।। নিউজ ডেস্ক ।।
নাগেশ্বরীতে গ্রীন ইকো নামের পরিবেশবাদী সংগঠন ‘গ্রীন পেন’ নামক কাগজের কলম তৈরি করে সাড়া ফেলেছে। ক্ষতিকর প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে এ কলম কার্যকর। পরিবেশ বান্ধব কাগজের তৈরি এ কলমের কালি ফুরালে তা মাটিতে পুতে রাখলে সেখান থেকে জন্ম নেয় গাছের সবুজ চারা। জেলার সর্বত্র এখন এই গ্রীন পেন বা সবুজ কলম নিয়ে চলছে আলোচনা।
প্লাস্টিকের তৈরি কলমের কালি ফুরালে তা প্লাস্টিক বর্জ্য হিসেবে পরিবেশের নানা ক্ষতি করে। তাই জলবায়ুর জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে এই পরিবেশ বান্ধব গ্রীন পেন যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। সরকারি সহযোগিতা পেলে বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন প্রতিষ্ঠানটি। কাগজের তৈরি কলমটি লেখার পাশাপাশি সবুজ বনায়নে বেশ ভূমিকা পালন করবে বলেও জানান প্রতিষ্ঠানের পরিচালক সঞ্জয় চৌধুরী।
নাগেশ্বরীর কালীগঞ্জ ইউনিয়নের ভবানন্দকুটির গ্রামের গনেশ চৌধুরীর ছেলে সঞ্জয় চৌধুরী রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ছাত্র। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত বলে ভাবেন পরিবেশ রক্ষা নিয়ে। তেমনই ভাবনা থেকে উদ্যোগ নেন পরিবেশ বান্ধব কাগজের কলম তৈরির। কালির শীষ কাগজে মুড়ে কলম তৈরি করা হয়। আর কলমের পেছন দিকে বিভিন্ন সবজি বীজ গেঁথে দেওয়া থাকে কৌশলে। প্রথমে ছোটভাই সুমন চৌধুরীসহ দুই ভাই মিলে এ কাজ শুরু করলেও এখন তার প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৮-২০ জন নারী কাজ করেন। প্রতিটি কলম ৬টাকা দরে স্থানীয় আরেক সংগঠন তটিনী পাইকারি কিনে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে। ক্রমান্বয়ে এ কলমের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে।
কারখানায় কাজ করা দশম শ্রেণির ছাত্রী আমিনা খাতুন বলেন, তাদের দরিদ্র পরিবারের পক্ষে লেখাপড়ার খরচ যোগানো কষ্টকর। তাই সে লেখাপড়ার পাশাপাশি গ্রীন ইকো কারখানায় কলম তৈরির কাজ করে এবং তার মতো গ্রামের আরও অনেক নারী কাগজ দিয়ে কলম তৈরি করেন। এ কাজ থেকে বাড়তি আয় করে সে নিজে চলতে পারে এবং সংসারে কিছু টাকা দিতে পারে।
কাগজের কলম কারখানায় কর্মরত ইয়াসমিন বলেন, গ্রীন ইকো সংগঠনটি গ্রামে আমার মত অনেক বেকার নারীদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে। সাংসারিক কাজ শেষে অলস সময় নষ্ট না করে আমরা কলম তৈরি করে কিছু আয় করে সংসারের কাজে লাগাই। এতে আমার পরিবার এগিয়ে যাচ্ছে। কারখানাটি বড় হলে গ্রামের অনেক নারী কাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারবে।
গ্রীন ইকো এর প্রতিষ্ঠাতা সঞ্জীব চৌধুরী বলেন, গ্রীন পেন বা সবুজ কলমটি ৯৫% পরিবেশ বান্ধব। কাগজের তৈরি কলম করার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো হুমকির মুখে থাকা জলবায়ুর পরিবর্তনে কিছুটা ভূমিকা রাখা। বাজারের প্লাস্টিকের তৈরি কলম পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই কাগজের তৈরি কলমের পেছনের অংশে বিভিন্ন জাতের গাছের বীজ এঁটে দেওয়া থাকে। কালি শেষ হলে সেই কলমটি পুতে রাখলে সেখান থেকে বেগুন, শাক-সবজির সবুজ গাছের চারা জন্মায়। সেসব সবুজ গাছের ফল-পাতা কাজে লাগে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এর কুড়িগ্রাম জেলার উপ ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গ্রীন ইকো সংগঠনটি পরিবেশ বান্ধব কাগজ দিয়ে কলম তৈরি করছে। জলবায়ু বিপর্যয়ের মুহূর্তে পরিবেশ বান্ধব কাজ হিসেবে এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। সংগঠনটিতে কুড়িগ্রাম বিসিকের কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হলে তা করা হবে।