।। নিউজ ডেস্ক ।।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমী কুড়িগ্রাম অফিস প্রধান জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা এস.এম. এ বকর এর বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার এমন কর্মকান্ডের মাধ্যমে অর্থ লুটপাটের ঘটনায় ব্যহত হচ্ছে শিশুদের মানসিক বিকাশের সরকারি প্রচেষ্টা। জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অফিসের অবস্থান হলেও দেখার যেন কেউ নেই।
এস.এম. এ বকর জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর ধরে কুড়িগ্রামে কর্মরত আছেন। অফিসটিতে শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা, গ্রন্থাগারিক, অফিস সহকারী, অফিস সহায়ক ও নৈশ প্রহরীসহ এই অফিসে ৫টি পদের বিপরীতে তিনিসহ অফিস সহকারী ও অফিস সহায়ক মিলে ৩পদে কর্মরত ৩জন।
সরকারি বিভিন্ন দিবসের উদযাপন, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা পর্ব এবং মাসিক বেতনের সময় ছাড়া তাকে কুড়িগ্রামে দেখা যায় না। অধিকাংশ সময়ে মাসিক জেলা সমন্বয় কমিটির মিটিং এ জেলার অন্যসব কর্মকর্তা থাকলেও এতে তিনি উপস্থিত থাকেন না। মাসের যে ক’দিন কুড়িগ্রামে থাকেন তখন রাত্রিযাপন করেন শিশু একাডেমি অফিসেরই একটি কক্ষে। যদিও কক্ষটি গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহার হবার কথা থাকলেও ব্যবহার হচ্ছে স্টোর রুম আর থাকার কক্ষ হিসেবে। যে ক’দিন এই কর্মকর্তা অফিস করেন সে ক’দিন তার সাথে থাকেন কর্মচারী অফিস সহকারী রাকিবুল। এ কারণে শিশু গ্রন্থাগারের বড় একটি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কুড়িগ্রামের শিশুরা।
কুড়িগ্রাম শিশু একাডেমিতে সংগীত, চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও তবলাসহ মোট ৪টি বিভাগে শিক্ষার্থী থাকলেও নৃত্য বিষয়ে দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ বন্ধ রেখেছেন। নিম্নমানের প্রশিক্ষক দিয়ে কম সম্মানিতে সংগীত, আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কন বিভাগ চালু রেখেছেন। অথচ প্রশিক্ষকের সম্মানির টাকা তুলছেন তিনি সরকারি নিয়মে উচ্চ হারে।
প্রতিবছর সকল বিভাগের প্রশিক্ষণার্থী শিশুদের নিয়ে বনভোজনের আয়োজন করার কথা থাকলেও কোনো রকমে ধরলা ব্রিজ পাড় ঘুরে নিয়ে এসে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করে পুরো টাকাই লোপাট করেন এই কর্মকর্তা। আর এ বছর সেটুকুও করেন নি তিনি।
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা (৪-৫ বছরের দু:স্থ শিশুদের জন্য) প্রকল্প কাগজে কলমে চালু রয়েছে। অথচ ২গ্রুপে ২১জন করে শিশুর তালিকার বিপরীতে শিক্ষার্থী রয়েছে ৫জন ও ছোট গ্রুপে রয়েছে ৬জন শিশু। অথচ প্রকল্পের ২ শিক্ষক বেতন পাচ্ছেন প্রতিমাসে ৩,৫০০ টাকা করে।
শিশু একাডেমির পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে প্রতিযোগিতার সার্টিফিকেটে জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর থাকা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু তিনি শুধু কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত সার্টিফিকেট প্রদান করেন। মূলতঃ এসবের বাজেট তিনি প্রকাশ করতে চান না।
পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশুর অভিভাবক পুরাতন হাসপাতাল পাড়ার এসএম হাবিবুর রহমান জানান, তার মেয়ে আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কনসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ভাল ফলাফল করলেও বারবার জুটেছে একই বই। তাও আবার বইগুলো ছেঁড়া-ফাটা আবার কোনোটি ইঁদুর-তেলাপোকা খাওয়া বই।
কুড়িগ্রাম শহরের মন্ডলপাড়ার অভিভাবক আঞ্জুমান আরা বলেন, আমার মেয়ে প্রতিযোগিতায় ভালো করলেও তার রেজাল্ট খারাপ দিয়ে অন্যদেরকে ১ম ও ২য় করেছেন। পুরস্কার অন্য ধরণের কিছু না দিয়ে একই বই পুরস্কার হিসেবে দিয়ে যাচ্ছে শিশু একাডেমি। প্রশিক্ষণকালে অভিভাবকদের আপ্যায়ন দূরে থাকুক ভালোভাবে বসার স্থান থাকে না।
নাগেশ্বরী উপজেলার আজিজুর রহমান জানান, শিশু একাডেমিতে বিষয়ভিক্তিক ন্যুনতম জ্ঞান নেই এমন ব্যক্তিদেরকে তিনি মনগড়া বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেন। এমনকি তার অফিস সহকারী হরহামেশাই বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। যাকে তাকে ফার্স্ট সেকেন্ড করে দেন এই কর্মকর্তা। তার কারণে ব্যহত হচ্ছে শিশুদের মানসিক বিকাশের সরকারি প্রচেষ্টা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি পদস্থ একাধিক কর্মকর্তার মতে তিনি শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা হলেও মোটেও নন শিশু বান্ধব। শিশুদের নিয়ে বা শিশুদের আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে শত আমন্ত্রণেও পাওয়া যায় না। সেটা কুড়িগ্রামে অবস্থান করলেও তিনি শিশু সংশ্লিষ্ট এসব অনুষ্ঠানে যেতে নারাজ।
এ বিষয়ে জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা এস.এম. এ বকর বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় পাওনা ছুটি থেকে ছুটি ভোগ করেছি। ছুটি বিষয়ে সঠিকভাবে জেলা প্রশাসককে অবহিত করতে পারি নি। তবে কোনো কোনো কাজে ত্রুটি থাকতে পারে। পরবর্তীতে সেসব বিষয়ে নজর দিবো।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা ছুটি নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তার বিভিন্ন অনিয়মের কথা জানলাম। এসব বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক আনজীর লিটন মোবাইল ফোনে জানান, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি কুড়িগ্রাম অফিসের বিভিন্ন বিষয়ে জানতে পারলাম। এগুলো বিষয়ে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।