জরীফ উদ্দীন, উলিপুরঃ
বাংলাদেশের মাথায় দারিদ্র্য (মানচিত্রের উপরের দিকের কথা অর্থাৎ কুড়িগ্রামের কথা বলছি)। কুড়িগ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মানতে নারাজ। মানবেই বা কি করে তারা বাবা মায়ের আলালের ঘরের দুলাল হয়ে জন্মগ্রহণ করে কি না! দারিদ্র্য বুঝে যে ছেলেটি প্রাইমারী স্কুলে না পড়ে মানুষের বাড়ি কিংবা দোকানে কাজ করে। মাধ্যমিক গণ্ডি না পেরুতেই রিক্সা নিয়ে বাহির হয়, ভুয়া এইট পাশ সার্টিফিকেট দিয়ে গার্মেন্টস এর চাকরি করে। দারিদ্র্য তারাই বুঝে যারা বাসে দুই টাকার জন্য দাম করে, ট্রেনে বিনা টিকেটে যায় এদিক থেকে ওদিকে। যারা তিন বেলা ভাত খেতে পারে না। যারা মাছ, মাংস, দুধ খাওয়ার স্বপ্ন দেখে। যারা চায়ের দোকানের চা খায় না সংসারের কথা চিন্তা করে। তারাই বুঝে দারিদ্র্য কি।
দারিদ্র্য কেন কুড়িগ্রামে? সে কথা আর নতুন করে না বললে নয়। পূর্বেকার কথা বলি একাত্তর উত্তাল সময়ে নুরুল ইসলামের লেখা ও হাসেম খানের আঁকা প্রকাশ হয় সোনার বাঙলা শ্মশান কেন? আমরা সেই জানি সেই পোস্টারে কি আছে আর তৎকালীন এই বাংলার কপালে কি ঘটেছিল। সেই কারণগুলো খতিয়ে দেখলে অন্ধও ভালো বলতে পারবে সেই সে কালের সোনার বাংলা (পূর্ববাংলার) রূপ (শ্মশান) যেন এ কালের কুড়িগ্রাম। পোস্টার দুটি দেখলে পরিষ্কার বুঝা যায়। এখন কি বলবেন আলালের ঘরের দুলালেরা।
আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলতে হয়। আমরা আজও মুক্তি পাইনি। মুক্তি পায়নি দুঃখিনি বাংলাদেশ। যখন বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে আখ্যায়িত তখন কুড়িগ্রামের কোন পরিবারে আলু ভর্তা ভাত জোটে না। সত্যি বলতে কি শরীরের এক অংশে ব্যথা রেখে অন্য অংশ আনন্দে থাকতে পারে কি ভাবে? কুড়িগ্রামে দারিদ্র্য রেখে সোনার বাংলা কেমনে মধ্যম আয়ের দেশ হয়? আজ প্রশ্ন সুধীজনের। ইতিহাস থেকে পাওয়া যায়, আমরা এক কালে পাল, সেন, সুলতানী, বৃটিশ, পাকিস্তানি, সর্বশেষ যুদ্ধের পর কুড়িগ্রামের সমাজসেবীদের এই কুড়িগ্রাম দেখলাম। তারাই আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে। ঢাকায় তাদের বিলাসবহুল বাড়ি হয়েছে, গাড়ি হয়েছে, মস্ত কলকারখানা হয়েছে। অথচ কেউ চায়নি কুড়িগ্রামের উন্নয়ন।
আমরা আজ কুড়িগ্রামের উন্নয়ন চাই। উন্নয়ন চাই বাংলাদেশের বিছিন্ন উত্তরাঞ্চলের। দেখতে চাই যা পূর্বে হয়নি তা এখন হবে। আমরা দেখতে পারছি কুড়িগ্রামের বিভিন্ন সংগঠন কুড়িগ্রামের উন্নয়নের কথা চিন্তা করছে। নাহিদ হাসান নলেজ ভাই, তুহিন ওয়াদুদ স্যার সহ অনেকেই লিখে যাচ্ছে অবিরাম কুড়িগ্রামের কথা। তা ছাড়া রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির ১০ দাবীর কথা না বললে নয়। দাবিসমূহঃ
১. ঢাকা-কুড়িগ্রাম-চিলমারী রুটে ‘ভাওয়াইয়া এক্সপ্রেস’ চাই।
২. শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠা কর।
৩. চিলমারী টু বাহাদুরাবাদ ও রৌমারী ফেরী সংযোগ পুনরায় চালু কর।
৪. সোনাহাট স্থলবন্দর চালু করতে দুধকুমার নদ ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত ড্রেজিং কর।
৫. কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপন কর।
৬. একটি পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা দ্রুত কর।
৭. ব্রহ্মপুত্রের চরে প্রাপ্ত খনিজ সম্পদ রপ্তানির নামে পাচার নয়, শিল্প স্থাপন কর।
৮. তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের মোহনায় পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ কর।
৯. চিলমারী-সুন্দরগঞ্জ তিস্তা সেতুর নকশাঁয় রেলপথ যুক্ত কর।
১০. চরাঞ্চলের বালু ভিত্তিক কাঁচ শিল্প প্রতিষ্ঠা কর।
এবং বাঘাড় মাছের অভয়ারণ্য ও চরভিত্তিক কালাই এর সুষ্ঠু বাজার নিশ্চিত কর।
এই দাবীগুলো শুধু গণকমিটির নয় আমাদের কুড়িগ্রামবাসীর।
তাই আসুন এই দাবী আদায়ে আমরা সোচ্চার হই। দাবী না আদায় করা পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাব। একদিন আমাদের কুড়িগ্রাম মডেল হিসাবে দাড়াবে বাংলার বুকে। কারো মুখে শুনতে হবে না বন্দরনগরী কুড়িগ্রাম জেলায় মঙ্গা কেন? মঙ্গা দেখতে যাবে সবাই যাদুঘরে।
লেখকঃ
জরীফ উদ্দীন
তথ্য ও গ্রন্থাগার সম্পাদক, রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি, কুড়িগ্রাম।
01717-7074670