।। নিউজ ডেস্ক ।।
কুড়িগ্রামে পুলিশের অভিযানে ভুয়া ডিবি পরিচয়ে মোটরসাইকেল ছিনতাইকারী মোঃ নাজমুল ইসলাম (২৮) ও মোঃ ইমরান হোসেন (২৩) কে ছিনতাইয়ের মালামালসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) জনাব মোঃ রুহুল আমীন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম থানা এলাকার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ভিকটিম উলিপুরের পান্ডুল ইউনিয়নের তনুরা হাজিপাড়া গ্রামের মোঃ ইউনুছ আলী (৩৬) মোটরসাইকেল নিয়ে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন আবাসিক হোটেল অর্নব প্যালেসের পশ্চিম পাশে ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স বীমা অফিসের সামনে পৌঁছালে ৪ জন ব্যক্তি ভিকটিমকে থামার সংকেত দেয়। ভিকটিম স্বাভাবিকভাবে মোটরসাইকেল থামিয়ে তাদের কোমরে আইডি কার্ড ঝোলা অবস্থায় দেখে। তারা ডিবি বলে পরিচয় দিয়ে বাদীর মোটরসাইকেলটি সাইট করতে বলে। আসামীদের কোমরে আইডি দেখে তারা ডিবি পুলিশ বলে ভিকটিম বিশ্বাস করে এবং মোটরসাইকেলটি সাইট করলে আসামীগণ ভিকটিমের মোটরসাইকেলের চাবি নিয়ে নেয়। আসামীরা ভিকটিমের দেহ তল্লাশি করে ভিকটিমের কাছে থাকা চেকবইয়ের পাতা ও মোবাইল ফোন বের করে নেয়। ভিকটিমের মোটরসাইকেলের চাবি, চেকের পাতা ও মোবাইল নেয়ার কারণ জানতে চাইলে আসামীগণ ভিকটিমকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চুপ থাকতে বলে।
ভিকটিম ভীত হয়ে চুপ থাকলে আসামীগণের মধ্যে একজন আসামী মোটরসাইকেল, চেকের পাতা ও মোবাইল নিয়ে রংপুরগামী রাস্তা দিকে চলে যায় এবং অন্যান্য আসামীগণ ভিকটিমকে কুড়িগ্রাম থানায় আসার কথা বলে তাদের সাথে থাকা গাড়িতে উঠে রংপুরগামী রাস্তার দিকে চলে যায়। অতঃপর ভিকটিম কুড়িগ্রাম থানায় উপস্থিত হয়ে দেখতে পায় যে, থানায় তার মোটরসাইকেল নাই এবং আসামীদের দৈহিক বর্ণনা দিয়ে জানতে পারে যে, উক্ত আসামী কোন থানা ও ডিবি অফিসে চাকুরী করে না।
পরবর্তীতে বাদীর অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে রক্ষিত নম্বরে কল করে আসামীগণ বাদীকে ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা নিয়ে রংপুর কোতোয়ালী থানা এলাকায় ডাকে। আসামীগণ রংপুর কোতোয়ালী থানা এলাকায় অবস্থান করছে জেনে বাদী উক্ত থানায় উপস্থিত হয়ে থানা পুলিশকে ঘটনার বিষয়ে অবহিত করে এবং আসামীদের সন্ধান করতে থাকে। এদিকে কুড়িগ্রাম থানা পুলিশ উক্ত সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনার অনুসন্ধান করতে থাকে।
কুড়িগ্রাম থানার একটি আভিযানিক টিম এসআই নিরস্ত্র মোঃ নওসাদ আলীর নেতৃত্বে নিরলসভাবে টানা ০২ দিন অভিযান পরিচালনা করে বুধবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে জামালপুর সদর থানাধীন পশ্চিম ফুলবাড়ীয়া (কদমতলা) এলাকা থেকে উক্ত ঘটনার মূলহোতা গাইবান্ধা জেলার সাদুল্যাপুর থানার উত্তরহাট বামুনী এলাকার মোঃ নাজমুল ইসলাম ও বগুড়া জেলার কাহালু থানার কৈগাড়ী এলাকার মোঃ ইমরান হোসেন কে ভিকটিমের লুণ্ঠিত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার পূর্বক গ্রেফতার করে। সেই সাথে তাদের হেফাজত থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি আইডি কার্ড, সেনাবাহিনীর একটি শীতের জ্যাকেট ও একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন জব্দ করে কুড়িগ্রাম থানা পুলিশ। পুলিশের উক্ত চৌকশ দলটি এই এদের গ্রেফতার করতে রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও জামালপুরে অভিযান পরিচালনা করে।
কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) জনাব মোঃ রুহুল আমীন বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জেলায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে ডিবি পুলিশের ভুয়া পরিচয় প্রদান করে অপরাধ করে আসছিল। কুড়িগ্রাম জেলায় এই ঘটনা ঘটিয়ে জামালপুর জেলায় আত্মগোপনে ছিল। কিন্তু কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের একটি চৌকস টিমের টানা ০২ দিনের নিরলস অভিযানে ছিনতাই হওয়া মামালালসহ হাতেনাতে গ্রেফতার হয় উক্ত ছিনতাইকারী। এই গ্রুপের সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা এই বিষয়ে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।