।। লাইফস্টাইল ডেস্ক ।।
শারীরিক সমস্যার মতো মানসিক সমস্যাকেও সমান গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। কোনো শারীরিক সমস্যা হলে যেমন আমরা ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করি ঠিক তেমন মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রেও আমাদের ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া অতিব জরুরি। মানসিক রোগের মধ্যে সিজোফ্রেনিয়া অন্যতম। সঠিক চিকিৎসা না পেলে এই রোগ বিপজ্জনক আকার ধারণ করতে পারে। সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা হত্যা বা আত্মহত্যার ঝুঁকি বেশি।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কে জানান, সিজোফ্রেনিয়া একটি গুরুতর মানসিক রোগ। এ রোগের রোগীরা নিজে বুঝতে পারেন না বা কখনো স্বীকার করেন না যে, তার কোনো মানসিক রোগ আছে।
তিনি আরও বলেন, সিজোফ্রেনিয়া কেন হয় তার নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। তবে, বংশে কারো সিজোফ্রেনিয়া থেকে থাকলে পরে আরেকজনেরও হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। এ ছাড়াও নানাবিধ কারণে সিজোফ্রেনিয়া হয়ে থাকে। শৈশবে কোনো অস্বাভাবিকতা থাকলে হতে পারে, শৈশবে কেউ যদি অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকে, অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ কিংবা শৈশবের পরিবেশেগত ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির প্রধান কিছু লক্ষণ। যেমন-
১. রোগীর মধ্যে কখনো কখনো চিন্তার অস্বাভাবিকতা তৈরি হয়।
২. রোগী অন্যকে সন্দেহ করা শুরু করতে পারেন।
৩. হ্যালুসিনেশন হয়। হ্যালুসিনেশন অর্থ ব্যক্তি এমন কিছু শুনতে পান, নাকে গন্ধ পান, চোখে দেখতে পান, এমনকি স্পর্শ অনুভব করতে পারেন যেটির কোনো ভিত্তি বা সত্যতা নেই।
৪. রোগীর ডিলিউশন হয় অর্থাৎ তিনি ভ্রান্ত বিশ্বাসের মধ্যে থাকেন। যেমন- কেউ তার ক্ষতি করতে পারেন, কেউ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, অনেক সময় মনে করেন তার চিন্তা কেউ চুরি করে নিচ্ছেন অথবা কখনো মনে করেন তার চিন্তা কেউ ছড়িয়ে দিচ্ছেন, তার চিন্তা অন্যরা বুঝে ফেলছেন।
৫. আগ্রাসী আচরণ থাকতে পারে।
৬. নিজের প্রতি যত্ন কমে যেতে পারে।
৭. একা একা কথা বলেন রোগী।
৮. কানে গায়েবি আওয়াজ শুনতে পান। মনে করতে থাকেন যে কেউ তাকে নিয়ন্ত্রণ করছেন, তার সব কর্মকাণ্ড কারো মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।
সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা-
ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, সিজোফ্রেনিয়া রোগীর একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে ওষুধ সেবন। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কখনোই স্বীকার করবেন না তার মানসিক সমস্যার কথা। পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি খেয়াল করতে হবে এবং রোগের লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে বা কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। সিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দীর্ঘমেয়াদী। আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে সারা জীবন রোগীদের ওষুধ খেতে হয়। এসব রোগীদের সামাজিক সহায়তার প্রয়োজন হয়, পরিবারের কাউন্সিলিংয়ের প্রয়োজন হয়। সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্তদের কাজ বাড়ানোর জন্য তাদেরও কাউন্সিলিংয়ের প্রয়োজন হতে পারে। সিজোফ্রেনিয়া যেহেতু নিরাময়যোগ্য রোগ নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিরাময় হয় না। সেজন্য দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়াটা জরুরি।
সূত্র: The Daily Star বাংলা