।। টেক ডেস্ক ।।
ন্যানো টেকনোলজি শব্দটি অনেকেরই অজানা। সাধারণভাবে বলা যায়, পারমাণবিক বা আণবিক স্কেলে অতিক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরি করার জন্য ধাতব বস্তুকে সুনিপুণভাবে কাজে লাগানোর বিজ্ঞানকেই ন্যানো টেকনোলজি বলে। আবার এই আকৃতির কোনো কিছু তৈরি করা হলে তাকে ন্যানো-পার্টিকেলও বলা হয়ে থাকে। সাধারণত একটি দ্রব্যের বড় আকৃতিতে যে ধর্ম বা গুণাগুণ থাকে, ন্যানো পার্টিকেল হলে তার ভেতর কোয়ান্টাম পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাব দেখা যেতে শুরু করে বলে সেই ধর্ম বা গুণাগুণের পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অনেক ধাতুর কাঠিন্য ন্যানো আকৃতিতে সাধারণ অবস্থা থেকে সাতগুণ বেশি হতে পারে। এ কারণেই ন্যানো-পার্টিকেল নিয়ে বিজ্ঞানীরা আজও বিশেষভাবে কৌতুহলী।
বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে ন্যানো ব্যাসার্ধের পলিমার তৈরিসহ ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের চিপস তৈরি করার সময় ন্যানো আকৃতির ডিজাইন করে আসছেন। তবে শুধু সাম্প্রতিক সময়ে ন্যানো পার্টিকেল তৈরি ও ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় টুল তৈরি হয়েছে এবং এর মধ্য দিয়েই ন্যানো পার্টিকেলের জগৎ সত্যিকার অর্থে উন্মুক্ত হয়েছে।
‘আগামী বিশ্ব হবে ন্যানো টেকনোলজির বিশ্ব’- এই প্রতিবাদ্যকে সামনে রেখে স্মার্ট ওষুধের মাধ্যমে প্রাণঘাতী ক্যানসার ইত্যাাদি দুরারোগ্য ব্যাধি হতে মুক্তি, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ন্যানো রোবট, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, বিশ্বব্যাপী বৃহৎ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, কার্যকরী ও সস্তায় শক্তি উৎপাদনসহ পানি ও বায়ুদূষণ কমানো সম্ভব হবে মর্মে জানিয়েছেন গবেষকরা।
একই সাথে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বৃহৎ স্কেলে পণ্যোৎপাদন সম্ভব হচ্ছে এবং উৎপাদিত পণ্য আকারে সূক্ষ্ম ও ছোট হলেও অত্যন্ত মজবুত, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, টেকসইসহ হালকা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন খাতে ন্যানো প্রযুক্তির কার্যকরী ব্যবহারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
চলুন জেনে নেয়া যাক বিভিন্ন খাতে ন্যানো প্রযুক্তির কার্যকরী ব্যবহারঃ-
কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারে ব্যবহার: ন্যানো প্রযুক্তি প্রসেসরের উচ্চ গুতি, দীর্ঘস্থায়িত্ব, কম শক্তি খরচ ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যে ব্যবহার্য। সেই সঙ্গে ডিসপ্লে ও কোয়ান্টাম প্রযুক্তির উন্নয়নে সহায়তা করে ন্যানো প্রযুক্তি।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে: ন্যানো-রোবট ব্যবহার করে অপারেশন করা, যেময়- এনজিওপ্লাস্টি সরাসরি রোগাক্রান্ত সেলে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এছাড়া ন্যানো ক্রায়োসার্জারি, ডায়াগনোসিস করাসহ এন্ডোসকপি, এনজিওগ্রাম ও কলোনোস্কোপি ইত্যাদির বিকল্প হিসেবে কাজ করে এটি।
খাদ্যশিল্পে: খাদ্যজাত দ্রব্য প্যাকেটিং, খাদ্যে স্বাদ তৈরি ও খাদ্যের গুণাগুণ রক্ষার্থে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরণের দ্রব্যাদি তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয় ন্যানো টেকনোলজি।
জ্বালানি ক্ষেত্রে: জ্বালানি উৎসের বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন ধরণের ফুয়েল তৈরির কাজে, যেমন- হাইড্রোজেন আয়ন থেকে ফুয়েল, সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সৌরকোষ তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয় ন্যানো টেকনোলজি।
যোগাযোগ ক্ষেত্রে: হালকা ওজনের ও কম জ্বালানি চাহিদাসম্পন্ন গাড়ি প্রস্তুতকরণে ন্যানো পার্টিকেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
খেলাধুলার সামগ্রী তৈরিতে: বিভিন্ন ধরণের খেলাধুলার সামগ্রী যেমন- ক্রিকেট, টেনিস বলের স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য ও ফুটবল বা গলফ বলের বাতাসের ভারসাম্য রক্ষার্থেও বিশেষ কাজ করছে ন্যানো প্রযুক্তি।
বায়ু ও পানি দূষণ রোধে: শিল্প কারখানার ক্ষতিকর রাসায়নিক বর্জ্যকে ন্যানো পার্টিকেল ব্যবহার করে অক্ষতিকর বস্তুতে রূপান্তর করে পানিতে নিষ্কাশিত করা হয়। একইভাবে গাড়ি ও শিল্প কারখানার নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া ন্যানো পার্টিকেলের সহায়তায় দূষণমুক্ত গ্যাসে পরিণত করে বায়ুদূষণ রোধ করা যায়।
প্রসাধন শিল্পে: প্রসাধনীতে জিংক অক্সাইড-এর ন্যানো পার্টিকেল যুক্ত হওয়ায় ত্বকের ক্যানসার রোধ সম্ভব হয়েছে। সেই সাথে সানস্ক্রিন ও ময়েশ্চারাইজার তৈরির কাজে ব্যবহার্য রাসায়নিক পদার্থ তৈরির ক্ষেত্রে এবং এন্টি-এজিং ক্রিম তৈরিতেও ন্যানো টেকনোলজির গুরুত্ব সর্বাধিক রয়েছে।