।। নিউজ ডেস্ক ।।
পরিকল্পিতভাবে রাজারহাট চাকিরপশার বিলকে নদ ও নদীর নামে মিথ্যে প্রচারণার প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে। শনিবার (৩জুন) সকালে চাকিরপশার পাঠান পাড়া সড়কে ঐতিহ্যবাহী চাকিরপশার বিল ও প্রান্তিক কৃষক রক্ষা কমিটির ব্যানারে শতাধিক কৃষক ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন করে। এসময় বক্তারা বলেন, ১৯৪০ সাল থেকে সরকারী হিসাবে বিল নামে পরিচিত চাকিরপশার বিলকে নদ বা নদী নামে অভিহিত করে কৃষকদের হয়রাণী করতে একটি চক্র মিথ্যে প্রচারণা চালাচ্ছে। তারই প্রতিবাদে মানববন্ধন আয়োজন করা হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, চাকিরপশার বিল ও প্রান্তিক কৃষক রক্ষা কমিটির আহবায়ক মেজর (অব:) বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুছ আলী, সদস্য সচিব আজগার আলী, জেলা পরিষদ সদস্য এনামুল হক, কৃষক আব্দুল জলিল, কৃষক নুর ইসলাম, রাজারহাট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক তৌহিদুল ইসলাম, রাজারহাট উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক সুমন চন্দ্র রায়, কৃষক জুয়েল হক চৌধুরী, কৃষক টুটুল আহমেদ, কৃষক আব্দুস সালাম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে দিয়ে একটি চক্র চাকিরপশার বিলকে নদী বানানোর অপচেষ্টা করে আসছিল। তারা ভরা মৌসুমে চাকিরপশার বিলকে দেখিয়ে নদী রক্ষা কমিশনকে প্ররোচনা করেছিল। কিন্তু তাদের মিথ্যাচার কোন কাজে আসেনি। নদী রক্ষা কমিশন তাদের চুড়ান্ত রিপোর্টে কোথাও চাকিরপশার বিলকে নদ বা নদী নামে অভিহিত না করলেও সুবিধাভোগী ওই চক্রটি তাদের লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে আসেনি। তারা স্বনামধন্য বেশ কয়েকটি পত্রিকায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে কৌশলে চাকিরপশারকে কখনো নদ কখনোবা নদী নামে প্রচারণা চালায়ে আসছে। এতে জেলার মানুষ হতবাক। চিহ্নিত চক্রটি এতদিন বিল ভোগ করে আসলেও আন্দোলনে যাওয়ার পূর্বে নিজেদের দখলকৃত জমিগুলো বিক্রি করে এখন অন্যকে বিল খোর বলছে। ঢালাওভাবে মিথ্যাচার করছে। আমরাও চাই বিলকে প্রবাহমান রাখা হোক। সরকারী খাস অংশপ্রকৃত মৎসচাষীদের নামে ইজারা দেয়া হোক। কিন্তু বিলকে কখনো নদ, কখনো বা নদী নামে হেড লাইন দিয়ে মিথ্যে প্রতিবেদন করা নিশ্চয়ই ভালো মানসিকতা হতে পারে না। পত্র-পত্রিকাগুলোর সম্পাদকদের উচিৎ ঘটনাস্থলে এসে প্রকৃত সত্য অনুসন্ধান করা। তাহলে গোয়েবলীয় মিথ্যাচার সবার সামনে প্রকাশ পাবে।
উল্লেখ্য, রাজারহাট ভূমি অফিসের রেকর্ড অনুসারে, রাজারহাট ও চাকিরপশার ইউনিয়নের মধ্যে অবস্থিত চাকিরপশার বিলটি বদ্ধ জলাশয় হিসেবে তৎকালীন ১৯৪০ সালে ভারত সম্রাটের নামে ‘বিল শ্রেণি’ হিসেবে সিএস রেকর্ডে নথিভূক্ত করা আছে। এই বিলের সাথে কোন নদীর সংযোগ নেই। আশির দশকে সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তৎকালীন পানি উন্নয়ন বোর্ড চাকিরপশার বদ্ধ জলাশয়ের পানি নিষ্কাষনের জন্য জমি অধিগ্রহন করে খাল খনন কর্মসূচির মাধ্যমে ১৬ কিলোমিটার পথ খনন করে পার্শ্ববর্তী উলিপুর উপজেলার থেথরাই ইউনিয়নের গোড়াই পিয়ার গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে সেচের জন্য রেগুলেটর স্থাপন করে সেখান থেকে হাতিয়া ইউনিয়নে ব্রহ্মপূত্র নদে গিয়ে খনন কার্য সম্পাদন করা হয়। এখন খননকৃত খালকে জোড় করে উলিপুর অংশকে বুড়ি তিস্তা নদী এবং রাজারহাট চাকিরপশার বিলকে চাকিরপশার নদ বা নদী নামে বিভ্রান্তকর তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে। যার আদৌ কোন ভিত্তি নেই।
নদী রক্ষা কমিশন তাদের পরামর্শের জায়গায় চাকিরপশারকে কখনো নদ বা নদী হিসেবে উল্লেখ করেননি। তারা বিলের পানির প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য সড়কগুলোতে সেতু নির্মান এবং ব্যক্তি মালিকানায় দখল করা জায়গা রেকর্ড সংশোধনের মাধ্যমে পুকুর পাড় অপসারণ করে পানির প্রবাহ ঠিক রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা কৃষকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু এই চক্রটি মিথ্যা প্রচারণা থেকে সড়ে আসেনি। তারই প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি গ্রহন করা হয়।