।। নিউজ ডেস্ক ।।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, রিটার্ন দাখিল করদাতার মোট আয় করমুক্ত সীমা অতিক্রম না করলেও আয়ের পরিমাণ নির্বিশেষে ন্যূনতম করের পরিমাণ দুই হাজার টাকা হবে। অসচ্ছল, নিম্নবিত্ত মানুষকেও সেবা পেতে এ কর দেওয়া বাধ্যতামূলক। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তে করজাল বাড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় সংসদে পেশ করা বাজেট বক্তব্য অনুযায়ী, মূলত যারা ৩৮ ধরনের সরকারি সেবা নেবেন, তাদেরকে কর শনাক্তকরণ নম্বরের (টিআইএন) সঙ্গে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণও জমা দিতে হবে। এসব সেবা নেওয়ার জন্য আয়কর রিটার্নের প্রমাণ জমা দেবেন, করমুক্ত আয়সীমার নিচে আয় থাকলেও তাদের এই ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর দিতে হবে।
যেসব ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্নের প্রমাণ জমা দিতে হবে, সেগুলো হলো—
১. ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি ঋণের আবেদন করতে
২. কোনো কোম্পানির পরিচালক কিংবা স্পনসর শেয়ারহোল্ডার হতে
৩. আমদানি ও রপ্তানি নিবন্ধন সনদ পেতে
৪. সিটি করপোরেশন বা পৌর এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি বা নবায়ন করতে
৫. সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তি
৬. বিমা বা সার্ভেয়ার হিসেবে তালিকাভুক্তি বা লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়ন করতে
৭. সিটি করপোরেশন, জেলা সদরের পৌর এলাকা বা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় জমি, ভবন বা অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি, রেজিস্ট্রেশন, দলিল হস্তান্তর, বায়না বা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেওয়ার ক্ষেত্রে চুক্তিমূল্য ১০ লাখ টাকার বেশি হলে
৮. ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নিতে হলে
৯. চিকিৎসক, ডেনটিস্ট, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, খরচ ও ব্যবস্থাপনা হিসাবরক্ষক, প্রকৌশলী, স্থপতি বা সার্ভেয়ার বা যেকোনো পেশাদার সংগঠনের সদস্যপদ প্রাপ্তি
১০. মুসলিম বিবাহ ও তালাক আইনের অধীনে বিবাহ নিবন্ধক হিসেবে লাইসেন্স প্রাপ্তি
১১. কোনো ব্যবসায়ী বা পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যপদ প্রাপ্তি
১২. ড্রাগ লাইসেন্স, অগ্নিনিরাপত্তা লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, বিএসটিআই লাইসেন্স প্রাপ্তি বা নবায়নে
১৩. আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্পের জন্য গ্যাস সংযোগ প্রাপ্তি
১৪. ভাড়ায়চালিত লঞ্চ, স্টিমার, মাছ ধরা জলযান, ট্রলার, কার্গো, কোস্টার ও বার্জের জন্য সার্ভে সার্টিফিকেট প্রাপ্তি
১৫. জেলা প্রশাসন বা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ইট তৈরির অনুমতি পেতে বা অনুমতিপত্র নবায়ন করতে
১৬. সিটি করপোরেশন বা জেলা সদর পৌরসভায় সন্তান বা পোষ্যকে আন্তর্জাতিক পাঠ্যক্রমের ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে বা জাতীয় পাঠ্যক্রমের অধীনে ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি করতে
১৭. সিটি করপোরেশন বা সেনানিবাস এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে কিংবা ব্যবহার করতে
১৮. কোনো কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটরশিপ বা এজেন্টশিপ পেতে
১৯. অস্ত্রের লাইসেন্স পেতে
২০. আমদানির উদ্দেশ্যে ঋণপত্র খুলতে
২১. ৫ লাখ টাকার বেশি পরিমাণ অর্থের পোস্টাল সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে
২২. ১০ লাখ টাকার বেশি ক্রেডিট ব্যালেন্সসহ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে
২৩. ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে
২৪. পৌরসভা, উপজেলা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন বা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে
২৫. মোটরগাড়ি, জমি, বাসস্থান বা যেকোনো স্থাবর সম্পদ সংশ্লিষ্ট অংশিদারত্ব ব্যবসা করতে
২৬. কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন নেওয়ার সময়
২৭. সরকার বা সরকারি কোনো সংস্থা, করপোরেশন থেকে ‘বেতন’ শিরোনামে মূল বেতন হিসেবে ১৬ হাজার বা তার বেশি টাকা পাওয়ার সময়
২৮. মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক উপায়ে অর্থ স্থানান্তরে কোনো কমিশন, ফি জাতীয় অর্থ পেতে
২৯. পরামর্শক, ক্যাটারিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, জনবল সরবরাহ বা নিরাপত্তা সেবা দিয়ে অর্থ গ্রহণ করতে
৩০. সরকারের কাছ থেকে মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার (এমপিও) হিসেবে প্রতি মাসে ১৬ হাজারের বেশি টাকা পেতে
৩১. বিমা কোম্পানির এজেন্সি হিসেবে নিবন্ধন বা পুনর্নবীকরণ করতে
৩২. দুই বা তিন চাকা ছাড়া যেকোনো ধরনের মোটরগাড়ি নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়ন করতে
৩৩. কোনো এনজিওকে বা মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির অধীনে কোনো মাইক্রো ক্রেডিট সংস্থার কাছে বিদেশি অনুদান ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে
৩৪. ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রি করতে
৩৫. কোনো ক্লাবের সদস্যপদ পেতে চাইলে
৩৬. পণ্য সরবরাহ, চুক্তি সম্পাদন বা সেবা প্রদানের জন্য টেন্ডারের কাগজপত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে
৩৭. আমদানি বা রপ্তানির জন্য বাংলাদেশ থেকে বিল অব এন্ট্রি জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে
৩৮. ভবন নির্মাণের জন্য রাজউকসহ চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন ও পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে
আগামী অর্থবছরের বাজেটে অবশ্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। এখন একজন ব্যক্তির তিন লাখ টাকা আয়ের ওপর তাঁকে কোনো কর দিতে হয় না। আগামী বছরে এটা বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
দেশের প্রায় ৮৮ লাখ মানুষ আছেন, যাঁদের কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন আছে। নানা কারণে তাঁরা এটি নিয়েছেন। এঁদের মধ্যে ৩০ লাখের কিছু বেশি মানুষ তাঁদের রিটার্ন জমা দেন। তাঁদের অনেকেই শূন্য কর দেখিয়ে রিটার্ন জমা দেন, অর্থাৎ আয়কর দেওয়ার মতো আয় তাঁদের নেই।