।। নিউজ ডেস্ক ।।
কুড়িগ্রামের ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমারসহ সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল তলিয়ে ফসলের মাঠসহ কাঁচা সড়কগুলো ডুবে গেছে। দ্রুত বন্যার পানি এসে পড়ায় পানি বন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
দুধকুমার নদীর পানি হু-হু করে বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গিয়ে উঠানে ঢুকেছে পানি। কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ারচর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শুক্রবার (১৪ জুলাই) সকালে গৃহবধু শাপলার রান্নাঘরের মেঝে তলিয়ে গেছে। জিনিসপত্র টানতে দুপুর গড়িয়ে গেছে। স্বামী বাবুল আলী এক সন্তানকে কোলে নিয়ে আছেন, অপর সন্তানটি তার শরীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। শাপলা তখন চাল আর কাঁঠালের বিচি ভাজছেন। দুপুরে এই আহারেই তাদের দিন কেটে যাবে। বন্যা হলেই এমন দুর্দশা হয় এসব পরিবারে।
পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ ভগবতীপুর গ্রামের গৃহবধু নার্গিস জানান, চারদিন থেকে পানিবন্দি হয়ে আছি। কেউ খোঁজখবর নেন না। ঘরের চৌকিতে পানি উঠার কারণে পার্শ্ববর্তী উঁচু বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। এই গ্রামে প্রায় ৫০টি বাড়ীতে পানি উঠেছে।
নাগেশ্বরীর নুনখাওয়া ইউনিয়নের চর কাফনা গ্রামের নুর বখত জানান, গতকাল থেকে পানির তোড় বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। নীচু এলাকার বাড়ীঘরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। লোকজন গবাদিপশু নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। এই গ্রামের গৃহবধু নাজমা জানান, চারদিকে পানি থাকায় ঠিকমতো রান্নাবান্না করতে পারছি না। ছেলেমেয়েদেরকে ভালোমন্দ কিছু খাওয়াতে পারছি না।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে শুক্রবার দুপুর ৩টার রিডিং অনুযায়ী দুধকুমার নদী ৫৪ সে.মিটার, ধরলা নদী ২১ সে.মিটার বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে তিস্তা নদীর পানি ব্রিজ পয়েন্টে ২০ সে.মিটার এবং ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারীতে ৩৪ সে.মিটার বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে এসব নদীর পানিও দু’একদিনের মধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এদিকে দুধকুমার নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির ফলে তীরবর্তী পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সংস্কারকৃত রাস্তার দু’দিক তলিয়ে গিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। এমন বন্যা পরিস্থিতির কারণে ১০ হাজার মানুষ কবলিত হয়েছে বলে বিভিন্ন উপজেলার জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
এ নিয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, পানি বৃদ্ধির এই অবস্থা আরও ৩ থেকে ৪দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। তারপর পানি নেমে যাবে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন বাঁধ বন্যায় ডুবে যায়নি বলে নিশ্চিত করে তিনি জানান, নাগেশ্বরীতে একটি সড়ক সংস্কারের কাজ করেছে পাউবো। সেটির দুটি অংশ প্লাবিত হয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, উপজেলাগুলোতে ইতোমধ্যে ৬৫ মে.টন চাল উপ-বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে ৫৮৫ মে.টন চাল, ১০লক্ষ টাকা ও ১হাজার ৭শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে। বন্যার্তদের তালিকা করা হচ্ছে, তালিকা অনুযায়ী আরও উপ-বরাদ্দ দেওয়া হবে। শুক্রবার বিভিন্ন বন্যা এলাকা পরিদর্শন কালে জেলা প্রশাসক ৮শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন বলে তিনি জানান।