।। নিউজ ডেস্ক ।।
৭ জানুয়ারি (রবিবার) কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে বিএসএফের হাতে নাগেশ্বরীর কিশোরী ফেলানী খাতুন (১৫) হত্যার ১৩ বছরপূর্তি আজ। সম্প্রতি ২০১১ সালের এইদিনে ফুলবাড়ী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বহুল আলোচিত কিশোরী ফেলানী হত্যার ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বর্বরোচিত নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার পায়নি তার পরিবার। প্রিয় সন্তানকে হারানোর বেদনায় এ হত্যাকাণ্ডের ন্যায্য বিচার পাওয়ার আশায় এখনো কাঁদছেন ফেলানীর পিতা-মাতা।
জানা যায়, নাগেশ্বরীর রামখানা ইউনিয়নের দক্ষিণ কলোনিটারী গ্রামের নুরুল ইসলামের বড় মেয়ে ফেলানী। ইটভাটার কাজের জন্য সপরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতের বঙ্গাইগাঁও এলাকায়। এর মধ্যে বাংলাদেশে বসবাসরত নিজের খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হওয়ায় বাবা নুরুল ইসলাম বড় মেয়ে ফেলানীকে নিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার উদ্দেশ্যে কুয়াশায় ঢাকা এইদিনে ভোর ৬ টার দিকে দালালের মাধ্যমে ফুলবাড়ীর উত্তর অনন্তপুর সীমান্তের ৯৪৭/৩ নম্বর পিলারের পাশ দিয়ে বাবার সঙ্গে বাঁশের মই বেয়ে কাঁটাতার পার হওয়ার চেষ্টা করে ফেলানী। এ সময় ভারতীয় চৌধুরীহাট ক্যাম্পের টহলরত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে মইয়ের সামনে থাকা বাবা নুরুল ইসলাম বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নেমে পরায় প্রাণে বেঁচে গেলেও পিছনে থাকা ফেলানী গুলিবিদ্ধ হয়ে কাঁটাতারে ঝুলে পরে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ছটফট করে পানি পানি বলে চিৎকার করতে করতে নির্মমভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া ফেলানীর মৃতদেহ প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে।
সে সময় ফেলানীর মরদেহ কাঁটাতারে ঝুলে থাকার দৃশ্য দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমসহ মানবাধিকার কর্মীদের মাঝে সমালোচনার ঝর তোলে। এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পরে ভারত। সেই চাপের মুখে পরে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারের জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। বিএসএফএর এ কোর্টে স্বাক্ষী দেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম ও মামা হানিফ। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামী অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফ’র বিশেষ কোর্ট। রায় প্রত্যাখ্যান করে পুণঃবিচারের দাবি জানায় ফেলানীর বাবা।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পূর্নঃবিচার শুরু হলে, ১৭ নভেম্বর আবারও বিএসএফ’র আদালতে বিচার শুরু হয়। এবার শুধু স্বাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। আবারও ২০১৫ সালের ২ জুলাই ওই আদালত পুণরায় আত্মস্বীকৃত আসামী অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়। রায়ের পরে একই বছর ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়। এরপর ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ করোনা শুরুর আগে শুনানির দিন ধার্য হলেও শুনানি হয়নি।
ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম বলেন, আমাদের নিরস্ত সন্তানকে নির্মমভাবে কাঁটাতারে হত্যা করা হয়েছে। তাকে একটু পানিও খেতে দেয়া হয়নি। আমরা বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছি। কিন্তু এক যুগ পেরিয়ে গেলেও আমরা না পেলাম ক্ষতিপূরণ না পেলাম ন্যায় বিচার।
স্থানীয় আফজাল ও আমিনুল ইসলাম বলেন, ফেলানী হত্যার বিচার পেতে আদালতে সাক্ষী দিতে কয়েক দফায় ভারতে যান ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিচার না পাওয়াটা দুঃখজনক। ফেলানী হত্যার বিচারের পাশাপাশি সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবি জানাই আমরা।
কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর ও ফেলানীর বাবার আইনি সহায়তাকারী অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন জানান, সীমান্তে হত্যার শিকার ফেলানীর মামলাটির শুনানি হওয়া দরকার। যেহেতু দুই রাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। শান্তিপূর্ণ বর্ডারের জন্য নিশ্চয়ই ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট কিছু নির্দেশনা দেবেন। পাশাপাশি ফেলানীর পরিবার ক্ষতিপূরণ পাক এটাই আমাদের চাওয়া।