নাদিয়া জান্নাত। জন্ম ১৫ জুলাই কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার ধরণীবাড়ী ইউনিয়নের মালতীবাড়ীতে। পড়ছেন রংপুর ডেন্টাল কলেজের ১৩ তম ব্যাচে। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ দুটি – ‘কুড়িয়ে পাওয়া পোস্টকার্ড’ (২০১৫) এবং ‘বুঁনোফুল ও ছবিওয়ালার গল্প’ (২০১৬)। এবার একুশে বইমেলায় ‘বুঁনোফুল ও ছবিওয়ালার গল্প’ বইটি বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। নাদিয়া জান্নাত-এর সাথে কথা বলেছেন উলিপুর ডট কম এর সহঃ সম্পাদক তরুণ কবি ও কথাসাহিত্যিক জরীফ উদ্দীন।
জরীফ উদ্দীনঃ আপনি কেন লেখেন?
নাদিয়া জান্নাতঃ শুদ্ধ প্রেম এবং মনের ভেতরের সুপ্ত আমি নামক শব্দটাকে জাগানোর জন্য আমি লিখি। আমি বিশ্বাস করি প্রত্যেকের বুকের বাঁ পাশে একজন মানুষের বাস। গভীরভাবে কান পাতলে তার আওয়াজ শোনা যায়। একমাত্র লিখনী পারে সেই মানুষটাকে জাগাতে।
জরীফ উদ্দীনঃ লেখালেখির শুরুটা কখন?
নাদিয়া জান্নাতঃ লেখালেখির শুরুটাতো শৈশব থেকে। গল্প কবিতা লেখার কথা যদি বলা হয় তবে সেটা শুরু হয়েছে কৈশরের মাঝামাঝি থেকে।
জরীফ উদ্দীনঃ প্রথম লেখা প্রকাশের অনুভূতি বা মজার ঘটনা পাঠকের সাথে শেয়ার করতে চান?
নাদিয়া জান্নাতঃ প্রথম লেখা প্রকাশ হয় রংপুরের একটি স্থানীয় পত্রিকায়। খুব মনে আছে সেদিন চোখ দিয়ে পানি এসেছিল বারবার। আয়নার সামনে গিয়ে সেই পানি মুছে যখন হাসতাম কেমন যেন একটা শিহরণ খেলে যেত।
জরীফ উদ্দীনঃ কার কবিতা আপনার ভালো লাগে? কেন লাগে?
নাদিয়া জান্নাতঃ হেলাল হাফিজের কবিতা আমার ভালো লাগে। আমার মনে হয় মানব মনের অনন্ত পিপাসা গুলোর খোরাক মেটাতে তিনি সক্ষম হয়েছেন।
জরীফ উদ্দীনঃ সমসাময়িক কোন কোন কবি-লেখকের লেখা পড়া হয়? কেন তাদের লেখা পড়েন?
নাদিয়া জান্নাতঃ হ্যাঁ সমসাময়িক কবিদের কবিতা পড়া হয়। আকাশ দত্ত, রাতুল রাহা, হিমেল হাসান বৈরাগী, শিমু, কামরুল হাসান, টোকন ঠাকুরের কবিতা আমাকে টানে। তাদের কবিতায় নতুনত্বের ছোঁয়া আছে।
জরীফ উদ্দীনঃ এবারের বই মেলায় আপনার প্রকাশিত বই “বুঁনোফুল এবং ছবিওয়ালার গল্প” কেন এই নাম রাখলেন?
নাদিয়া জান্নাতঃ সহস্র বছর ধরে যে বুনো ও ফুলের বিস্তার, বুঁনোফুল ঠিক তা নয়। বুঁনোফুল এক মোহগ্রস্থ নারী অথবা দীর্ঘ জীবনের ঘ্রাণমগ্নতার ফ্যান্টাসি। উত্তর মেরুতে জানালা খুলে আমি হয়তো সে মোহগ্রস্থ নারী জীবন। অথবা প্রতিটি নারীই বুঁনোফুল মোহ। আর ছবিওয়ালা ঠিক একই ফ্যান্টাসিমগ্ন যুবক, শহরের দূরত্বে যে কেবলি একা। এ যেন দীর্ঘ জীবন কবিতার টান। বুঁনোফুল ও ছবিওয়ালার গল্প সে দীর্ঘ জীবনের প্রথম পর্ব। মূলত কবিতার ফ্যান্টাসি এবং মোহময় জীবন থেকে আমার কবিতার বইয়ের নাম রেখেছি “বুঁনোফুল ও ছবিওয়ালার গল্প”
জরীফ উদ্দীনঃ পাঠক আপনার বই কেন পড়বে?
নাদিয়া জান্নাতঃ আমার কবিতায় নারী জীবন এবং জীবনের পেছনের গল্প তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আমি। প্রেম এবং একই সাথে প্রেম থেকে উঠে আসা মানবিক মন জানার জন্যই পাঠক আমার বইটি পড়বে।
জরীফ উদ্দীনঃ বর্তমান সময়ে কবিতার পাঠক শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। এক্ষেত্রে কাকে দায়ী করা যায়? উত্তরণের পথ আছে কি?
নাদিয়া জান্নাতঃ হ্যাঁ কবিতার সময়টা এখন খুব নিম্নমুখী। পাঠক কবিতা থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছে। এক মাত্র শুদ্ধ কবিতা পাঠের চর্চা পাঠককে আবার কবিতামুখী করতে পারে।
জরীফ উদ্দীনঃ এখন বেশির ভাগ কবি সাহিত্য ই-মিডিয়ার উপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে। আপনি কি মনে করেন মিডিয়া কাউকে বড় কবি-লেখক বানাতে পারে?
নাদিয়া জান্নাতঃ সময়টা এখন মিডিয়ার। এই জন্য প্রতিটি কবি এবং সাহিত্যিকরা মিডিয়া নির্ভর হয়ে গেছেন। তবে মিডিয়া কাউকে কবি বা সাহিত্যিক বানাতে পারে না।
জরীফ উদ্দীনঃ কবি বা কবিতার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাই।
নাদিয়া জান্নাতঃ কবিদের ভবিষ্যৎ কবিতার ভেতর আছে। কবিতাই কবির ঘর। কবিতার ভেতর যার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ তার আর অন্য কিছুর দরকার পড়ে না। আর কবিতার ভবিষ্যৎ….? আমাদের কবিতা গুলো একদিন মাথা উঁচু করে দাড়াবে। বুক ভরে নিঃশ্বাস নেবে। হাঁটবে। বাঁচবে এবং বাঁচাবে।
জরীফ উদ্দীনঃ আপনাকে ধন্যবাদ।
নাদিয়া জান্নাতঃ ধন্যবাদ আপনাকেও।