।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
শীতে থরথর করে কাঁপছে উলিপুরের মানুষজন। গরম কাপড়ের অভাবে অনেকটা মানবেতর জীবনযাপন করছেন অসহায় দুস্থরা। তবে এ উপজেলায় সরকারিভাবে ৮ হাজার কম্বল বরাদ্দ পাওয়ার কথা থাকলেও তা পৌঁছায়নি হতদরিদ্র শীতার্তদের মাঝে।
দেশের উত্তর জনপদের সীমান্তঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রাম। জেলার অন্যতম বৃহৎ উপজেলা হলো উলিপুর। একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নের মধ্য আটটি ইউনিয়ন তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বেষ্টিত। শীতে বিশেষ করে নদ-নদী অববাহিকার মানুষজন কাহিল হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তিন ধাপে শীতার্তদের জন্য আট হাজার কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নে ৪৩০টি করে বণ্টন করে দেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ৫৫০টি কম্বল বিতরণ করা হয়। বাকি কম্বল উপজেলা পরিষদের গুদামে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, গত কয়েকদিন থেকে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার কারণে জেঁকে বসেছে শীত। টানা এক সপ্তাহ ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। দিনে-রাতে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি মতো শীত পড়ায় ঠান্ডার তীব্রতা আরও বেড়ে গেছে। এর মধ্যে মৃদু বেগে ঠান্ডা হাওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। শীত বস্ত্রের অভাবে কাহিল হয়ে পড়েছে অসহায়, দুস্থ ও হতদরিদ্ররা। বিশেষ করে ছিন্নমূল মানুষ আরও বেশি কাহিল হয়ে পড়েছে।
গুনাইগাছ ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বলেন, উপজেলা থেকে দুদফায় ৩৮০ পিস কম্বল বরাদ্দ পেয়েছি। তা বিতরণ করা হয়েছে। তিস্তা নদী বেষ্টিত এ ইউনিয়নে শীতার্ত মানুষের সংখ্যা বেশি যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
একই কথা জানালেন, থেতরাই ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা।
বুড়াবুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান খন্দকার এরশাদ বলেন, একবার ৩০০পিস কম্বল পেয়েছি। বিতরণ করার সময় বিভিন্ন মহল থেকে আরো ১০০ পিস কম্বল সংগ্রহ করে ৪০০ পিস বিতরণ করেছি।
একটি সূত্র জানায়, ইউনিয়ন গুলোতে ৩০০ বা ৩৫০ পিস কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হলেও অনেক ইউনিয়নে নামকায়াওয়াস্তে বিতরণ করা হয়েছে। অনেকেই এখনো গুদাম থেকে কম্বল সংগ্রহ করেন নাই।
চর গুজিমারীর ঝরু শেখ (৮০) জানান, ‘এই ঠা-ায় তো হাত-পা নড়াতে পারছি না। গরম কাপড় কেনার সাধ্যও নেই। খুব কষ্ট করি দিন পার করবের নাকছি। তবুও কাইও একনা কম্বল দিল না।’
দুর্গাপুর ইউনিয়ের আনন্দবাজার এলাকার দিনমজুর এরশাদুল হক (৩৮) জানান, ‘প্রায় এক সপ্তাহ থেকে তীব্র শীতের কারণে কাজ কাম বন্ধ হয়ে গেছে। অভাব অনটনে দিনাতিপাত করছি। মোটা কাপড় কিনমো সেই ট্যাকাও নাই। এত ঠান্ডা যাবার নাকছে আজ পর্যন্ত কোনো মেম্বার-চেয়ারম্যান একনা কম্বলও দিল না।’
হাতিয়া ডোবার পাড় এলাকার খোদেজা বেওয়া (৬৭) বলেন, ‘হামরা গরীব মানুষ, ঢুষে-কম্বল কিছুই নাই। কত কষ্ট করি চলাফেরা করবের নাকছি। এত কষ্ট যাবার নাকছে তবু কাইও চোখ তুলি তাকায় না।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সিরাজুদ্দৌলা বলেন, তিন ধাপে আট হাজার কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। প্রথম পর্যায়ে ৩০০ এবং দ্বিতীয় ৮০টি করে কম্বল প্রতিটি ইউনিয়নে বিতরণ করা হয়েছে। ১৪ জানুয়ারি তৃতীয় পর্যায়ে এক হাজার কম্বল পৌঁছিছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আতাউর রহমান বলেন, আমরা বিতরণ চলমান রেখেছি, তবে কিছু চেয়ারম্যান নেয়নি এখনও। যাতে প্রকৃত শীতার্তরা বঞ্চিত না হয় সে বিষয়ে চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
//নিউজ//উলিপুর//মালেক/জানুয়ারি/১৬/২৪