।। নিউজ ডেস্ক ।।
ভূরুঙ্গামারীতে সোনার নকল পুতুলসহ জ্বীনের বাদশা নামে প্রতারক চক্রের এক সদস্যকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চর ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের নতুনহাট বাজার এলাকার একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসার সামনে থেকে তাকে আটক করা হয়।
বাদী খয়বার আলী জানান, গত প্রায় ০৪ দিন যাবত আমার মায়ের মোবাইল ফোনে ফোন করে আল্লাহর অলি দরবেশ পরিচয় দিয়ে সালাম-কালাম করে বলে মা তোর ভাগ্যে বহু ধন-রত্ন দেখা যাইতেছে তুই বড় ভাগ্যবান। তুই ছোট বেলা থেকে অনেক পরিশ্রম করতেছিস। আমাকে তোর কাছে আল্লাহ তার দরবার থেকে পাঠিয়ে দিয়ে তোর প্রাপ্য ধন-সম্পদ (০৭ রাজার ধন) আল্লাহর নির্দেশে ৭০০ জন জ্বীন পাহারা দিতেছে এই ধন-সম্পদ তুই যদি পাইতে চাস? তাহলে তোকে আল্লাহর ওয়াস্তে মসজিদে কোরআন শরীফ, জায়নামাজ ও টুপি দান করতে হবে। এইভাবে উক্ত আল্লাহর অলি দরবেশ সেজে উক্ত ব্যক্তি আমার মায়ের সাথে প্রতিনিয়ত গভীর রাতে মোবাইলে কথা বলতে থাকে এবং আমার মাকে মূল্যবান ধন-সম্পদ পাওয়ার লোভ-লালসা দেখাতে থাকে। তখন আমার মা সেই আল্লাহর অলি দরবেশ হিসেবে দাবি করা ব্যক্তিকে জানায় যে, কোরআন শরীফ, জায়নামাজ ও টুপি আমি কোথায় দিবো। তখন আল্লাহর অলি দরবেশ আমার মাকে জানায় যে, বিকাশে ১০০০/- (এক হাজার) টাকা পাঠিয়ে দিলে কোরআন শরীফ, জায়নামাজ ও টুপি তোর নামে আল্লাহর দরবারে পৌঁছে দিবো।
তিনি আরও জানান, আমার মা ধর্ম ভীরু ও গ্রামের সহজ-সরল বৃদ্ধ মহিলা হওয়ায় উক্ত আসামীর কথায় তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সরল বিশ্বাসে উক্ত ঘটনার ০১ দিন পরে আমার মা গুপ্ত ধন-সম্পদ প্রাপ্তির আশায় উক্ত আসামীর দেওয়া বিকাশ নম্বরে স্থানীয় এজেন্টের বিকাশ নম্বর থেকে পর্যায়ক্রমে ০২ বার ৪০০০/- (চার হাজার) টাকা বিকাশ করে। আল্লাহর অলি দরবেশ সেজে উক্ত প্রতারক আসামী আমার মাকে আরও বলে যে, মা তুই গুপ্ত ধন-সম্পদ পাইতে চাইলে আল্লাহকে খুশি করার জন্য কিছু স্বর্ণের গহনা দিতে হবে। আমার মাকে আরও বলে যে, একটি মাটির খালি পাতিলে চাল রাখে একটি ঢাকনা সহ সাদা কাপড় দ্বারা বেধে তোর ঘরের গোপন জায়গায় রেখে দে। মা তুই ও তোর স্বামী জায়নামাজের উপর নফল নামাজ আদায় কর। উক্ত পাতিল আমি না বলা পর্যন্ত খুলবি না। আমার মা দরবেশের কথামত উক্ত পাতিলটি ঘরের গোপন জায়গায় রেখে দেয়। এরপর দরবেশ আমার মাকে ভূরুঙ্গামারী থানাধীন চর ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের নতুন হাট বাজারের ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন মাদ্রাসার মাঠে গাছের নিচে গহনাপত্র রুমালে বেধে রাখতে বলে এবং পিছনে তাকাতে নিষেধ করে। তাকালে আমার মায়ের অমঙ্গল হবে মর্মে ভয়ভীতি দেখায়। আমার মা তার কথামত গুপ্ত ধন-সম্পদ পাওয়ার আশায় মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যা আনুমানিক ০৬.০০টার সময় উক্ত স্থানে যায়। উক্ত স্থানের আশেপাশে উক্ত ব্যক্তিকে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাফেরা করায় পরবর্তীতে গ্রাম পুলিশসহ কয়েকজন লোকের নিকট উক্ত আসামীর ঘোরাফেরা সন্দেহজনক মনে হলে স্থানীয় আরও কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে ধৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তার নাম ঠিকানা একেক সময় একেক ঠিকানা বলে।
পরবর্তীতে ভূরুঙ্গামারী থানা পুলিশ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার মাড়িয়া গ্রামের মোঃ আঃ রশিদ (৪০) কে গ্রেফতার ও তার হেফাজত থেকে ০১ টি স্বর্ণ রঙের পিতলের মূর্তি ও ০১ টি পুরাতন ফাইভ স্টার বাটন মোবাইল উদ্ধার করে এবং ধৃত আসামীর নিকট থেকে পিতলের ০১ টি মূর্তি সম্পর্কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যায় যে, ভিকটিম মোছাঃ খয়ের জান (৬৮) কে স্বর্ণের রঙের উক্ত পিতলের লক্ষ্মী মূর্তিটি দেখিয়ে স্বর্ণের মুর্তি হিসেবে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য উক্ত জ্বীনের বাদশা গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানা হতে চর ভূরুঙ্গামারী এসেছিল। পরবর্তীতে উক্ত আসামীকে গ্রেফতার করে ভূরুঙ্গামারী থানার একটি চৌকস টিম। উক্ত প্রতারক নানাকণ্ঠে নানাভাবে অসংখ্য মহিলাকে ভুলভাল বুজিয়ে অনেক প্রতারণা করেছেন মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান।
ইউপি চেয়ারম্যান মানিক উদ্দিন জানান, আটক ব্যক্তি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, নতুনহাট এলাকার আকবর আলীর স্ত্রী ফয়েরজানকে বিভিন্ন সময় ফোনে কল দিয়ে জ্বীনের বাদশা পরিচয় দেয় এবং তার স্বামী-সন্তান মারা যাবে মর্মে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও গুপ্তধন পাওয়ার কথা শুনিয়ে বিকাশের মাধ্যমে বেশ কিছু টাকা হাতিয়ে নেয়।
কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ রুহুল আমীন বলেন, গ্রেফতারকৃত নিজেকে জ্বীনের বাদশা হিসেবে পরিচয় দেওয়া মোঃ আঃ রশীদ বিভিন্ন জেলার সম্মানিত নাগরিকের গুপ্তধনের লোভ দেখিয়ে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে আসছিলো। এই সব বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলার সম্মানিত নাগরিকদের আরও সতর্ক হওয়া এবং এই ধরণের ঘটনা ঘটলে জেলা পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করছি। নিরাপদ কুড়িগ্রামের লক্ষ্যে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।