।। নিউজ ডেস্ক ।।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাতালিকায় ৮০তম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০৭তম হয়ে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পেয়েছেন, আর বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ৬৬৬তম স্থান অধিকার করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন অপেক্ষমান তালিকায়। কিন্তু ভর্তি হয়ে ভবিষ্যতে পড়াশোনার খরচ কীভাবে মিটাবে সেই দুশ্চিন্তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন ভূরুঙ্গামারীর তরুন শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম।
নাজমুলের বাড়ি ভূরুঙ্গামারীর তিলাই ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম ছাট গোপালপুর গ্রামে। তার বাবার নাম নজ্রুল ইসলাম এবং মায়ের নাম ফাহিমা বেগম। পেশায় দর্জি সহকারী বাবার জ্যেষ্ঠ সন্তান নাজমুল অর্থভাবে পড়াশোনার খরচের জোগান নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। ফলে ভর্তি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন তিনি।
নাজমুল ভূরুঙ্গামারীর শিলখুড়ি ইউনিয়নের ধলডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৪.৫ নিয়ে এসএসসি এবং ২০২২ সালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে জিপিএ ৫ নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। চলতি শিক্ষা বর্ষে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও বাইরে থাকা ও পড়াশোনার ব্যয় নির্বাহ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন তিনি।
নাজমুল জানান, বাড়িতে থাকা গরু বিক্রি এবং এনজিও থেকে নেওয়া লোনের টাকা দিয়ে তার ভর্তি প্রস্তুতি ও আবেদন খরচ নির্বাহ করা হয়েছে। এখন তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ মিললেও ভর্তি পরবর্তী খরচ মেটানো নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। তার বাবা স্বল্প আয়ের কর্মজীবী হওয়ায় তার পড়াশোনার খরচ মেটানো তার পক্ষে সম্ভব হবে না।
নাজমুল বলেন, ‘ভর্তির টাকা জোগাড় হয়েছে। অনেকে ভর্তির খরচ দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু বাড়ির বাইরে থেকে পড়াশোনা করার যে ব্যয় তার কোনও সংস্থান করার সুযোগ আমার পরিবারের নেই। ফলে ভর্তি হলেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবো কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছি। আমার জন্য কোনও শিক্ষা বৃত্তির ব্যবস্থা হলে ভালো হয়।
‘আমাদের পাঁচ জনের সংসার। আমার বাবা দৈনিক আড়াইশ’ থেকে তিনশত টাকা রোজগার করেন। ছোট দুই ভাই ও পরিবারের খরচ মিটিয়ে আমাকে খরচ দেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ তার নেই। তাই আমার একটি বৃত্তির ব্যবস্থা হলে আমি নির্ভার হতাম। আমার ভবিষ্যত স্বপ্ন পূরণ হতো।’
নাজমুলের মা ফাহিমা বেগম বলেন, ‘ নাজমুলের বাবা এখন চোখে কম দেখেন। তেমন আয় করতে পারেন না। আমরা গরিব মানুষ। ছেলের পড়াশোনার খরচ চালানোর সামর্থ নাই। যে লোন কইরা খরচ দিছিলাম সেটার কিস্তি দিতেই হিমশিম খাচ্ছি। কেউ সাহায্য সহযোগীতা করলে ভালো হতো, ছেলেটা পড়াশোনা করতে পারতো।’
নাজমুলের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার নিজের কোন জমিজমা নেই। শ্বশুর বাড়ির জমিতে থাকি। একটি দর্জির দোকানে কাজ করি। সেখান থেকে যা পাই তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন কীভাবে পূরণ করবো?’
তিলাই ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বলেন, নাজমুল ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়ে আসছে। ওর বাবা একটি দর্জির দোকানে কাজ করেন।। এতদিন অনেক কষ্টে ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছেন। কোনও প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা এগিয়ে এলে নাজমুলের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হবে।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘নাজমুলকে সহযোগীতার বিষয়ে আমার পক্ষ থেকে সব ধরণের চেষ্টা থাকবে। তার পড়াশোনা এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমি সামর্থবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।’
//নিউজ//ভূরুঙ্গামারী//চন্দন/জুলাই/১৪/২৩