্লাস্টিকের ট্রেতে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে লাগানো হয়েছে ধানের বীজ। এতে ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে চারা মাঠে লাগানোর উপযোগী হয়। রাসায়নিক সারের ব্যবহার না করে সামান্য জৈব সারের ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে কৃষকের খরচ কমে যাবে। প্লাস্টিকের ট্রেতে বীজতলা করায় ধানের চারা উত্তোলন, রোপণ, সার, কীটনাশক প্রয়োগ, ফসল মাড়াই সবই একযোগে করা যাবে। উচ্চ ফলনশীল বোরো হাইব্রিড জাতের ‘জনক রাজ’ ধানের বীজ ব্যবহার করায় ১৪০ থেকে ১৪৫ দিনের মধ্যে ফসল তোলা সম্ভব। ধান চাষে কৃষকদের শ্রমিক সংকট নিরসন, সময় অপচয়রোধ ও অতিরিক্ত খরচ রোধে সরকারিভাবে কৃষি প্রণোদনার আওতায় উপজেলার ধরণীবাড়ী ইউনিয়নের মধুপুরে সমলয় চাষ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি। ফলে কৃষিতে নতুন দুয়ার খুলছে।
উপজেলায় এ বছর প্রথমবারের মতো ৪০ শতক জমিতে সাড়ে ৪ হাজার ৫’শ ট্রেতে ধানের বীজ বপন করা হয়েছে। এরপর স্থানীয় ৯০ জন কৃষক ৫০ একর জমিতে ধান রোপণ করবে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সর্বাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উচ্চ ফলনশীল জাত ব্যবহার, ট্রেতে বীজ বপন, কম বয়সের চারা রোপণ, চারা রোপণে রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার ব্যবহার, সুষম সার ব্যবহার, ধান কাটায় কম্বাইন্ড হারভেস্টার ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো, উৎপাদন খরচ কমানো ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ভরা মৌসুমে ধান কাটার সময় কৃষি শ্রমিকের সংকটের সমাধানে সমলয় চাষাবাদ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হবে।
বিশেষ অটোমেটিক কৃষি যন্ত্রের মাধ্যমে ট্রেতে চারা বপন করা হয়। ট্রেতে চারা বপনের কয়েকটি পদ্ধতি আছে । প্রথম ওই জমি পাওয়ার টিলার দিয়ে ৩/৪ চাষ করা হয়। এরপর মাটি সংগ্রহ করে নেটিং শেষে রোদে হালকা শুকানো হয়। এরপর মেশিনের মাধ্যমে মাটি ট্রেতে দেয়া হয়। তারপর মেশিনের সাহায্যে ট্রেতে অঙ্কুরিত বীজ দেয়ার পর আবারো মাটি দেয়া হয়। এরপর ট্রেগুলো জমিতে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। মাটি যেন শুকিয়ে না যায়, সেজন্য পানি স্প্রে করা হয়। শীতে চারার যেন ক্ষতি না হয়, সেজন্য উপরে পলিথিন দেওয়া হয়েছে। গবাদি পশু চারা খেতে না পারে সেজন্য চতুর্দিকে ঘেড়া দেয়া হয়েছে। চারার উচ্চতা ৪/৫ ইঞ্চি লম্বা বা বয়স ২৫ থেকে ৩০দিন হলে তা জমিতে রোপণ করার উপযোগী হয়।
ট্রেতে চারা উৎপাদনে জমির অপচয়ও কম। রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার দিয়ে চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়। ফলে ফলনও বাড়ে। একসঙ্গে রোপণ করায় ধান একসঙ্গে পাকবে ও কৃষকরা একসঙ্গে ধান ঘরেও তুলতে পারবেন।
কৃষক সহিদুর রহমান (৫৮) বলেন, ‘প্রথমবারের মতো এমন পদ্ধতিতে ধানের বীজতলা করেছি। রাসায়নিক সার ব্যবহার হচ্ছে না। কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় ট্রেতে বীজ বপন ও চারা উৎপাদন হচ্ছে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ধানের চারা রোপণের ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’ আগামী ৪/৫ দিনের মধ্যে জমিতে চারা রোপণ করা হবে।
কৃষক চন্দন সরকার (৫২), অমরেন্দ্র নাথ (৬৫) সহ কয়েকজন কৃষক জানান, বোরো ধান চাষাবাদে তারা এর আগে কখনো আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে ট্রেতে ধানের চারা উৎপাদন করেননি।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, ‘কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে টেকসই যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর একটি “সমলয়” পদ্ধতি। কৃষকরা মাঠে একসঙ্গে একই জাতের ধান, একই সময়ে যন্ত্রের মাধ্যমে রোপণ করতে পারবেন। এ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি, চারা রোপণ ও ধান কাটা সবই যন্ত্রের মাধ্যমে হবে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রচলিত রীতিতে বীজতলা তৈরি না করে জমি ও সময় অপচয়রোধে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের যুগোপযোগী পদ্ধতি হচ্ছে সমলয় চাষ। স্বল্প জমিতে প্লাস্টিকের ফ্রেমে বা ট্রেতে লাগানো যায় ধানের বীজ। ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে চারা হয়। রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টারের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ করলে সময় কম লাগবে। একটা ট্রান্সপ্ল্যান্টার ঘণ্টায় এক একর জমিতে চারা লাগাতে পারে।
স্বল্প জমিতে অধিক পরিমাণ ধান উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সমলয় পদ্ধতিতে বোরোর বীজতলা ও চাষাবাদের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এর মধ্যে সরকারিভাবে কৃষি প্রণোদনা কার্যক্রমের আওতায় কৃষকরা ট্রেতে বীজ বপন করেছেন। এতে উৎপাদন খরচ ও শ্রমিক সংকট দূর হবে। কৃষকরা আরও লাভবান হবেন।
//নিউজ//উলিপুর//মালেক/জানুয়ারি/২৬/২৪