।। নিউজ ডেস্ক ।।
কুড়িগ্রামের শহর-গ্রাম কিংবা চরাঞ্চলে অনলাইন গেমিং ও অনলাইন বাজি খেলায় আসক্তি বেড়েছে কিশোর তরুণ শিক্ষার্থীদের। ফলে দিনে দিনে পড়াশোনা বিমুখ হয়ে যাচ্ছে তারা। এর সাথে বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়। পুলিশ প্রশাসন তৎপর থাকলেও বন্ধ হচ্ছে না এসব অনলাইন গেম ও বাজি।
কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার আল আসাদ মোঃ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, অনলাইন ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন বাজি ধরা অ্যাপস-এ বাজি খেলে কেউ হয়েছে নি:স্ব আবার কেউ হয়েছে কোটিপতি। আর এসব জুয়ার টাকা খুব সহজেই মোবাইল ব্যাকিংয়ের মাধ্যমে টাকা হাত বদল করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলার আইনশৃংখলাবাহিনী উত্তরবঙ্গের অনলাইন জুয়ার সফটওয়্যার ডেভেলপার সুজন মিয়াসহ একটি চক্রকে আটক করেছে। অনলাইন বাজি বন্ধে জেলা পুলিশ নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
জেলা জুড়ে ব্যাপক অনুসন্ধান করে জানা যায়, ফ্রি ফায়ার, ক্যাসিনো, জেডউইন, বাবু ৮৮, জেডবার্ড, মারবেল, বাজি৯৯৯ টনবার্ডটি, পাবজি, লুডু, ক্যারাম বোর্ড, ওয়ান এক্স বেটসহ বহু অনলাইন গেম এবং বাজি খেলাতে আসক্ত হয়ে পড়েছে আগামী প্রজন্ম। অনলাইন বাজির নেশায় কেউ কেউ পড়াশোনা বাদ দিয়েছে অল্প বয়সেই। বাজির এই অনলাইন জুয়া খুবই লোভনীয় আর আকর্ষণের খেলা। মোবাইল গেম, খেলাধুলা, পড়াশোনা, কাজকর্ম বাদ দিয়ে সব সময় এর মধ্যে পড়ে থাকছে শিক্ষার্থীরা।
অনুসন্ধানকালে দেখা যায় জেলার চিলমারী উপজেলার চরাঞ্চল শাখাহাতি গ্রামে ৭-৮জন কিশোর টিনসেড চালার নিচে বসে মোবাইলে গেম খেলতে । তাদের প্রত্যেকের হাতে স্মার্ট মোবাইল ছিল। মাথা নিচু করে হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলে ছোট আকারের মোজা পড়ে নিবিষ্ট মনে খেলছে গেম। অভিভাবকদের খামখেয়ালিপনার ফলে জেলার সর্বত্রই অপ্রাপ্ত বয়স্কদের হাতে স্মার্ট ফোনের ছড়াছড়ি। ফলে খুব সহজেই অনলাইন গেমসহ অনলাইন বাজি খেলার প্রবণতা বহু গুণে বেড়েছে। এ ছাড়াও দোকান, ভবন, গাছতলা কিংবা সড়কের বিভিন্ন স্থানে বসে মাথা ঝুঁকে একনাগারে মোবাইলে জুয়ার আসর বসছে দলবদ্ধভাবে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের সিডি মোর এলাকার খোরশেদ আলম বলেন, ঢাকায় কাজ করে টাকা জমিয়ে ১৫হাজার টাকা দিয়ে একটি স্মার্ট মোবাইল কিনেছি। প্রতিদিন ১০টাকা করে এমবি কার্ড কিনে মোবাইলে বাজি ও অনলাইন গেম খেলি। সার্ভার বন্ধ থাকলেও ভিপিএন-এর মাধ্যমে এসব গেম ও বাজি খেলা যায়।
একাদশ শ্রেণির ছাত্র হাসান বলেন, আমার এ যাবৎ প্রায় ৫০হাজার টাকা চলে গেছে মোবাইলে গেম ও বাজি খেলাতে। কোন লাভ হয়নি। কিন্তু পড়াশুনান ক্ষতি হচ্ছে। ওই এলাকার ৮ম শ্রেণীর ছাত্র আরাফাত সানী বলেন, আমার ১বছরে এমবি কার্ড কিনতে ১০হাজারের উপর টাকা চলে গেছে। শুধু এগুলো টাইম পাস ছাড়া আর কিছু না। মোবাইলে বাজি বা গেম খেললে ছেলেরা মাদক, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে না।
কুড়িগ্রাম শহরের বসবাসকারী শিক্ষার্থীর অভিভাবক মাহফুজার রহমান ও সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, দিন রাত পর্যন্ত ছোট-বড় ছেলেদের দল বেঁধে গাছ তলা দোকান ঘর, চায়ের দোকান, রাস্তার দু’পাশেসহ বিভিন্ন স্থানে বসে মোবাইলে বাজি আর গেম খেলে। তাদের নিষেধ করলেও কথা শোনে না। অনেক শিক্ষার্থী পড়াশুনা বিমূখ হয়ে পড়েছে। আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে কঠোর পদক্ষেপ নেবার দাবী জানান তারা।