।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
উলিপুরে গিদারী নদীতে অবস্থিত সেতুটি স্রোতে ভেঙে পড়েছে। সেতুটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে পান্ডুল ইউনিয়নের ৬টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) ভোররাতে নদীর তীব্র স্রোতে সেতুর নিচের মাটি সরে গিয়ে সেতুটি ধসে পড়ে। পান্ডুল ইউনিয়নের কাগজিপাড়া গ্রামে গিদারী নদীর ওপর ওই সেতুর অবস্থান।
স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৯ সালে কাগজিপাড়া গ্রামে গিদারী নদীর ওপর সেতুটি নির্মিত হয়। এরপর থেকে সেতুটির কোনো সংস্কারকাজ হয়নি। এই সেতু দিয়ে পান্ডুল ইউনিয়নের কাগজিপাড়া, আমভদ্রপাড়া, চাকলিরপাড় ও জটিয়াপাড়াসহ আশপাশের ৬টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ যাতায়াত করত। গত মার্চে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গিদারী নদীর খননকাজ শুরু করে। খনন এখনো চলমান রয়েছে। এতে নদীতে পানিপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় সেতুটি ভেঙে পড়ে।
পাউবোর নদী খনন প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আবদুল আজীজ জানান, ওই সেতু প্রায় অর্ধশত বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। আর সেসময় সেতুটি অনেক উঁচুতে নির্মাণ করা হয়েছিল। খাল খননের পর সেতুর মুখ উঁচুতে উঠে যায়। সেতুর উজানে অতিরিক্ত পানি জমায় চাপ সহ্য করতে না পেরে ভাঙন দেখা দেয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে ১ হাজার ২০০শ জিও ব্যাগ ব্যবহার করে পানির স্রোত কমানোর চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু কোন ফল হয়নি। বৃহস্পতিবার ভোরে সেতুটি ভেঙে পড়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে সেতু ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মোতালেব ও ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জমির উদ্দিন।
ইউপি সদস্য জমির উদ্দিন জানান, স্বাধীনতার আগে নির্মাণ করা সেতুটি সংস্কারের অভাবে ধসে পড়ায় পান্ডুল ইউনিয়নের প্রায় ৬ গ্রামের মানুষের চলাচলে অসুবিধা হলো। ভারী বৃষ্টিতে উজানে পানি জমে তীব্র স্রোতের কারণে সেতুর ভাটিতে ও উজানে প্রায় তিন ফিট পানির তফাৎ হয়। ফলে স্রোতে সেতুর ভাটিতে মাটি সরে গিয়ে বৃহস্পতিবার ভোররাতে ভেঙে পড়েছে। এর আগে ১১ অক্টোবর (বুধবার) সেতুর মাঝের পিলার সম্পূর্ণ ধসে যায়। বর্তমানে মানুষ পারাপারের জন্য অস্থায়ী বাঁশকাঠের সেতু তৈরি করার পরিকল্পনা হচ্ছে। সেটি হতেও প্রায় এক সপ্তাহ সময় লাগবে।
ইজিবাইকচালক আমভদ্রপাড়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই সেতুর ওপর দিয়ে ৬ গ্রামের মানুষ উপজেলা শহরসহ দুর্গাপুর হাট, মিনাবাজার ও পান্ডুল ইউনিয়নে যাতায়াত করতো। ইউনিয়নের কাগজিপাড়া পানের বরজ থেকে পান গাড়িতে করে জেলা শহরে নিয়ে যেতাম। সেতুটি ভেঙে পড়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যোগাযোগের খুব অসুবিধা হয়ে গেল। ইজিবাইক নিয়ে শহরে যাব সে উপায় আর রইলো না। এখন ৪ কিলোমিটার পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হবে।
উলিপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মাহমুদুর রহমান জানান, তীব্র স্রোতে সেতুটির মাঝের পিলার ধসে গেলে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সেতুর দুই পাশে ঝুঁকিপূর্ণ সাইনবোর্ড টাঙ্গানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার ভোররাতে সেতুটি ভেঙে যায় বলে শুনেছি। ইতিমধ্যে উপজেলা এলজিইডি ইঞ্জিনিয়ার কে সেতুটির জন্য উপরে প্রস্তাবনা পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। পথচারী চলাচলের জন্য গিদারী নদীর ওপরে অস্থায়ী সাঁকো তৈরি করার জন্য বরাদ্দ দিতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকেও বলা হয়েছে।
//নিউজ//উলিপুর//মালেক/অক্টোবর/২১/২৩