।। লাইফস্টাইল ডেস্ক ।।
বর্তমানে আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের শরীরে জ্বর হওয়া যেন সাধারণ একটি ঘটনা। এ সময় শরীরের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের পাশাপাশি নানা ভাইরাসজনিত জ্বর দেখা দেয়। জ্বর হলে শরীর ব্যথা, বমি কিংবা বমি বমি ভাব, শরীর দুর্বল ও কোনো কিছু ভালো না লাগা ইত্যাদি হয়ে থাকে। জ্বর হওয়ার সাথে সাথে মুখের রুচি একেবারেই চলে যায় এবং জিভের মধ্যে যেন একটা তিতা স্বাদ থেকে যায়। তাই জ্বরের সময় অনেকের কোনো খাবার খেতে ইচ্ছে করে না। বিশেষ করে শিশুরা জ্বরের সময় কিছুই খেতে চায় না। জ্বরের সময় খাবার খেতে না পারলে শরীর আরও দুর্বল হয়ে পড়ে এবং পর্যাপ্ত পুষ্টিহীনতার কারণে শরীরকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়ে ওঠে না। জ্বর বা যেকোনো ধরণের অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতে খাবার বা ডায়েটের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই জ্বরের মধ্যে মুখের রুচি না থাকলেও ক্যালরি পূরণ করে শরীরকে সুস্থ রাখতে খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
প্রযুক্তিবিদ্যা গবেষক, ইংরাজি শিক্ষক প্রতীক মুখার্জি ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, জ্বর কোন রোগ নয়, রোগের উপসর্গ মাত্র। আপনি যাই চেষ্টা করুন না কেন, রুচি ফিরবে না। শরীরের অসুবিধা অনেকটাই জানান দেয় অরুচির মাধ্যমে। টাইফয়েড, জন্ডিস, আন্ত্রিক, কলেরা, অসুখ যা-ই হোক না কেন, অরুচি হবেই, আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। আর রুচি ফিরে আসা আরোগ্যের লক্ষণ। তবে আরোগ্যের উদ্দেশ্যে জোর করে রুচি ফেরাতে চাওয়া একরকম বেকুবি। অসুস্থ শরীর সহজপাচ্য খাবারই চায়। গুরুপাক খাবার অসুস্থ শরীরকে আরও বেশি ভারাক্রান্ত করে তুলতে পারে। তাই লো প্রোটিন, লো ফ্যাট, হাই কার্ব জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। যেমন মিষ্টি জাতীয় খাবার। নার্ভ এ ক্রিয়া করে এমন খাবার না খাওয়াই উচিত। এদিকে তেল-ঘি হজম করতে লিভারের ভুমিকাই মুখ্য। কিন্তু অসুস্থ শরীরে লিভারের কর্মক্ষমতা কমের দিকে থাকাই স্বাভাবিক। তাই রোগ না বাড়িয়ে, ঠিক মতো ওষুধ- পথ্য খেয়ে শরীর ঠিক করে নিলেই রুচি আপনা আপনি ফিরে আসবে। চিন্তা নেই।
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক জ্বরে মুখের রুচি কমলে যেসব খাবার খাওয়া উচিতঃ-
★ জ্বরের সময় অল্প পরিমাণ করে কিছুক্ষণ পর পর খাবার খাওয়া উচিত। খাওয়ার আগে বা মধ্যবর্তী সময়ে পানি পান না করাই ভালো। খাবার শেষ করার কিছুক্ষণ পরে পানি খেতে হবে।
★ জ্বরে মুখের রুচি আনতে স্যুপ (লেমন করিয়্যান্ডার স্যুপ, টমেটো স্যুপ, চিকেন স্যুপ, ভেজিটেবল স্যুপ) খুবই কার্যকর। অন্যান্য সাধারণ স্যুপের তুলনায় চিকেন স্যুপ খেতে পারেন। কারণ, এতে রয়েছে অ্যামাইনো অ্যাসিড যা অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিইনফ্লামেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
★ নিয়মিত খাবারের মধ্যে ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার যেমন আমলকী, আমড়া, লেবু, কমলা, মাল্টা, আনারস, আঙুর, ব্রকলি, গাজর, টমেটো, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি খেতে পারেন। এসব খাবার খাওয়ার ফলে মুখের রুচি অনেকটা বেড়ে যায়।
★ দৈনিক খাবারের সাথে টমেটোর চাটনি, লেবু খেতে পারেন। রান্নাতে পুদিনা ব্যবহার করতে পারেন। কেননা পুদিনা পাতা মুখের তেতো ভাবটা কাটাতে সাহায্য করে।
★ জ্বরের মধ্যে অনেক কার্যকারী। মধু ব্যাকটেরিয়ারোধী ও ইমিউন সিস্টেমকে উদ্দীপ্ত করে। শিশুদের কাশিতে ভালো কাজ করে মধু।
★ কচি ডাবের পানি জ্বরের মধ্যে কার্যকর পানীয় হিসেবে কাজ করে। কচি ডাবের পানিতে রয়েছে গ্লুকোজ ও প্রয়োজনীয় ইলেকট্রোলাইট। তাই নিয়মিত কচি ডাব খাওয়া প্রয়োজন।
★ শরীরে ক্যালরি পূরণ করতে বেশি বেশি সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন। কারণ সামুদ্রিক মাছ প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ডি–এর উৎস, যা প্রদাহনিরোধী ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।
★ জিংক জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খেতে হবে। যেমন ডিম, দুধ, পনির, বাদাম, সিড, রেড মিট, অরগ্যান মিট, মাশরুম, পালংশাক মুখের রুচি বাড়াতে অনেক বেশি উপকারী। অনেক সময় শরীরে জিংক ও ভিটামিনের পরিমাণ কমে গেলে খাওয়ার ইচ্ছে থাকে না বা ক্ষুধা লাগে না। মাছের তেল, জিংক ও ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন) সাপ্লিমেন্টগুলো ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করে।