।। লাইফস্টাইল ডেস্ক ।।
ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার কামড়ে একজন মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন। সরকারি হিসেবেই প্রতিদিন দু হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। চারদিকে ডেঙ্গু-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় জ্বর হোক বা না হোক, অনেকেই হাসপাতালে ছুটছেন পরীক্ষার জন্য। নিজেই পরীক্ষা করাচ্ছেন। পরীক্ষার ফলাফল পেয়ে কেউ কেউ বিভ্রান্ত হচ্ছেন। আবার অনেকে একাধিক জায়গায় পরীক্ষা করাচ্ছেন। তবে যদি ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে জেনে থাকা জরুরী ডেঙ্গু শনাক্তে কী ধরনের টেস্ট করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি অবশ্য বলছে প্রতি চার জনে একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তি ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা থাকে এবং মারাত্মক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন দ্রুতই হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে।
বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক সাজ্জাদ হোসেন বলছেন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য সাধারণত ডেঙ্গু এনএস১ এন্টিজেন, অ্যান্টিবডি পরীক্ষা, সিবিসি (প্লাটিলেট কাউন্টসহ) পরীক্ষা করাই যথেষ্ট হয়ে থাকে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রক্তের বেশ কিছু পরীক্ষা আছে যেগুলোর এক বা একাধিক সময় করাতে হয়। যার রিপোর্ট দেখে রোগীর অবস্থা বুঝেন চিকিৎসকরা। তবে সাধারণত যেসব পরীক্ষা করাতে হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-
ডেঙ্গু এনএস ১: এই টেস্টের মাধ্যমে কেউ ডেঙ্গু পজিটিভ কি-না সেটি দেখা যায়। ডেঙ্গু ভাইরাসে সংক্রমিত হবার শুরুর দিকেই এ পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটিকে শনাক্ত করা যায়।
ডেঙ্গু আইজিএম: এই টেস্টের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস আরও ভালোভাবে শনাক্ত করা যায়। সাধারণত জ্বর হয়ে যাওয়ার ৪/৫ অতিবাহিত হয়ে গেলে এবং এর মধ্যে কোনো পরীক্ষা না হয়ে থাকলে এই পরীক্ষার মাধ্যমে পজিটিভ কি-না সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। তাই সাধারণ ভাবে জ্বর আসার পাঁচ দিন পর এই টেস্ট করতে দেন চিকিৎসকরা।
আইজিজি: শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা আছে সেটা বোঝার জন্য চিকিৎসার এ পরীক্ষাটি দিয়ে থাকেন। আইজিজি সূচক স্বাভাবিকের চেয়ে কম মানে হলো, শরীর যথেষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরি করতে অক্ষম এবং সেক্ষেত্রে সংক্রমণে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রক্তে আইজিজি পজিটিভ থাকলে বুঝতে হবে আগে রোগীর সংক্রমণ ছিল এবং বর্তমানে সে দ্বিতীয়বারের মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।
কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট বা সিবিসি: এ টেস্টের মাধ্যমে রক্তের প্রয়োজনীয় কোষীয় উপাদানের ঘনত্বের পরিমাপের পাশাপাশি শরীরে কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কি-না তা পর্যালোচনা করা হয়। অর্থাৎ রোগী কোনো সংক্রমণের শিকার হয়েছে কি-না, রক্তকণিকা স্বাভাবিক কি-না বা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কেমন এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝার জন্য চিকিৎসকরা এ টেস্ট দিয়ে থাকেন।
প্রথ্রোমোবিন টাইম বা পিটি: এটি এমন একটি পরীক্ষা যার মাধ্যমে রক্তের তরল অংশের প্লাজমা জমাট বাঁধতে কতটা সময় নেয় তা পরিমাপ করে। ক্লটিং বা জমাট বাঁধার সিস্টেমের একটি অংশের কার্যকারিতা এ পরীক্ষায় পরিমাপ করা যায়। সাধারণত অস্বাভাবিক রক্তপাত এর কারণ নির্ধারণে কিংবা লিভার কতটা ভালো কাজ করছে সেটি জানারও জন্য চিকিৎসক অনেক সময় এ টেস্টটির পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ইন্টারন্যাশনাল নর্মালাইজড রেশিও বা আইএনআর: এটি একটি রক্ত পরীক্ষা যার মাধ্যমে জানা যায় যে রক্ত জমাট হতে কতটা সময় লাগে। মূলত পিটি পরীক্ষার মাধ্যমে কত দ্রুত রক্ত জমাট বাঁধছে জানার পর সেই ফলগুলোকেই আইএনআর হিসেবে প্রকাশ করা যায়। তখন জানা যায় যে ঠিক কতটা সময় লাগছে রক্ত জমাট বাঁধতে।
ব্লিডিং টাইম ক্লটিং টাইম বা বিটিসিটি: এ পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তের তেরটি ফ্যাক্টর নির্ণয় করা যায়। সাধারণত অপারেশনের আগে এই পরীক্ষা করা হয়। ফলে এর মাধ্যমে চিকিৎসক একটি ধারণা পান যে অপারেশনের পর রোগীর রক্ত জমাট বাঁধে কতক্ষণের মধ্যে। ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে এ টেস্ট খুব একটা দরকার হয় না। তবে চিকিৎসক যদি মনে করেন বিশেষ জটিলতায় আক্রান্ত তখন এ টেস্ট করার পরামর্শ দিতে পারেন।
সূত্রঃ বিবিসি