।। নিউজ ডেস্ক ।।
অ্যাডেনিয়ামের আদি নিবাস আফ্রিকার মরু অঞ্চলের ফুল ‘ডেজার্ট রোজ’ গাছের বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেছেন কুড়িগ্রামের কৃষিবিদ শাহীনুর ইসলাম। গাছটা আমাদের দেশেও অনেকের ছাদবাগানে শোভা পায়। চারা তৈরি করে কেউ কেউ বিক্রিও করেন।
জানা গেছে, ধরলা নদীর তীরে কুমোরপুর এলাকায় এক বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে তাদের ‘বেবি প্ল্যান্ট’ নার্সারিটি। ২০২০ সালে থাইল্যান্ড থেকে অ্যাডেনিয়ামের বিভিন্ন জাতের বীজ সংগ্রহ করেন মিজান। তারপর তাঁর ছাদবাগানে লাগান। গাছ বড় হয়ে বাহারি ফুল ধরে। ছাদবাগানে দুই বছর ধরে গাছগুলোর পরিচর্যা করে বিস্তর অভিজ্ঞতা অর্জন করেন মিজান। ফুল ফুটলে অ্যাডেনিয়ামের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে ব্যাপক সাড়াও পান। অনেকে কিনতে চান। তারপর আগ্রহীদের কাছে বিক্রি শুরু করেন তিনি। গাছগুলো অনেকটা রসুনগাছের মতো। প্রথম দেখাতে মনে হয় বনসাই। দেশি কোনো প্রজাতির সঙ্গেই মিলল না অ্যাডেনিয়াম বা মরু গোলাপ। গাছগুলোর মাথায় নানা রঙের ফুল ফুটে আছে। প্রচণ্ড রোদে ফুলের রং আরও গাঢ় হয়ে উঠেছে। দেখেই চোখ জুড়িয়ে গেল।
ফুল গাছ দেখভালকারী আবদুস ছালাম বললেন, ‘এগুলা ফুল জীবনে দেখি নাই। ভাতিজা দুজন যেভাবে পরামর্শ দেন, সেভাবে কাজ করছি। বহু মানুষ দেখবার আসে, কিনে নিয়ে যায়। প্রতিদিন পাঁচ–ছয় হাজার টাকার গাছ বিক্রি করি।’
মিজানুর রহমান বললেন, ‘২০১৯ সালে থাইল্যান্ডের নগোজ এলাকায় প্রথম এই ফুলের বিশাল বাগান দেখতে পাই। বনসাই প্রকৃতির গাছগুলো ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে দেখে মুগ্ধ হই। তখন থেকেই এ ফুলের সৌন্দর্য মাথায় চেপে বসে।’ থাইল্যান্ডে অ্যাডেনিয়াম বাগানের এক উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই গাছ তাঁরা রপ্তানি করে থাকেন। গাছের দাম শুনে আরও অবাক হন মিজান। আকার ও বয়সভেদে একেকটি গাছ নাকি সাত থেকে আট লাখ টাকায়ও বিক্রি হয়!
মিজানুর রহমান আরও জানান, শুধু থাইল্যান্ডেই নয়, তাইওয়ান, ভারতসহ বেশ কিছু দেশেই অ্যাডেনিয়াম ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। তাই এই গাছ বাংলাদেশের আবহাওয়াতেও চাষ সম্ভব। এছাড়াও দেশের অনেক শৌখিন ছাদবাগানি চাষও করছেন।
এরই মধ্যে মিজানুর রহমানের কৃষিবিদ বড় ভাই শাহীনুর ইসলাম একদিন তাঁর বাসায় এসে অ্যাডেনিয়াম দেখে মুগ্ধ। দুই ভাই কথা বলে তখনই সিদ্ধান্ত নেন ফুলগাছটির বাণিজ্যিক চাষ করবেন। দুজনে পরামর্শ করে চলে যান গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম। নিজেদের জমিতে নার্সারি গড়ে তোলার কথা জানান পরিবারের সদস্যদের। দুই ভাইয়ের কথা শুনে রীতিমতো হাসাহাসি করেন তাঁরা। সেই হাসাহাসিতে শামিল হয় গ্রামের মানুষও। তাঁরা বাবার কাছে জমি চাইলে তিনিও নিরুৎসাহিত করে বলেন, ‘এই গ্রামে দামি গাছ আর ফুল কে কিনবে। তোমরা না থাকলে দেখাশোনা করবে কে?’ অনেক চেষ্টার পর তাঁরা তাঁদের বাবাকে রাজি করান। নিজেদের জমিতেই গড়ে তোলেন নার্সারি।
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এখন উদ্যোক্তা তৈরির কথাও ভাবছেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা প্রচুর সাড়া পেয়েছি। দেশের সব জেলায় আমাদের গাছ যাচ্ছে। ভবিষ্যতে প্রচুর সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। তাই প্রশিক্ষণ দিয়ে এলাকার তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চাই।’