।। নিউজ ডেস্ক ।।
কুড়িগ্রামে সবকটি নদ-নদীর পানি কিছুটা কমলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। শনিবার (১৫ জুলাই) দুধকুমার নদীর পানি ৩৬ সে.মিটার ও ধরলা নদীর পানি ১৯ সে.মিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হ্রাস পেয়েছে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। বন্যায় জেলার ৪৫টি ইউনিয়নের ১৮৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় একলক্ষ মানুষ। এসব গ্রামে ৪/৫দিন ধরে বন্যায় কারণো মানুষজন মানবেতর জীবন-যাপন করছে। বাড়ীর ভিতরে পানি ওঠায় তারা ঠিকমতো রান্নাবান্না করতে পারছে না। তীব্র জ্বালানি সংকট। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যসংকট। স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছে বন্যাকবলিত এসব পরিবার। জরুরী ভিত্তিতে এসব মানুষের প্রয়োজন শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরো কয়েকদিন স্থায়ী হবে। এরপর পানি নেমে যাবে। দুধকুমার এবং ধরলা নদীর পানি এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা পাঁচগাছি ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের শাহেদ আলী ও আহাদ আলী জানান, বন্যার পানিতে গত ৫দিন থেকে তাদের ঘরবাড়িতে পানি অবস্থান করছে। ধানের বীজতলা, পটল ক্ষেত এবং সবজি ক্ষেত এখন বুক সমান পানির নীচে। এ গ্রামে চলাচলের একমাত্র রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এখন নৌকা। কিন্তু সবার নৌকা সুবিধা না থাকায় আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছে।
হযরত আলী বলেন, পানি ঘরে ঢুকে পড়ায় খাট তলিয়েগেছে। রান্নার চুলা পানির নীচে। ঘরে চাল থাকলেও আগুন জ¦ালানোর কোন উপায় নেই। ফলে উপস করতে হচ্ছে। প্রয়োজ শুকনো খাবার। কিন্তু ঘর থেকে বাইরে বের হওয়ার উপায় নেই। একই অবস্থা বিরাজ করছে বন্যাদুর্গত এলাকায়।
কুড়িগ্রাম বন্যা নিয়ন্ত্রণ কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত আমিনুল ইসলাম জানান, জেলার ৭৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪৫টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে ১৮৫টি গ্রামের ১৬১ বর্গ কিঃ মিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার এক হাজার ৬৬০টি আর পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ১৪ হাজার ৬০টি । ফলে মোট ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সংখ্যা ৬২ হাজার ৮৮০জন। নদী ভাঙ্গনে ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বন্যার্ত মানুষের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩৬১টি আশ্রয় কেন্দ্র।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, ইতিমধ্যে ৬৮ মে.টন চাল উপজেলাগুলোতে উপ-বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও আমাদের কাছে ৫৮২ মে.টন চাল, ১০লক্ষ টাকা ও ১হাজার ৭শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে। আমরা বন্যার্তদের তালিকা করছি, তালিকা মোতাবেক উপ-বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।