।। নিউজ ডেস্ক ।।
চিলমারী-রৌমারী নৌপথে ঈদ এলেই যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হয়। ঈদকে সামনে রেখে গত দুই তিন দিন ধরে এই নৌ পথে ১০০ টাকার স্থলে যাত্রী প্রতি ২০০ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। নিয়মের তোয়াক্কা না করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করাকে ‘নৈরাজ্য’ অভিযোগ করে অবিলম্বে এটি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের নিরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী যাত্রীরা।
এই নৌ পথে চলাচলকারী যাত্রীদের সাথে কথা বলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সত্যতা পাওয়া গেছে। টিকিটেও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের সত্যতা মিলেছে। যাত্রীরা বলছেন, ঈদ সহ যেকোনও উৎসব এলেই এভাবে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়। ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলছেন, আমাদের জিম্মি করে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু যারা দায়িত্বে আছেন তারা কেউ কিছু বলছেন না।
ঘাট ইজারাদার প্রতিনিধিদের দাবি, তারা সিরিয়ালের বাইরে যেসব নৌকায় যাত্রী যাচ্ছেন তাদের কাছে দুইশ বা তারও বেশি ভাড়া নিচ্ছেন। সিরিয়ালের নৌকায় অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে না। তবে সিরিয়ালের নৌকার টিকিটেই ২০০ টাকা ভাড়া আদায়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সোমবার রৌমারী থেকে চিলমারী আসা যাত্রী রাজীব ও আইনুল বলেন, ‘ দুদিন আগেও টিকিটে ভাড়া লেখা ছিল ১০০ টাকা। কিন্তু ঈদের কারণে রাতারাতি নতুন টিকিট ছাপিয়ে ভাড়া ২০০ টাকা করা হয়েছে। কেউ অভিযোগ করলেই তাকে নৌকা থেকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যাতায়াতের বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছেন।’
আব্দুল আলিম নামে এক ব্যক্তি টিকিটের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লিখেছেন, ‘ঘাটে ব্যাপক দুর্নীতি। এখানে নেই কোনও আইন, নেই কোনও প্রশাসন। ১০০ টাকার নৌকা ভাড়া নিচ্ছে ২০০ টাকা।’
যাত্রীরা বলছেন, চিলমারী-রৌমারী কিংবা রৌমারী-চিলমারী উভয় পথেই একই বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। ঈদ এলেই তাদের দুর্ভোগ বাড়ে। এটির বিহিত করার দাবি ভুক্তভোগী যাত্রীদের।
এ বিষয়ে জানার জন্য আজ(২৭জুন) টিকিটে থাকা মোবাইল নাম্বারে ফোন দেওয়া হলে, ইজারাদারের প্রতিনিধি পরিচয় দেওয়া মান্নান কল রিসিভ করে বলেন, ‘ অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে এটা ঠিক, তবে সেটা সিরিয়ালের নৌকায় নয়। আর কি করবো বলেন, অনেককেই টাকা দিতে হয় আমাদের। সবাই বোনাস চায় ঈদে। দলের পোলারা আছে, থানা আছে। আগামী কাল পর্যন্ত এটা আদায় করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি রৌমারীর ফলুয়ার চর ঘাটে ইজারাদারের প্রতিনিধি। এটি ইজারা নিয়েছেন আলম চেয়ারম্যান। আমরা ৩০ জুন পর্যন্ত ঘাটের দায়িত্বে থাকবো। ঘাটটি জেলা পরিষদের। রৌমারী-চিলমারী নৌরুটে ভাড়া ৯৩ টাকা। ভ্যাট সহ ১০০ টাকা। সিরিয়ালের নৌকায় এই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।’
টিকিটে ২০০ টাকা লেখা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি মান্নান। বরং তিনি রৌমারীতে আমন্ত্রণ জানান।
চিলমারীর বাসিন্দা এবং রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সাবেক সভাপতি নাহিদ হাসান নলেজ বলেন, ‘এটা অন্যায়। এই নৌ পথের দূরত্ব মাত্র ১১-১৪ কিলোমিটার। তেল খরচ সর্বোচ্চ ৫-৬ লিটার। প্রতিটি নৌকায় অন্তত ১০০ যাত্রী নেওয়া হয়। সে হিসাবে ১০০ টাকা ভাড়া আদায়ও অমূলক। সেখানে ২০০ টাকা ভাড়া নেওয়া জুলুমের শামিল। এটা বন্ধ করা দরকার ’
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রচলিত ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সুযোগ নেই। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব। মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
//নিউজ//চিলমারী//চন্দন/জুন/২৮/২৩