।। লাইফস্টাইল ডেস্ক ।।
আয়রন বা লৌহ আমাদের একটি অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান। এটি একটি খনিজ পদার্থ। আমাদের প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকার মূল খাদ্য উপাদান ছয়টি—শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, খনিজ ও পানি। আর খনিজ নামক উপাদানটির মূল হলো আয়রন। কিন্তু এই আয়রন আমাদের শরীরে কী কাজ করে? প্রতিদিন কতটুকু আয়রন আমাদের দরকার? তা জানা আমাদের প্রয়োজন।
আয়রন কি
আয়রন হলো মানবদেহের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় মিনারেল যা রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। এই হিমোগ্লোবিন লোহিত রক্তকণিকায় উপস্থিত এক ধরণের প্রোটিন যা ফুসফুস থেকে শরীরের সমস্ত অংশে অক্সিজেন বহন করে থাকে।
আয়রন মায়োগ্লোবিন নামন প্রোটিন তৈরিতেও সহায়তা করে যা আমাদের পেশীতে অক্সিজেন সরবারহ এবং সঞ্চয় করে। এছাড়াও আয়রন বিভিন্ন ধরণের হরমোন এবং এনজাইম তৈরীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে যা শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য অপরিহার্য। রাসায়নিক ভাবে আয়রন একটি মৌলিক পদার্থ যার সংকেত হলো Fe. এই মিনারেলকে ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা মুখ্য পুষ্টি উপাদানও বলা হয়।
কেন খাবেন আয়রন
রক্তে থাকা হিমোগ্লোবিন তৈরি করে আয়রনের। হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমে অক্সিজেন পুরো শরীরে বাহিত হয়। তাই আয়রনের ঘাটতি হলে হিমোগ্লোবিনের কর্মক্ষমতা কমে যায়। শক্তি, মাংসপেশির সুগঠন এবং বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যথাযথ কাজ সম্পাদনের জন্য আয়রন প্রয়োজন।
শরীরে যতটুকু আয়রন বা লৌহ থাকে, তার ৭০ ভাগই থাকে হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে। বাকি বেশির ভাগ থাকে অন্যান্য প্রোটিন, যেমন রক্তের ট্রান্সফেরিন বা অস্থিমজ্জার ফেরিটিন ইত্যাদির সঙ্গে। কিছু অংশ থাকে শরীরের বিভিন্ন কোষে।
হিমোগ্লোবিন থাকে রক্তের লোহিত কণিকায়। রক্তের লোহিত কণিকা কমবেশি ১২০ দিন বাঁচে। এরপর নতুন লোহিত কণিকা তৈরি হয়, পুরোনোগুলো ভেঙে যায়। লোহিত কণিকা যখন ভেঙে যায় তখন সেখানকার হিমোগ্লোবিনে থাকা আয়রন রক্তের আরেকটি প্রোটিন ট্রান্সফেরিনের মাধ্যমে অস্থিমজ্জা, লিভার, সিপ্লন ইত্যাদিতে যায়। অস্থিমজ্জায় জমা থাকা আয়রন আবার নতুন রক্তকণিকা তৈরিতে কাজে লাগে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সাহায্য করে আয়রন।
প্রতিদিন প্রায় ১-২ মি.গ্রা. আয়রন আমাদের শরীর থেকে নিয়মিতভাবে বের হয়ে যায় মল, মূত্র ও ঘামের মাধ্যমে। শুনতে আশ্চর্যও লাগতে পারে প্রজননক্ষম বয়সী নারীদের প্রতি মাসিকে রক্তক্ষরণ হয় ৪০-৮০ মি.লি., আর এই পরিমাণ রক্তের সাথে যে আয়রন ক্ষরণ হয় তার পরিমাণ ২০-৪০ মি.গ্রা.। আবার প্রত্যেক গর্ভবতী মা তার প্রতিটি গর্ভধারণের জন্য আয়রন ঘাটতিতে ভোগে ৬০০-৯০০ মি.গ্রা.-এর।
নারীদের স্মৃতিশক্তি হ্রাসের গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে আয়রনের ঘাটতি। সাধারণত ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারীদের জন্য আয়রন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
উৎস
যারা আমিষ খায় না, তারা বেশি আয়রনের স্বল্পতায় ভুগে থাকে। এর জন্য খাদ্যে আয়রনের পরিমাণটা সঠিক হওয়া চাই। মাছ, মাংস, প্রাণীজ খাবার থেকে শরীর খুব সহজে আয়রন গ্রহণ করতে পারে। আয়রনের উৎসগুলো হচ্ছে-
➤ মাছ, গরুর মাংস।
➤ ডিম।
➤ কলিজা।
➤ বিভিন্ন ধরনের ডাল। যেমন- মসুর, সয়াবিন ডাল।
➤ শুকনা ফল- খেজুঁর, ডুমুর, কিশমিশ।
➤ নানা ধরনের সামুদ্রিক মাছ। (চিড়িং মাছ বাদে)
➤ অঙ্কুরিত ছোলা।
➤ মটরশুঁটি, টমেটো, পালংশাক, কচু শাকে প্রচুর আয়রন রয়েছে।
আয়রনের কাজ ও ভূমিকা
➤ এটি হিমোগ্লোবিন তৈরীর জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান, যা ফুসফুস থেকে শরীরের সমস্ত অংশে অক্সিজেন পরিবহন করে।
➤ ATP উৎপাদনের জন্য এই খনিজ উপাদানের প্রয়োজন। ATP কে বলা হয় জীবদেহের শক্তির একক এবং এটি শরীরের শক্তির প্রাথমিক উৎস।
➤ এটি শ্বেত রক্তকণিকা উৎপাদনে জড়িত, যা ইমিউন সিস্টেমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
➤ স্মৃতি, একাগ্রতা এবং শেখার ইচ্ছা ও ক্ষমতাসহ মস্তিষ্কের কার্যকারিতার বিকাশ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এই মিনারেল অপরিহার্য।
সতর্কতা
অনেক বেশি আয়রন আবার শরীরের জন্য ভালো নয়। বেশি আয়রনে হৃদরোগ, লিভার ড্যামেজ সহ নানা ক্ষতি হতে পারে। ১৯ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের প্রতিদিন প্রায় ১৮ মিলিগ্রাম আয়রন খাওয়া উচিত, আর গর্ভকালীন দরকার প্রতিদিন অন্তত ২৫ মিলিগ্রাম। তবে পুরুষদের প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ মিলিগ্রাম আয়রন গ্রহণ করলেই চলে।