।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বারান্দায় চারদিন পরে থেকে চিকিৎসার অভাবে এক ভবঘুরে ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (২৬ জুন) দুপুরে উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে ঘটনাটি ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন পূর্বে তবকপুর ইউনিয়নের কয়েকজন ব্যক্তি অসুস্থ্য অবস্থায় এক অজ্ঞাত ভবঘুরেকে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেখে যান। সেদিন থেকে ওই অসুস্থ ভবঘুরে ব্যক্তি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতরে থাকা (চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বসারস্থানে) পাকা বেঞ্চে ছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একজন অসুস্থ মানুষকে চারদিন ধরে বারান্দায় পরে থাকতে দেখেও তার অভিভাবক না থাকার অজুহাতে চিকিৎসা সেবা দেননি বলে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা নিতে আসা চাঁদ মিয়া, শাহাবুদ্দিন ও সৈয়দ আলীসহ কয়েকজন বলেন, অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তি চারদিন ধরে হাসপাতালের বারান্দায় পরে ছিল। আমরাই তাকে কলা, রুটি ও পানি খেতে দিয়েছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা করেননি। সোমবার দুুপুরে বিনা চিকিৎসা ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
তবকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বলেন, তিন-চার দিন পূর্বে আমার এলাকা উমানন্দ কাজলডাঙ্গা স্কুলের বারান্দায় অজ্ঞাত এক ভবঘুরে অসুস্থ্য অবস্থায় পড়েছিল। বিষয়টি আমি জানতে পেরে কয়েকজন লোকের মাধ্যমে ওই ভবঘুরে ব্যক্তিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। আজ (সোমবার) দুপুরে হঠাৎ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আমাকে মোবাইল ফোনে জানানো হয় ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, নূন্যতম চিকিৎসা ছাড়াই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজন অসুস্থ মানুষ হাসপাতালে যাওয়ার পরেও চিকিৎসাহীনতার কারণে মৃত্যুর ঘটনা অমানবিক।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মেহেরুল ইসলাম জানান, ওই ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি ছিল না। তিনি মানসিক রোগী ছিলেন। সে কারনে তার চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হয়নি। চারদিন ধরে ওই ব্যক্তি হাসপাতালের বারান্দায় পরে থাকার পরেও চিকিৎসা না হওয়ায় বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই ব্যক্তি হাসপাতালের বারান্দায় পরে ছিল না। তাকে পায়চারী করতে গত কালকেও দেখেছি, আজকেও দেখেছি, দুপুরের দিকে হাসপাতালের বারান্দায় তার মৃত্যু হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মেশকাতুল আবেদ বলেন, ওই ব্যক্তিকে যারা হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল তারা তার প্রকৃত অভিভাবক নয়। তাদেরকে হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছিল, এখানে উনার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। সে কারণে তাকে কুড়িগ্রাম বা রংপুর হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন। কিন্তু তারা সে কথা না শুনেও চলে যান। ওই ব্যক্তি হাসপাতালসহ বাহিরেও চলাচল করেছেন। চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।
উলিপুর থানার অফিসার ইনর্চাজ শেখ আশরাফুজ্জামান বলেন, শুনেছি তিন চারদিন পূর্বে তবকপুর ইউপির চেয়ারম্যান অজ্ঞাত এক মানসিক রোগীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন। সোমবার দুপুরে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসার অভাবে তার মৃত্যু হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। তিনি আরও বলেন, মরদেহের সুরতাহাল রিপোর্ট করার পর দাফনের ব্যবস্থা করা হবে।
//নিউজ//উলিপুর//চন্দন/জুন/২৭/২৩