।। লাইফস্টাইল ডেস্ক ।।
মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রতঙ্গই খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্তু বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হলো যকৃৎ বা লিভার। এই লিভার শরীরকে ডিটক্সিফাই করে তোলে। যা মূলত শরীরের জমে থাকা ক্ষতিকারক টক্সিনগুলোকে ছেঁকে বার করে দিতে সহায়তা করে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে যত্ন না নেয়ার ফলে লিভারের অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে। যে কারণে লিভারের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা নষ্ট হয় ও শরীরের মধ্যে জমে থাকা টক্সিন শরীরেই থেকে যায়। ফলে বিকল হতে শুরু করে শরীরের একের পর এক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে আগে লিভারকে সুস্থ রাখা খুবই জরুরি। তবে অনেকের অজান্তেই বেশ কয়েকটি বদঅভ্যাসের কারণে লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
চিকিৎসকদের মতে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যানসারের রোগী বাড়ছে। এর পেছনে প্রধান কারণ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস। দেশে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যানসারের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস।
টিবিএস বাংলার এক প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, ‘লিভার রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক মানুষ শুধু মারা যাচ্ছে, তাই নয়, লিভার রোগের কারণে প্রতি বছর ব্যয় হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থও। গবেষণায় দেখা গেছে এদেশে ১০ লক্ষ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পেছনেই ব্যয় হয় কম করে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একইভাবে হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত ৫০ শতাংশ বাংলাদেশের নাগরিকের চিকিৎসার ব্যয় গিয়ে দাঁড়াবে ৩ বিলিয়ন ডলারে।’
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক লিভারের ক্ষতি হয় যে ১০টি অভ্যাসেঃ-
★ সকালে ঘুম থেকে ওঠে দীর্ঘসময় খাবার না খেয়ে থাকা লিভারের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। নিয়মিত ভাবে এই অনিয়ম চলতে থাকলে কোনো এক সময় লিভার তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
★ সকালে ঘুম থেকে উঠার পর অলসতার কারণে প্রেস্রাবের চাপ থাকার পড়েও প্রেস্রাব না করা লিভারের জন্য এটি একটি ক্ষতিকর দিক।
★ অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁচা খাবার খাওয়ার অভ্যাস লিভারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অধিক পরিমাণে কাঁচা সবজি বা ফলমূল খাওয়া হয়, যা পরিপাকতন্ত্রের উপর চাপ সৃষ্টি করে। এতে লিভারের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
★ রাতে দেরি করে ঘুমোতে যাওয়া এবং সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা দু’টিই লিভারের জন্য ক্ষতিকর।
★ বেশি পরিমাণে ওষুধ খাওয়ার ফলে লিভার নষ্ট হতে পারে। বিশেষ করে শরীরের ব্যথা দুরীকরণের জন্য যে ওষুধ খাওয়া হয় তাতে লিভারের কর্মক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পায়। তাছাড়া ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।
★ বেশি মাত্রায় মদ্যপান করলে অকালে লিভার নষ্ট হয়ে থাকে। এছাড়াও অ্যালকোহলের ক্ষতিকর উপাদান মানুষের লিভারের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে।
★ খারাপ তেলে ভাজা ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার লিভারের জন্য খুবই ক্ষতিকর। নিয়মিত ভাবে এই ধরণের খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকলে লিভার তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে।
★ কেউ কেউ আবার তাদের পছন্দের খাবার প্রতিদিনের তুলনায় বেশি পরিমাণে খেয়ে থাকেন এর ফলে হঠাৎ করে লিভারের উপরে বেশি চাপ পড়ে যায় এবং লিভার তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
★ বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর রাসায়নিক রং যুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে লিভারে মারাত্মক ক্ষতি হয়। আমরা অনেকেই নিজেদের অজান্তে কৃত্রিম রং বা স্বদযুক্ত খাবার খেয়ে থাকি। এসব ক্ষতিকর খাবারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
★ ব্যায়ামের অভাবে সক্রিয়ভাবে জীবনধারণ না করার ফলে শরীরের ওজন বেড়ে যেতে পারে। যে কারণে লিভারের সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং লিভারের ব্যাপক ক্ষতি হয়।