।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে মাথা গোঁজার ঠাই হলেও ভোগান্তির শেষ নেই সুবিধাভোগীদের। জলাবদ্ধতাসহ নানা সংকটে বিপাকে পড়েছে আশ্রয়ণ বাসিন্দারা। উপজেলার ধরণীবাড়ী ইউনিয়নের মুন্সিবাড়ি এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো আবাদি নিচু জমিতে হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন তারা।
জানা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় মুন্সিবাড়ি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে মাটি ভরাটকরণ ও রাস্তা নির্মাণের জন্য দুই দফায় ৬ লাখ ও ৪ লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শুধু লোক দেখানো কয়েক ট্রাক্টর মাটি ফেলানো হয়েছে।
সরেজমিন ধরণীবাড়ীর মুন্সিবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েক দিনের বৃষ্টির ফলে আশ্রয়ণের চারদিকে থইথই পানি। ১৫ দিনের জলাবদ্ধতায় সেই পানিতে শ্যাওলা জন্মেছে। নির্গমনের পথ না থাকায় নোংরা ও অর্ধপঁচা এসব পানি ও কাদা মাড়িয়ে চলাচল করছে আশ্রয়ণের নারী-পুরুষ ও শিশুরা। নোংরা এসব পানির মাঝেই বসবাস করছে তারা। প্রকল্পের ভিতরে চলাচলের রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছে সেখানকার ৪০টি পরিবারের প্রায় শতাধিক মানুষ।
আরও দেখা গেছে, প্রকল্প এলাকায় জনস্বাস্থ্য প্রকল্প অধিদপ্তর থেকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হলেও সেগুলোর সুবিধা ভোগ করতে পারছে না বাসিন্দারা।
২০২২-২৩ অর্থবছরে করা পানি সরবরাহের এই প্রকল্পের কোনোটির নলকূপ নেই, আবার কোনোটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি ও কোনোটির ট্যাংকিতে ফাটল থাকায় পানি ওঠানো সম্ভব হয় না। নিম্নমানের কাজ করায় ঘরের ইট খুলে গেছে, দেয়ালে ফাটল ধরেছে ও চালের কাঠ নষ্ট হয়ে গেছে।
কয়েকজন বাসিন্দার অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে এসব আশ্রয়ণকেন্দ্র গড়ে ওঠার ফলে সুফল পাচ্ছে না তারা। কিছুদিন আগে সামান্য কিছু মাটি ছিটিয়ে দেওয়া হয়। রাস্তা নির্মাণ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। ফলে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা হয়। এতে করে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের।
আশ্রয়ণের বাসিন্দা মেনেকা রাণী জানান, কিছুদিন আগে ট্রাক্টর দিয়ে কিছু মাটি ফেলানো হয়েছে। আমার এখানে কোন মাটি ফেলানো হয় নাই। এক ট্রাক্টর মাটি ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে যার কারণে আমাদের ১২টা ঘরের সামনে কোন মাটি পড়ে নাই। একটু বৃষ্টি হইলে পানি জমি থাকে। আইজ না হলেও ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে পানি। ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। বাড়িতে একটা প্রতিবন্ধী বাচ্চা। পানিতে পড়ার ভয়ে বাচ্চাকে সকালে মিশনের ওখানে রেখে আসি সন্ধ্যায় নিয়ে আসি। স্বামী ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালায়, সেটাও বারান্দা থাকি নামাতে পাই না। কামাই-রোজগার বন্ধ। ছেলে সন্তান নিয়ে কি খাই।
ষাটোর্ধ্ব মর্জিনা বেগম নামে আরেক বাসিন্দা জানান, সরকার ঘর দিছে। কিন্তু আমাদের সমস্যা দেখার কেউ নাই। বৃষ্টি হলে পানি জমে। সেই পানিতে অনেক ময়লা-আবর্জনা, পোকামাকড় পচে দুর্গন্ধ হয়। শিশু ও বয়স্ক মানুষরা পিচ্ছিলের কারণে চলাচল করতে পারে না। আমরা তো বের হইতে পারি না। খুবই কষ্টে আছি।
আরেক বাসিন্দা মমেনা বেগম জানান, বাচ্চারা স্কুলে যাওয়ার সময় জামা-কাপড়, বই-খাতা ভিজে যায়। এই পানি এখন আমাদের বড় সমস্যা। এখানে মাটি কাটা দরকার। কিন্তু মাটি ফেলে নাই। একটু বৃষ্টি হইলে পানি জমে থাকে। চলাচল করা যায় না। আমাদের আশ্রয়ণে মাটি কেটে দিলে আমাদের অনেক ভালো হতো।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিরাজুদ্দৌল্লা বলেন, মুন্সিবাড়ি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে মাটি ভরাট ও রাস্তা নির্মাণের জন্য দুই দফায় ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং প্রকল্পের বিলও উত্তোলন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শোভন রাংসা বলেন, ধরণীবাড়ীর মুন্সিবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পটি আমি সরেজমিনে দেখে আসছি। রাস্তা নির্মাণ ও পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
//নিউজ//উলিপুর//মালেক/আগস্ট/৩১/২৩