।। নিউজ ডেস্ক ।।
চিলমারীতে চাকচিক্যময় ও মনোরম পরিবেশে স্কুল ভবন হলেও রাস্তা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা বা ভেলায় স্কুলে যেতে হয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। দ্বিতল ভবনটিতে যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় সারা বছর নানা ভোগান্তিতে থাকলেও বর্ষাকালে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা কলা গাছের ভেলা কিংবা ছোট ডিঙ্গি নৌকা। এসব ভোগান্তির কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই থাকে অনুপস্থিত।
সরজমিন ঘুরে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে ৩৫ শতক জমির ওপর ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত এলাকায় চিলমারীর পূর্ব চর পাত্রখাতা প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। এরপর ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। প্রায় ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে নির্মিত হয় দুই তলা বিশিষ্ট একটি ভবন। বিদ্যালয়ে ছয় জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ১২৪ জন। চর পাত্রখাতা গ্রামটিতে প্রবেশের জন্য সেতু ও পাকা সড়ক থাকলেও ওই বিদ্যালয়ে যাওয়ার কোন পথ নেই। শুষ্ক মৌসুমে অন্যের জমির আল কিংবা ঝোঁপঝাড় দিয়ে চলাচল করা গেলেও ভোগান্তি বাড়ে বর্ষা মৌসুমে। এখন নালার পানিতে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানকে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে এসব শিক্ষার্থীর লেখাপড়া ব্যাহত হবার পাশাপাশি ঝরে পড়ছে অনেক শিক্ষার্থী ।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু ছালেহ্ সরকারের খামখেয়ালিপনা ও সঠিক তদারকি না থাকায় দীর্ঘদিনেও স্কুলটিতে যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভরসা পান না অভিভাবকরা। স্কুল আসার জন্য একটি রাস্তা ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে করোনার সময় স্কুল বন্ধ থাকার সুযোগে এলাকার এক প্রভাবশালী তার বাড়ির সীমানা প্রাচীর দিয়েছেন। এতে করে স্কুল যাওয়ার পথটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এই ঘটনা স্থানীয় প্রশাসন অবগত থাকলেও কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না।
শিক্ষার্থীরা জানায়, বন্যার সময় স্কুলে আসতে খুবই কষ্ট হয়। নৌকা বা ভেলায় চরে স্কুলে আসি। কখনও কখনও বইখাতা ভিজে যায়। তাছাড়া নদীতে পড়ে যাওয়ার ভয়ও থাকে। মানুষের বাড়ির ভেতর দিয়ে আসলে গালাগালি করে, আসতে দেয় না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিয়াজ বিন রানু বলেন, শুষ্ক মৌসুমে বিভিন্নভাবে স্কুলে আসা যায়। কিন্তু ভোগান্তিতে পড়তে হয় বর্ষা মৌসুমে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অবগত করা হলেও কোন প্রতিকার পাইনি। দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরা বিপাকে পড়েছেন। এ অবস্থায় দিন দিন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে ।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মর্জিনা বেগম বলেন, যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় শিক্ষার্থীরা অন্য স্কুলে চলে যাচ্ছে। দ্রুত রাস্তা নির্মাণ করা না হলে বাকি শিক্ষার্থীদের আটকানো যাবে না। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ঝুঁঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে পাঠাতে ইচ্ছুক নয়।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু ছালেহ্ সরকার বলেন, স্কুলে যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা করার জন্য আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি। তবে শুকনো মৌসুমে রমনা মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তাটি তৈরি করে দেবার আশ্বাস দিয়েছেন।