।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
উলিপুরে আগাম জাতের আমন ধানের ভালো ফলন হয়েছে। পুরোদমে শুরু হয়েছে কাটাই-মাড়াই। ধানের ফলন ও দাম ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে এখন হাসির ঝিলিক।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১ টি পৌরসভাসহ ১৩ টি ইউনিয়নে ব্রি ধান-৭০, ৭১, ৭৫, ৮০, ৮৭ ও ৯৩, বিনাধান-১১, ১৭, ব্র্যাক-১, হাইব্রিড এরাইজ-৭০০৬, হিরা ধান-১০, ধনী গোল্ড ও পোটন পাইরী আগাম জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। এই মৌসুমে উপজেলায় আগাম জাতের আমন চাষ করা হয়েছে ৩ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে।
আগাম জাতের এ ধান চাষের শুরু থেকে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত কৃষকদের নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। বৃষ্টি নির্ভর আমন চাষের শুরুতেই খরার কারণে সেচের মাধ্যমে ধান গাছ বাঁচিয়ে রাখতে হয়েছে কৃষকদের। এরপর সঠিকভাবে পরিচর্যা করা হলেও ধান পাকা ও কাটার সময় হঠাৎ করে ঝড় হাওয়ায় যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দেয়। এত কিছুর পরেও উপজেলায় আগাম জাতের ধান চাষে সাফল্য এসেছে কৃষকের। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের ঘরে ঘরে আগাম জাতের ধান উঠতে শুরু করেছে। আশ্বিন-কার্তিক মাসে এ ধান ঘরে তুলে বাজার মূল্য বেশি পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
বিভিন্ন হাট-বাজারে ঘুরে ব্যবসায়ী ও ধান বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিমণ আমন ধান ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাই কৃষকরা এখন পুরাতন জাত যেমন পানি সাইল, পাইজাম, বিআর-১১, ২২ সহ বিভিন্ন জাতের ধান চাষাবাদ না করে এই আগাম জাতের ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছে।
অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এক যুগ আগেও আশ্বিন-কার্তিক মাসে এ অঞ্চলে দিনমজুর ও কৃষকের কাছে মঙ্গার মাস বলে বিবেচিত ছিল। সে সময় কৃষকদের হাতে কোন কাজ ছিল না। কিন্তু এখন আর সেদিন নেই। এখন বিভিন্ন জাতের আগাম ধান কৃষকের ঘরে ঘরে। আগে অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহের পর ক্ষেতের ধান কাটা-মাড়াই শুরু করা হতো। কিন্তু এখন আর আমন ধান কাটার জন্য অগ্রহায়ণ মাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। আগাম জাতের বিশেষ করে হাইব্রিড এজেড-৭০০৬ ধান কৃষকরা ঘরে ঘরে তুলছে আশ্বিন মাসেই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অসময়ে বৃষ্টিপাত ও প্রচণ্ড খরায় চাষ উপযোগী নতুন নতুন জাতের ধান চাষ হচ্ছে এলাকায়। বীজতলায় বীজ বপনের দিন থেকে মাত্র ১২০ দিনের মধ্যেই আগাম জাতের এসব ধান ঘরে তোলা হচ্ছে।
উলিপুর পৌর শহরের নারিকেল বাড়ি খেয়ারপাড় এলাকার কৃষক জয়নাল আবেদীন জানান, আগাম জাতের আমন ধান ১১০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে এই ধান কাটা-মাড়াইয়ের উপযোগী হয়। প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে ফলন আসে ১৮ থেকে ২০ মণ। পোকামাকড়ের আক্রমণের আগেই এই ধান কাটা শেষ হয়ে যায়। আবার এই ধান কেটে দ্রুত ওই জমিতে আলু, গম, সরিষা, তিল ও তিসিসহ নানা জাতের সবজি আবাদ করা সম্ভব।
বজরা ইউনিয়নের আরেক কৃষক ফরিদ মিয়া জানান, এবার তিনি দেড় একর জমিতে আগাম জাতের ব্রি-৭৫, ৮৭ ও ৯৩ ধান রোপন করেছেন। ইতোমধ্যে আগাম জাতের ধান কাটা-মাড়াই প্রায় শেষ। প্রতি একরে তিনি ৫৫ থেকে ৬৫ মন ধান পেয়েছেন। বাজারে ধান ও খড়ের আটির দাম ভালো হওয়ায় তিনি খুশি।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার ও কৃষিবিদ মোশাররফ হোসেন বলেন, আগাম জাতের ধানের ভালো ফলন হয়েছে। কম সময় ও অধিক ফলনের কারণে কৃষকরা এই জাতের ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
//নিউজ//উলিপুর//মালেক/নভেম্বর/০১/২৩