।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
সারি সারি পাকা ঘর, রাস্তার ধারে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। দেখলেই মনে হয় এটি একটি সাজানো গোছানো গুচ্ছ গ্রাম। এই পল্লীটি গড়ে উঠেছে অবহেলিত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হরিজনদের জন্য। প্রশাসনের সহযোগীতায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারে তারা এখন বুনছে সুখের স্বপ্ন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হরিজনের ৩০ পরিবারের প্রায় দেড় শতাধিক মানুষের ঠিকানা হলো শান্তির নীড়ে।
জানা গেছে, চিলমারী উপজেলার হরিজন গোষ্ঠী যারা সকলের কাছে সুইপার হিসাবে পরিচিত, এদের ছিল না নিদিষ্ট কোন ঘর, ছিল না নিদিষ্ট কোন জায়গা। উপজেলা বাজার, রমনা রেল স্টেশন, উপজেলা বিভিন্ন পরিত্যাক্ত ঘরসহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল এদের বাস। পরিত্যাক্ত কোনো ঘরে এক সাথে স্বামী, স্ত্রী, কন্যা, ছেলে, ছেলের বউসহ একসাথে থাকতে হতো। নিদিষ্ট কোনো জয়গা না থাকায় জীবন ছিল যাযাবরের মতো। বিষয়টি দৃষ্টিতে আসলে উদ্যোগ গ্রহণ করেন প্রশাসন।
অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার জায়গাসহ ঘর মেলে তাদের ভাগ্যে। উপজেলা সদরের প্রাণ কেন্দ্রে বাজারের পাশেই এক একর জায়গা ক্রয় করে ৩০টি পরিবারের প্রায় দেড়শতাধিক মানুষের জন্য পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়। গড়ে তোলা হয় হরিজন পল্লী। প্রবেশের রাস্তাসহ চারদিকে রোপন করা হয় বিভিন্ন প্রজাতির চারা গাছ।
এছাড়াও তাদের দাবির প্রেক্ষিতে পাশেই নেয়া হয় শ্মশানের জন্য জায়গা। চিলমারী উপজেলার সাবেক নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমানের অক্লান্ত পরিশ্রম ও পরিকল্পনায় পল্লীটি যেভাবে সাজানো হয়েছে, যা নজর কেড়েছে এলাকাবাসীর। ঘরগুলো এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে প্রতিটি পরিবারের ঘরের সামনে রাখা হয়েছে বেশ বড় উঠান।
ঘরগুলো পরিকল্পনা মোতাবেক নির্মাণ এবং চারদিকে রাস্তার সাথে গাছের চারা রোপণ করায় দেখলেই মনে হয় একটি মনোরম পরিবেশের পরিপাটি সাজানো গোছানো গ্রাম। এমন মন্তব্য করেন এলাকার ফুলমিয়াসহ অনেকে। তারা আরও বলেন, শুধু তাই নয় রাতের আঁধারে বৈদ্যুতিক বাতির আলোতে ঝিলমিল করতে দেখা যায় পল্লীটিকে। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে আরও সুন্দর হয়ে উঠবে বলে আশা করছেন সকলেই।
মিস্ত্রি সিতিশ চন্দ্র বলেন, ঘরগুলো তৈরি করতে যা যা নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে এবং যে রকম মজবুত করা হয়েছে, তা সাধারণ কেউ নিজের বাড়িতেও করে না।
বসবাসরত পারুল জানান, হামার ছিল না নিজস্ব জায়গা, ছিল না থাকার ঘর, ছাওয়া পোওয়া (সন্তান) নিয়ে কষ্টে ছিলাম, সরকারের দেওয়া ঘর পেয়ে একটা ঠিকানা পাইছি।
সুমি, রুমাসহ বেশ কয়েকজন হরিজন সম্প্রদায়ের মহিলারা বলেন, মানুষজন আমাদের একটু অন্য নজরে দেখে, যেন ঘৃণা করে, থাকার মতো বাড়িঘর না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে ভাসমান জীবন যাপন করতাম, প্রধানমন্ত্রীর উপহার জমিসহ ঘর পাইছি এখন আমরা যেন সুখ পাইছি।
নেমু লাল বলেন, যদিও খাওয়া তেমন কষ্ট ছিলনা, কিন্তু থাকার কষ্ট ছিল, ৮/১০ মিলে ছোট একটা ঘরে বা অন্যের দোকানের বারান্দায় রাত কাটতো, এখন আর সেই কষ্ট নাই, দিন শেষে হলেও একটা নিজস্ব থাকায় স্থান করে দিয়েছে সরকার। তিনি আরো বলেন, ইউএনও স্যার (সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমান) আমাদের বারবার খোঁজ খবর নিতেন, ঘর গুলো যেন ভালোভাবে হয় সব সময় দেখতে আসতেন, আমাদের সাথে এতো ভালো আচরণ করতেন, আমাদের মাঝে মাঝে তা স্বপ্ন মনে হতো।
মনি লাল বলেন, স্বপ্নেরও ভাবিনি এতো সুন্দর ২টি ঘর, বারান্দা, রান্না ঘর, ঘরের সাথে বাথরুম, পানির ব্যবস্থা সাথে বিদ্যুতের ব্যবস্থা, আছে ঘরের সামনে উঠান।
এমন উদ্যোগ নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী কে ধন্যবাদ জানিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল অরীফ বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, হরিজনদের জন্য একটি হরিজন পল্লী গড়ে তোলা হয়েছে, এতে থাকবে খেলার মাঠ, শিশুদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা, এটি একটি মডেল হিসাবে গড়ে তোলা হবে।
//নিউজ/চিলমারী//সোহেল/আগস্ট/০৭/২৩