।। লাইফস্টাইল ডেস্ক ।।
মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মস্তিষ্কের উপকার করে এমনকিছু খাবার হলো- বাদাম, ডার্ক চকলেট, তৈলাক্ত মাছ, মাংসের হাড়ের স্যূপ, ব্রোকলি, ফুলকপি, ডিম, অ্যাভোকাডো, মিষ্টিকুমড়ার বীজ, গ্রিন টি, পালংশাক, টাটকা শাকসবজি, কমলা ইত্যাদি।
কিন্তু এমনও কিছু খাবার রয়েছে যা মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে। মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কিছু পরিণতি হলো- স্মৃতিশক্তি কমে যায়, মনোযোগ দেয়া কঠিন হয় ও কাজকর্ম করতে সমস্যা হয়। মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে এমনকিছু খাবারের নাম উল্লেখ করা হলো।
অ্যালকোহলঃ অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনে মস্তিষ্কে মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী অ্যালকোহল ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কের আয়তন হ্রাস, বিপাকীয় পরিবর্তন এবং নিউরোট্রান্সমিটারের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। যেসব ব্যক্তি বেশি পরিমাণে অ্যালকোহল গ্রহণ করেন তাদের মধ্যে প্রায়শই ভিটামিন বি১ এর ঘাটতি থাকে, যা ওয়ার্নিকের এনসেফেলোপ্যাথি নামে একটি মস্তিষ্কে ব্যাধি সৃষ্টি করতে পারে।
ভাজা খাবারঃ ভাজা খাবার শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেরই কম বেশি পছন্দ। চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, বিভিন্ন ধরণের চপ পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব ভাজাপোড়া খাবার মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি করে। শুধু তা–ই নয়, মস্তিষ্কে টিস্যুর সাইজ কমিয়ে এর যে অংশ জ্ঞানীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেই অংশের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এই ভাজাপোড়া খাবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে কোমলমতি শিশুদের।
কোমল পানীয়ঃ আপনারা অনেকেই জানেন যে, কোমল পানীয় বা সফট ড্রিংকস শরীর আর মস্তিষ্ক উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। আমেরিকার একাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিক্সের মুখপাত্র ওয়েসলি ডেলব্রিজ বলেন, ‘উচ্চমাত্রায় চিনি খেলে নিউরোলজিক্যাল ড্যামেজ হয়, কারণ চিনি প্রদাহকে উদ্দীপ্ত করে।’ একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত চিনিযুক্ত পানীয় পান করেন তাদের স্মৃতিশক্তি ও শিখন ক্ষমতা কমে যেতে পারে। তাই মস্তিষ্কের ক্ষতি এড়াতে কোমল পানীয় বা চিনিযুক্ত পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
ফাস্টফুডঃ বার্গার ও পিৎজায় বিদ্যমান উচ্চ মাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট আলঝেইমার’স নামক স্মৃতিশক্তির বিলুপ্তির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বিভিন্ন ফাস্টফুডে ব্যবহৃত প্রক্রিয়াজাত মাংস শরীরের বিভিন্ন ক্ষতির পাশাপাশি ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। সেই খাবারগুলোর তালিকায় রয়েছে হিমায়িত চিকেন সমুচা, নগেটস, চিকেন বল ইত্যাদি। এছাড়া ফাস্টফুডের উচ্চ মাত্রার লবণ ব্রেইনে ফগ সৃষ্টি করতে পারে, যেখানে স্মৃতিশক্তি ও মনোনিবেশের ক্ষমতা কমে যায়। ২০১৬ সালে হাইপোটেনশনে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, ফাস্টফুডের মতো লবণাক্ত খাবার বেশি খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়, যা মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল সীমিত করতে পারে। এর ফলে ফোকাস/মনোযোগ কমে যায়, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বা সংগঠিত করার ক্ষমতা হ্রাস পায় ও স্মৃতিশক্তির ক্ষয় হয়।
অ্যাসপার্টামঃ অ্যাসপার্টাম হলো সুগার ফ্রি পণ্যগুলোতে থাকা কৃত্রিম মিষ্টি। ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন এমন ব্যক্তিরা বেশিরভাগ সময় সুগার ফ্রি খাবার খেতে পছন্দ করেন। অ্যাস্পার্টম ফেনিল্লানাইন, মিথেনল এবং অ্যাস্পার্টিক অ্যাসিড দিয়ে তৈরি। ইঁদুরের উপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, অসম্পূর্ণ স্মৃতিশক্তি এবং মস্তিস্কে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বৃদ্ধি করে অ্যাস্পার্টাম।
পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেটঃ মস্তিস্কের জন্য ক্ষতিকর এমন পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট খাবারের তালিকায় রয়েছে সাদা পাউরুটি, সাদা পাস্তা ও উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেস্কসহ এমন অনেক প্রক্রিয়াজাত খাবার। অর্থাৎ এগুলো খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয়, এই প্রক্রিয়াজাত শর্করা খাবারগুলো মস্তিষ্কের জন্যও ক্ষতিকর। যাঁদের মেনোপজ চলে অর্থাৎ মাসিক স্থায়ীভাবে প্রাকৃতিকভাবে বয়সজনিত কারণে বন্ধ হয়ে গেছে, এই খাবারগুলো এমন নারীদের মধ্যে বিষণ্নতা বাড়ায়। মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেটের পরিবর্তে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট বা অপ্রক্রিয়াজাত শস্যের খাবার (যেমন- ব্রাউন রাইস ও বার্লি) খাওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন।
মাখনঃ সকাল সকাল পাউরুটিতে মাখন মেখে খেতে অনেকেই পছন্দ করেন। তবে জানলে অবাক হয়ে যাবেন, মাখন কিন্তু স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। এমনকী মস্তিষ্কের জন্যও মাখন খুবই খারাপ। ঠিক একই কথা খাটে চিজের ক্ষেত্রেও। নিয়মিত চিজ খেলেও একাধিক সমস্যা পিছু নেয়। তাই মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে চাইলে এই ধরনের খাবারকে না বলা শিখতেই হবে।