।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত নাস্তার টাকা নয়-ছয় এর অভিযোগ উঠেছে। জনপ্রতি নাস্তার জন্য ৩০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সখিনা খাতুন শিক্ষকদের দেন ২০ টাকা করে। এই ৩০ টাকার নাস্তা হাত বদল হয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে পৌঁছায় ৫ টাকায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা আর অনিয়মের ফলে এসব ক্লাব কোন কাজেই আসছে না। ফলে প্রশিক্ষণার্থীদের উপস্থিতির হারও অনেকগুণে কমে গেছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৩০ টাকার ভ্যাট ১৫% ও আয়কর ৩% হারে হয় ৪ টাকা ৪০ পয়সা। বাকি থাকে ২৪ টাকা ৬০ পয়সা, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা দেন ২০টাকা। বাকি চার টাকা ৬০ পয়সা তিনি নিজের কাছে রেখে দেন। সেই অনুপাতে উপজেলার ১৩টি ক্লাবে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৯০ জন। জনপ্রতি চার টাকা ৬০ পয়সা করে প্রতি সপ্তাহে (শুক্র-শনিবার) গিয়ে দাঁড়ায় তিন হাজার ৫৮৮টাকা, সেই হিসেবে প্রতি মাসে প্রায় ১৪ হাজার ৩৫২ টাকা আত্মসাৎ করেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সখিনা খাতুন। আবার অনেক ক্লাবে শিক্ষার্থীদের এই ২০ টাকায় ভাগ বসান অধিকাংশ ক্লাবের শিক্ষকরা।
জানা গেছে, কিশোর-কিশোরীদের সাংস্কৃতিক বিকাশ, বাল্যবিয়ে রোধ, গান-আবৃত্তি ও কারাতে শেখানোর জন্য ২০১৮ সালে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর একটি প্রকল্প চালু করে। সারাদেশের ন্যায় উলিপুরের ১৩টি ইউনিয়ন একটি পৌরসভাতেও কিশোর-কিশোরী ক্লাবের কার্যক্রম চালু হয়। এরমধ্যে শিক্ষক না থাকায় বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ক্লাবটি চালু করা সম্ভব হয়নি। দৈনিক এক হাজার টাকা (সপ্তাহে দুইদিন) সম্মানীর ভিত্তিতে বর্তমানে ২৬ জন শিক্ষক ও তিনজন জেন্ডার প্রোমোটর কর্মরত আছেন।
কাগজে কলমে প্রতি ক্লাবে ৩০ জন করে শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে উপস্থিতির হার খুবই কম। এসব ক্লাবে শুক্রবার থেকে শনিবার বিকেল তিনটা থেকে ৫টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক নানা বিষয় শেখানোর কথা। প্রতিটি ক্লাবের জন্য একটি হারমোনিয়াম, তবলা, ক্যারাম, লুডু, দাবাসহ বিভিন্ন বই থাকার কথা রয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে বেশিরভাগ ক্লাবে গিয়ে তা পাওয়া যায়নি। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সখিনা খাতুনের দায়িত্ব অবহেলা ও স্বেচ্ছাচারিতায় এসব ক্লাব বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে ইন্দারার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থিত কিশোর-কিশোরী ক্লাবে গিয়ে দেখা যায়, ৩০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাত্র ছয় জন শিক্ষার্থী রয়েছে। একজন কারাতে শিক্ষক ওই ছয় শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললেও বাহিরে ঘোরাঘুরি করছিলেন শিক্ষক আবু সাইদ বাবু ও সাবিত্রি। জানতে চাইলে বাবু নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিলেও কোন তথ্য দিতে রাজি হননি, এমনকি তার পুরো নামটাও বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথাও বলতে দেননি ওই শিক্ষক।
একটি সূত্র জানায়, আবু সাইদ বাবু নিজেকে মিডিয়ার লোক পরিচয় দিয়ে ওই ক্লাবের নাস্তার টাকা লুটপাট করে খাচ্ছেন। ৩০ জন শিক্ষার্থীর ৩০ টাকার নাস্তার বিপরীতে বাবু বিতরণ করেন ৫ টাকার বিস্কুট। এছাড়া ওই ক্লাবে হারমোনিয়াম, তবলা, ক্যারাম বোর্ড চোখে পড়েনি। বাবুর বাড়ি চিলমারী উপজেলায় হলেও প্রভাব খাটিয়ে উলিপুর উপজেলায় চাকরি নিয়েছেন তিনি।
গত ২৬ আগস্ট (শনিবার) বিকেল সাড়ে ৩টায় কাঠালবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের কাউকে পাওয়া যায়নি। আগে সাইনবোর্ড থাকলেও এখন সেটিও নেই। এ সময় স্থানীয় যুবক তাহের খন্দকার, আলামিন খন্দকার, রনি ইসলামসহ কয়েকজন জানান, শুক্র-শনিবার কিছু ছেলে-মেয়ে আসে (কোনদিন বিকেলে কোনদিন সকালে)। এসে রুমে ভেতর কিছুক্ষণ থেকেই চলে যায়। তারা কেনো আসে কেনো যায় আমরা এসবের কিছুই জানি না, আমরা তো আর ভেতরে ঢুকি না।
তবে ওই ক্লাবের আবৃত্তি শিক্ষক স্বপ্নীল মজুমদার বলেন, আমি প্রতি শুক্রবার নিয়মিত বিকেল তিনটা থেকে ৫ টা পর্যন্ত ক্লাস নিই। এর বাহিরে কিছু জানি না।
নাম প্রকাশ করার না শর্তে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের একজন শিক্ষক জানান, শুনেছি নাস্তার জন্য ৩০ টাকা বরাদ্দ। কিন্তু মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ভ্যাট কেটে নিয়ে ২০ টাকা করে দেন। বর্তমান জিনিসপত্রের দাম বেশি, ২০ টাকায় কিছু হয় না।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সখিনা খাতুন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নাস্তার বরাদ্দ ৩০ টাকা হলেও ভ্যাট ও আয়কর বাদে ২৫-২৬ টাকা করে দেওয়া হয়। তবে মাঠ পর্যায়ে খোঁজ খবর নিব।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোভন রাংসা বলেন, আসলে বেতন কম হওয়ায় শিক্ষকদের ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগের বিষয়টি মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
//নিউজ//উলিপুর//মালেক/আগস্ট/৩০/২৩