।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
উত্তরের সীমান্ত ঘেঁষা ও ধরলা নদী পরিবেষ্টিত জনপদ ফুলবাড়ী উপজেলা। এ উপজেলার চার ইউনিয়নের কোলঘেঁষে আপন খেয়ালে বয়ে গেছে ধরলা নদী। যার প্রভাব রয়েছে নদীর তীরবর্তী জনজীবনে। কখনো আশীর্বাদ আবার কখনো আগ্রাসী রূপ নিয়ে অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে শত শত পরিবার। ধরলার করাল গ্রাসে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বসত বাড়ী, ফসলি জমি, রাস্তা-ঘাট । বাপ-দাদার ভিটে মাটি হারিয়েছে অনেক পরিবার। ভাঙ্গনের শিকার হয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে বাঁধে কিংবা রাস্তায়। অব্যাহত এ ভাঙ্গনে বদলে গেছে নদীতীরবর্তী জনজীবনের দৃশ্যপট।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের প্রত্যান্ত চরাঞ্চল চর গোরকমন্ডল গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার অনেক ঘরবাড়ি সহ তীররক্ষা বাঁধের অনেক অংশ ধরলা নদীর গর্ভে চলে গেছে। ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে শতাধিক বাড়িঘর। নিজের শেষ সম্বল পৈতৃক ভিটে মাটি নদীতে বিলীন হওয়ায় অন্যের বাড়ির বাইরের উঠানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন ফয়েজ আলী (৫২)। সে ওই গ্রামের বাসিন্দা সোলায়মান আলীর ছেলে। একই এলাকায় ভাঙ্গনের শিকার হয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে ছফর আলীর পরিবার। এছাড়াও বদিউজ্জামান ও বছির উদ্দিন (৪০) এর বাড়ী সহ আরো অনেকের বাড়ি রয়েছে ভাঙ্গনের মুখে।
ফয়েজ আলী বলেন, সর্বনাশা ধরলা আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। গত বছরের ভাঙ্গনে আমার শেষ সম্বল মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আমি পেশায় একজন দিনমজুর। সামান্য রোজগারে পরিবারের চাহিদা মেটাতেই হিমসিম খেতে হয়। প্রতিদিনের খরচের পরে সঞ্চয় বলতে কিছুই থাকে না। জমি কিনবো কি ভাবে। তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে এখন আমি নিরুপায়।
ছফর আলী, বদিউজ্জামান, বছির উদ্দিন ও মরিয়ম বেগম সহ আরো অনেকে জানান, বার বার ভাঙ্গনের শিকার হয়ে আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে। নদী ভাঙ্গনের জন্য আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। এ ভাঙ্গন চলতে থাকলে আমাদের পুরো গ্রামটিই ধরলা নদীর পেটে চলে যাবে। ভাঙ্গন রোধে বাঁধ নির্মাণ বা কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার জোর দাবি জানান তারা।
নাওডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান হাছেন আলী জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডে আবেদনের প্রেক্ষিতে ভাঙ্গন কবলিত জায়গায় ১ হাজার ৭’শ টি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। ওখানে আরো ৫/৬ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা জরুরী হয়ে পড়েছে। ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হলে পুরো গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে জোর আবেদন জানাই নদী ভাঙ্গন রোধে যেন দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
//নিউজ/ফুলবাড়ী//নূর-নবী/জুন/১১/২৩