।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে শিকলে বাঁধা আসাদুল হক (৩৬) ও হাবিবুর রহমান (১৪) দুর্বিষহ জীবনযাপন করে আসছে। অসহায় পরিবার দুটি তাদের নিয়ে অনেকটা বিপাকে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার (০৩ আগস্ট) সরেজমিনে তবকপুর ও ধামশ্রেনী ইউনিয়নে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
এক সময় ঢাকায় চাকরি করা প্রাণোচ্ছল সৌখিন আসাদুল হক (৩৬) এই বয়সে স্ত্রী-সন্তানদের সাথে খুনশুটি আর ভালোবাসায় জীবন কাটানোর কথা থাকলেও তার জীবন চলছে মাসের পর মাস শিকলে বাধাঁ অবস্থায়। শিকল বাঁধা দুর্বিষহ জীবন থেকে মুক্তি পেতে অবুঝ শিশুর মত ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সারাক্ষণ পথ চলা মানুষের দিকে।
আসাদুল হকের বাড়ি তবকপুর ইউনিয়নের সাদুল্ল্যা সরকার পাড়া এলাকায়। তার বাবার নাম দেলাবর হোসেন। পেশায় চা বিক্রেতা। সহায়সম্বল বলতে রয়েছে ৭ শতক বসতভিটা। বাবার দারিদ্র্যতার কারণে ছেলের সঠিক চিকিৎসা করাতে না পারায় অসুস্থ জীবনযাপন করছে আসাদুল। ছেলের চিকিৎসার চিন্তা এখন বাবার কাছে বিলাসিতার সমান। তাই একমাত্র ছেলের এমন করুণ পরিণতিতে হতাশ তিনি।
জানা গেছে, দেলাবর হোসেনের চার ছেলে মেয়ের মধ্যে ছোটবেলায় এক ছেলে ও এক মেয়ে মারা যায়। বর্তমানে আসাদুল ও এক মেয়ে রয়েছে তার। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। মেয়ে স্বামীর ঘরে সংসার করছে। একমাত্র ছেলে আসাদুল দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে ঢাকায় গার্মেন্টসে (পোষাক কারখানায়) চাকরি করতো। চাকরিরত অবস্থায় তাকে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের কিছুদিন পর তার স্ত্রী বাবার বাড়িতে চলে গিয়ে তালাকনামা পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু আসাদুল সেটা কিছুতেই মানতে পারেনি। তখন থেকেই কিছুটা মাথার সমস্যা দেখা দেয়। তারপর দুই দুইবার বিয়ে দিলেও কোন স্ত্রী আর আসাদুলের সংসার করেনি। এরমধ্যে আসাদুলের মা মারা যায়। এরপর থেকেই পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে সে। সুযোগ পেলেই বাড়িঘর ভাঙচুর, প্রতিবেশীদের জিনিসপত্র ক্ষতি করে, মাঝে মাঝে থাকে নিরুদ্দেশ।
দেলাবর হোসেন জানান, ‘স্ত্রী মারা যাওয়ার প্রায় ১০বছর হয়। সংসারে বাপ-ছেলে। ছোট চায়ের দোকান দিয়ে দিনে ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মতো আয় হয়। তা দিয়েই কোন রকমভাবে বাপ-ছেলে খাই। মানুষের কাছে ধারদেনা করে রংপুরে চিকিৎসা করাইছি। ডাক্তার কইছে (বলছে) ভালো হইবে (হবে)। কিন্তু আমার ছেলে তো ভালো হয় না।’
তিনি আরো জানান, এর আগে কয়েকবার পায়ে শিকল লাগালেও মাঝে মধ্যে খুলে দেওয়া হতো। কিন্তু প্রায় গত দুই বছর তার পায়ের শিকল লাগানো রয়েছে। আগের থেকে পাগলামীর মাত্রাটা এখন আরো বেড়ে গেছে।
এদিকে, প্রায় চার বছর ধরে শিকলে আটকে আছে হাবিবুর রহমানের জীবন (১৪)। হাবিবুর উলিপুরের ধামশেনী ইউনিয়নের পোদ্দার পাড়া গ্রামের দিনমজুর আবুদ্দির ছেলে। ৬ বছর আগে তার মা জোবেদা বেগম মারা যান। এরপর বাবা আবুদ্দি দ্বিতীয় বিয়ে করলে সৎ মায়ের সঙ্গে থাকে হাবিবুর। প্রতিদিন কাজে বের হওয়ার সময় হাবিবুরকে রাস্তার পাশে বাশ ঝাড়ে শিকলে বেঁধে রেখে যান বাবা আবুদ্দি। রোদ বৃষ্টি মাথার উপর দিয়ে গেলেও তাকে যেন দেখার কেউ নেই।
হাবিবুরের স্বজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১০ বছর বয়সে সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে মানুষকে মারধর, বিদ্যুতের খুঁটিতে ওঠাসহ নানা অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। মাঝে মধ্যে সবার অজান্তে দু চারদিন করে নিরুদ্দেশ ছিল। পরে নিরুপায় হয়ে পায়ে শিকল পরিয়ে রাস্তার ধারে বাঁশ ঝাড়ে বেঁধে রাখা হয় তাকে। গরীব বাবার পক্ষে ভালো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না হলেও স্থানীয় অনেক কবিরাজের ওষুধ খাইয়েছেন। তবুও হাবিবুরকে সুস্থ করা সম্ভব হয়নি বলেও জানান তারা।
//নিউজ//উলিপুর//মালেক/আগস্ট/০৪/২৩