।। লাইফস্টাইল ডেস্ক ।।
যখন কোনো নবজাতক শিশু জন্মগ্রহণ করে, তখন পরিবারের প্রতিটি মানুষের মাঝে নেমে আসে আনন্দ-উল্লাস। মিষ্টি খাওয়ানোর আনাগোনা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শিশুটিকে কিভাবে যত্ন নিতে হবে, কিভাবে নিরাপদে রাখবে এবং শিশুকে কিভাবে সব সময় সুস্থ রাখা যায় তার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে থাকে অনেক পরিবার। কিন্তু জন্মের পর নবজাতকের প্রথম চেকআপের সময় তার ওজন, দৈর্ঘ্য ও মাথার আকার স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক আছে তা দেখে নিতে হয়। কেননা অনেক শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগে ভূমিষ্ঠ হয়, কেউ আবার পরে জন্মগ্রহণ করে ও কেউ আবার সঠিক সময়ের মধ্যে জন্ম হওয়ার পরেও স্বাভাবিক অবস্থাতে থাকে না। তাই নবজাতক শিশুদের যত্ন-আত্তি ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা খুবই প্রয়োজন।
নবজাতকের সুরক্ষা নিয়ে বিস্তারিত সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী বলেন, হাসপাতালে ডেলিভারির পর শিশুর খাবার, প্রস্রাব-পায়খানা, ঘুম, বেড়ে ওঠা ও টিকা দেওয়া সম্পর্কে যা জানতে হবে তা হলোঃ-
খাবার খাওয়ানোঃ শিশু জন্ম নেওয়ার পরেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রি-মিল্ক-কলোস্ট্রাম (শালদুধ) খাওয়ানো শুরু করে দেওয়া। মায়ের বুকের দুধ নার্স-ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ভাবেই চলবে। শিশু যখন চায় যতক্ষণ চায় এ নিয়ম মেনে স্তন্যপান করানো আবশ্যক। সাধারণত দিনে এক থেকে তিন ঘণ্টা পর পর নবজাতক শিশু বুকের দুধ পান করতে পারে।
প্রস্রাব-পায়খানাঃ মায়ের বুকের দুধ ভালোভাবে পেয়ে থাকলে সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিন বয়সী নবজাতক শিশু দৈনিক চার থেকে ছয়বার প্রস্রাব করে থাকে। কালো রঙের মিগেনিয়াম পায়খানা হতে থাকে প্রথম কয়েক দিন, পরে আস্তে আস্তে তিন থেকে চার দিন বয়সে তা সবুজ বর্ণের হয়। বুকের দুধ পান করে বেড়ে ওঠা শিশুরা দিনে তিন থেকে ছয়বার পর্যন্ত পায়খানা করে থাকে।
সঠিক ঘুমঃ নবজাতক শিশুরা নিয়মিত দিনে প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমাতে পারে। তবে খাওয়ার ক্ষেত্রে নবজাতক শিশুকে দিনে প্রতি ৪ ঘণ্টা পর ঘুম থেকে তুলিয়ে খাবার খাওয়ানো উচিত।
টিকা দেওয়াঃ নবজাতক শিশুকে টিকা প্রদানের ফলে অনেক মারাত্মক রোগ থেকে সুরক্ষা পায়। যেমন যক্ষ্মা প্রতিরোধী বিসিজি, খাওয়ার পোলিও, হেপাটাইটিস-বি ইত্যাদি। নবজাতক হাসপাতালে থাকা অবস্থায় যদি তার টিকা প্রদানের সময় হয় তাহলে অবশ্যই তাকে টিকা দিয়ে নিতে হবে।
বেড়ে ওঠাঃ নবজাতক শিশু ২০-৩০ সেমি পর্যন্ত উজ্জ্বল বস্ত্রের দিকে তাকাতে পারে। মায়ের কণ্ঠস্বর শুনার মাধ্যমে শব্দের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। এছাড়া হাত-পা মুড়িয়ে থাকা, রিফ্লেক্স-স্তনের দিকে মুখ ঘোরানো ও চুষতে পারা এবং নবজাতকের হাতের তালুতে আঙুল রেখে দিলে তা জোরের সঙ্গে মুঠো করে ধরতে পারে।
এছাড়াও নবজাতক শিশুকে নরম বিছানার পরিবর্তে শক্ত বিছানায় পিঠের ওপর শোয়ানো খুবই ভালো। ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে হবে, নবজাতক শোয়ার ঘরে তুষের আগুন বা ধোঁয়া জ্বালানো যাবে না এবং কোনো ভাবেই ধূমপান করা যাবে না। নবজাতক শিশুর নাভি সাধারণত ১০ থেকে ২১ দিনের মধ্যেই পড়ে যায়। তাই নাভি ভালো ভাবে পরিস্কার রাখতে হবে।