।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
শতভাগ বিদ্যুতায়নকৃত উপজেলা হিসাবে চিলমারীকে ঘোষণা করার ৫বছর পেরিয়ে গেলেও পল্লী বিদ্যুৎ দপ্তরের গাফিলতির কারনে চরাঞ্চলীয় একটি ইউনিয়নের প্রায় দেড় শতাধিক গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বঞ্চিত। অভিযোগ উঠেছে উৎকোচ দিতে না পারায় ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’র সেই সেবা থেকে বঞ্চিত গ্রাহকরা। এতে বাড়ছে এলাকাবাসীর ক্ষোভ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, চিলমারী সদর ইউনিয়নে ৩৯কি.মি বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ পূর্বক ২৭কি.মি.এলাকায় সংযোগ দেয়া হলেও পরিদর্শককে উৎকোচ না দেয়ায় বাকী ১২কি.মি এলাকায় সংযোগ দেয়া হচ্ছে না।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুন মাসে চিলমারীকে শতভাগ বিদ্যুতায়নকৃত উপজেলা হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণার পর চরাঞ্চল চিলমারী ইউনিয়নকে বিদ্যুতের আওতায় নেয়ার লক্ষে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন কল্পে জোড়গাছ ঘাট এলাকা থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশ দিয়ে ৫কি.মি পথে ব্যয়বহুল সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হয়। ক্যাবল স্থাপনের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন দুর্গম চরাঞ্চল চিলমারী ইউনিয়নের শাখাহাতী, বৈলমন্দিয়ার খাতা, কড়াই বরিশাল, ঢুষমারা, আমতলা, ছালিপাড়া আঠারোপাখিসহ বিভিন্ন গ্রামে ৩৯ কি.মি.লাইন নির্মাণ করে পল্লী বিদ্যুৎ। নির্মিত ৩৯কি.মি.লাইনের মধ্যে পল্লীবিদ্যুৎ চিলমারী জোনাল অফিসের পূর্ববর্তী ডিজিএম এর আমলে ২৭কি.মি এলাকায় ২হাজার ২শ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। বিদ্যুতের এসটি তার টানানো, সার্ভিস তার লাগানো ও বাড়ী ওয়ারিং করা হলেও পরিদর্শককে উৎকোচের অর্থ না দেয়ায় অদ্যাবধি বাকী ১২কি.মি.এলাকায় মিটার সংযোগ দেয়া হচ্ছে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
সরেজমিনে চিলমারী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আমতলা, মানুষমারার চর, আঠারো পাখি ও যুগ্নিদহ এলাকার প্রায় ১৪০টি বাড়ীতে বিদ্যুতের ওয়ারিং করা হয়েছে কিন্তু মিটার সংযোগ দেয়া হয়নি। ওই সমস্ত বাড়ীতে ১বছর আগে এসটি তার ও সার্ভিস তার প্রদান করা হয়েছে এবং বাড়ীগুলি ওয়ারিং করে তাদের জন্য ৬টি ট্রান্সফরমার বরাদ্দ করে এলাকায় প্রদান করা হয়েছে। টাকা পয়সা খরচ করে এতসব কাজ করেও অজানা কারণে দীর্ঘদিন পরেও তাদের মিটার প্রদান করা হয়নি।
মানুষমারারচর এলাকায় এহসানুল হক ও মোন্নাফ আলী ব্যাপারীর নামে দুইটি সেচের লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে কিন্তু বিদ্যুতের সংযোগ না দেয়ায় তারা কৃষি জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না। এসময় মানুষমারারচর এলাকার কামরুজ্জামান, আব্দুল্লাহ, হাফিজুর রহমানসহ অনেকে জানান, বিদ্যুতের লাইন নির্মাণ হওয়ায় আমরা গরু মোটা-তাজা করনের প্রকল্প হাতে নিয়েছিলাম। সে মোতাবেক আমরা গরুও কিনেছি। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় আমরা গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছি। বাড়ীতে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় অতিরিক্ত গরমে গরু অসুস্থ হয়ে যাওয়া এবং চুরি-ডাকাতির ভয়ে কম মূল্যে দুইটি গরু বিক্রি করেছেন বলেন জানান নওশাদ আলী নামের এক খামারী।
ওই এলাকার মো.এহসানুল হক, মমিনুল ইসলামসহ অনেকে জানান, বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য তারা কয়েক দফায় বর্তমান ডিজিএম এর নিকট গেলে তিনি পরিদর্শক লুৎফর রহমানকে পরিদর্শণ পূর্বক প্রতিবেদন প্রদান করতে বলেন। তারা আরও জানান, ওয়ারিং পরিদর্শক লুৎফর রহমান এলাকা পরিদর্শণে এসে বিভিন্ন ত্রুটি বের করেন এবং তার সহযোগী সাহেব আলীর মাধ্যমে মিটার প্রতি ১হাজার টাকা উৎকোচের দাবী করেন। টাকা দিলে দুই দিনেই মিটার সংযোগ দেয়ার কথা বলেন তারা।
আমতলা এলাকার জাহাঙ্গীর আলম, সোহরাব আলী, রোকেয়া খাতুনসহ অনেকে জানান, তাদের বাড়ী ওয়ারিংসহ মিটার নেয়ার জন্য স্থানীয় তাজুল ইসলাম ও হাসানকে তারা ১ থেকে দেড় হাজার টাকা দিয়েছেন ৬মাস হলো। অদ্যাবধি তারা সংযোগ কিংবা টাকা কোনটিই পাচ্ছেন না।
তাজুল ইসলাম বলেন, সহজে বিদ্যুতের সংযোগ পেতে টাকা উত্তোলন করে তৎকালিন সহকারী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মোক্তারুলকে ১৬হাজার টাকা দিয়েছি। তিনি বদলী হয়ে যাওয়ায় কাজ ও টাকা কোনটিই পাচ্ছি না।
অভিযুক্ত পল্লী বিদ্যুৎ ওয়ারিং পরিদর্শক মো.লুৎফর রহমান উৎকোচের কথা অস্বীকার করে বলেন, তিনি কারো কাছে টাকা পয়সা চাননি। ওই এলাকায় বাড়ী ওয়ারিংয়ের কথা তার জানা নেই বলে জানান তিনি।
তৎকালিন সহকারী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মোক্তারুল ইসলাম বলেন, আমি কোন টাকা নেইনি। আমি ওই এলাকার গ্রাহকের বিদ্যুৎ প্রদানের জন্য সহযোগীতা করেছি মাত্র।
কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুত সমিতির চিলমারী জোনাল অফিসের ডিজিএম প্রকৌশলী মো.মোস্তফা কামাল বলেন, এ বিষয় আমি কোন অভিযোগ পাইনি।
//নিউজ/চিলমারী//সোহেল/মে/২৪/২৩