।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
কৃষক বদিউজ্জামান মিয়া স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের ৪ সদস্যকে নিয়ে ডাল-ভাত খেয়ে ভালোই দিন পাড়ি দিচ্ছিলেন। কিন্তু আগস্ট মাস থেকে ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে বাড়ি-ভিটা ১৬ শতক জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ঠাঁই নেন আবাসনের মাঠে। সেখানে দুটি ছোট ঘর তুলে অতি কষ্টে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। এদিকে শেষ স্মৃতি মায়ের কবরটি তিন-চারদিন আগে আগ্রসী ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ছেলে বদিউজ্জামান মিয়া বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। মৃত মা জোবেদা খাতুনের কবর হিসাবে শেষ স্মৃতিটুকুও আগ্রাসী ধরলা নদী কেড়ে নেওয়ায় অনেকটা ভেঙে পড়েছেন এবং স্ত্রীসহ ৮ বছরের এক ছেলে ও ১৪ বছরের মেয়েকে নিয়ে চরম দুর্দিন পাড় করছেন তিনি। বদিউজ্জামান মিয়া ফুলবাড়ীর নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গোরক মন্ডল গ্রামের মৃত শাহজাহান আলীর ছেলে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গত এক থেকে দেড় মাস আগে চর গোরক মন্ডল এলাকায় ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে বদিউজ্জামান মিয়ার বাড়ির সামনে ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে হাফ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। সেই সাথে শতশত বিঘা ফসলি জমি ও ১৫ থেকে ২০ টি পরিবারের ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন রোধের জন্য কর্তৃপক্ষ ৬ হাজার জিও ব্যাগ দিয়েও ভাঙন ঠেকাতে পারছে না। আগ্রসী ধরলা নদীর তীব্র ভাঙন অব্যাহত থাকায় অনেকে বাড়ি-ভিটা রক্ষা করতে পারবে কি না সেই চরম দুশ্চিন্তায় খাওয়া টুকুও ছেড়ে দিয়েছেন।
দিন মজুর বদিউজ্জামান মিয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, ধরলার ভাঙনে অনেক মানুষের বাড়ি-ঘর বিলীন হয়ে গেছে। তারপরেও ওই সব মানুষের মতো আমার কষ্ট এবং দুঃখ নেই। অনেকের জমি-জমা থাকায় অন্য স্থানে নতুন করে বাড়ি-ঘর তৈরি করে থাকছেন। কিন্তু আমার কোন জমি-জমা না থাকায় আবাসনের মাঠে কোন রকমেই মানবেতর জীবন-যাপন করছি বাহে। বাড়ি-ভিটা নদী গর্ভে বিলীন হলেও আমার কোন কষ্ট হয়নি। কিন্তু আমার মায়ের শেষ স্মৃতি হিসাবে কবরটি ছিল। সেই কবরটি কেড়ে নেয় আগ্রাসী ধরলা নদী। আর কোন দিন মায়ের কবরে দোয়া ও জেয়ারত করতে পারবো না। আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে বাহে ! এমন কষ্টে থাকার পরেও তার সহযোগিতায় কেউ এগিয়ে না আসায় চরম ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি। সেই সাথে ধরলার ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তিনি তার এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।
স্থানীয় শাহআলম মিয়া জানান, ধরলা নদী ভাঙতে ভাঙতে আমার বাড়ির কাছেই এসেছে। নদী থেকে আমার বাড়ির দুরত্ব মাত্র ৭ ফিট। ভাঙন ঠেকাতে না পারলে কিছু দিনের মধ্যে আমার বাড়ি-ভিটাও গিলে খাবে আগ্রাসী ধরলা। তিনি আরও জানান, কর্তৃপক্ষ ৬ হাজার জিও ব্যাগ দিয়েছে। কিন্তু ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না। তাই তিনিসহ এলাকাবাসী দ্রুত ভাঙন রোধ করার জন্য স্থায়ী নদীর তীর রক্ষা বাঁধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোড় দাবি জানিয়েছেন।
চর গোরক মন্ডল ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আয়াজ উদ্দিন জানান, চর গোরক মন্ডল এলাকায় ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে ইতোমধ্যে ১৫ থেকে ২০ টি পরিবার ও আধা কিলোমিটার সড়কসহ শতশত ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর ৬ হাজার জিও ব্যাগ দিয়েছেন। কিন্তু ভাঙন রক্ষা করা যাচ্ছে না। তিনি আরও জানান, হুমকির মুখে ২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মুজিব কেল্লার ভবন, স্কুল ও মাদ্রাসাসহ ওই এলাকার ৮০০ পরিবার। ভাঙন রোধের জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ইসমত ত্বোহা জানান, চর গোরক মন্ডল এলাকায় ধরলা নদীর তীব্র ভাঙন ঠেকাতে ইতোমধ্যেই ৬ হাজার জিও ব্যাগ ফেলানো হয়েছে। আসলে ওই এলাকায় ভাঙন রোধ করার জন্য বড় প্রকল্প ছাড়া শুধুমাত্র জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধ করা সম্ভব না। ভাঙন রোধে স্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
//নিউজ/ফুলবাড়ী//নূর-নবী/সেপ্টেম্বর/০৫/২৩