।। জেলা প্রতিনিধি ।।
উজানের ঢল আর বৃষ্টিপাতে ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রসহ প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় তীব্র স্রোতে রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের বুড়িরহাটে তিস্তার বাম তীরের একটি স্পার বাঁধের একাধিক স্থানে ধস দেখা দিয়েছে। বাঁধের আরসিসি অংশের প্রান্তভাগ হেলে গিয়ে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে তিস্তা পাড়ের শত শত পরিবার। বাঁধে ধস দেখা দেওয়ায় এর উজান ও ভাটির দিকের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
শনিবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, তিস্তার স্রোতের প্রবল ঘূর্ণনে বাঁধের মধ্যবর্তী মাটির অংশ ধসে বিশালাকার গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধটির পশ্চিম প্রান্তের আরসিসি অংশের শীর্ষভাগ তীব্র স্রোতে দক্ষিণ দিকে সামান্য হেলে পড়েছে। বাঁধটি রক্ষায় এর উভয় পাশে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ও টিউব ফেলছেন পাউবোর কর্মীরা। ঝুঁকি এড়াতে বাঁধের প্রবেশমুখে বাঁশের খুঁটি দিয়ে জনসাধারণের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করেছে।
বাঁধের ভাটিতে বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, ‘এই বাঁধ দিয়া আমাদের অনেক উপকার হইছে। এটা না থাকলে আমরা এই মহল্লায় থাকতে পারবো না। আমরা খুব চিন্তায় আছি। এই বাঁধ না থাকলে আমাদের ঘর-বাড়ি নিয়া এখান থাকি চলি যাওয়া লাগবে। কিন্তু আমরা কোথায় যাবো? সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, এটা রক্ষা করার জন্য যেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার সেভাবে নেওয়া হউক। ’
আরেক বাসিন্দা আকবর আলী বলেন, ‘যে অবস্থা তাতে আমরা খুব চিন্তায় আছি। বসতি আর প্রতিষ্ঠানগুলা হুমকিতে আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়া ছেলে মেয়েরা চিন্তায় আছে। পশ্চিম দিকে তাকাইলে খালি পানি আর পানি।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘স্পার বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমরা এটি রক্ষায় জিও ব্যাগ ও টিউব ডাম্পিং করছি। প্রয়োজনীয় জিও ব্যাগ মজুদ করা হয়েছে। বাঁধটি ঝুঁকিমুক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছি।’
এদিকে উজানের ঢলে জেলার নদ-নদী গুলোতে দ্রুত গতিতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে নদ-নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের কিছু কিছু ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চলের আমন ক্ষেত। এ অবস্থায় জেলায় আরেকটি বন্যা পরিস্থিতির উপক্রম দেখা দিয়েছে।
পাউবোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি ৩৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া এবং চিলমারী পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার করে বৃদ্ধি পেয়ে যথাক্রমে বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ও ৫১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বাড়ছে ধরলার পানিও।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে পাউবো জানায়, অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে আগস্টের শেষ সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্রের পানিও বিপৎসীমায় পৌঁছাতে পারে। এর ফলে উলিপুরে সাহেবের আলগা, বেগমগঞ্জ এবং চিলমারীর নয়ারহাট ইউনিয়নের চর ও নিম্নাঞ্চলসমূহ প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসময় এসব অঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
সম্ভাব্য বন্যার খবরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুতি রেখেছি। খাদ্য সহায়তা, উদ্ধার নৌকা ও আশ্রয়কেন্দ্রসহ প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
//নিউজ/কুড়িগ্রাম//চন্দন/আগস্ট/২৭/২৩