।। নিউজ ডেস্ক ।।
ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে একটি ‘কার’ জব্দ করা হলেও রহস্যজনক কারণে করা হয়নি মামলা কিংবা সাধারণ ডায়রী। এ কার’টির হদিস না পাওয়ার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে খোদ পুলিশ বিভাগে।
অন্যদিকে বিভিন্ন মাদক মামলায় বিভিন্ন ধরণের যানবাহন আটক হলেও তা সুকৌশলে জব্দ তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। পরে দফারফা করে থানা থেকে তুলে দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট যানবাহনের মালিকের হাতে। কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার সীমান্ত মাদক, স্বর্ণ, অস্ত্র,মানুষ পাচারসহ চোরাচালানের বড় একটি রুট। থানার ওসির বিরুদ্ধে চোরাচালানের বখরা আদায়সহ মাদক কারবারীদের গডফাদারদের সাথে নিয়মিত চা চক্রে মিলিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ফলে মাদক ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না। ধরা পড়ছে চুনোপুটি মাদক বাহক। ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকছে মজুদদার গডফাদাররা।
কাশিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুনিরুজ্জামান মানিক জানান, উত্তর কাশিপুর গ্রামের আব্দুল মালেকের বাড়ির আঙ্গিনা থেকে গত ১৪ মার্চ (মঙ্গলবার) দিবাগত রাত ২টার দিকে এস আই এনামুল হকের নেতৃত্বে পুলিশের এক ড্্রাইভার সাদা রঙের কারটি থানায় নিয়ে যায়। যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-১৫-৮৭৮২, চেচিস নং-উউ ১১১-৫০৬৭০৫২, ইঞ্জিন নং ৪ ঊ-২৯৩০৫৮১ এবং এর আনুমানিক মুল্য ৫ লক্ষাধিক টাকা বলে পুলিশ উল্লেখ করে একটি জব্দ তালিকা তৈরী করে। এরপর কী ঘটেছে তা তার জানা নাই। তিনি আরো জানান, ঐদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে কৃষক আব্দুল মালেক তাকে ফোনে জানায় বাড়ীর আঙ্গিনায় একটি সাদা রঙের ‘কার’ গাড়ী কে বা কারা ফেলে রেখে চলে গেছে। তিনি মালেককে গাড়ীর মালিকের জন্য অপেক্ষা করতে বলেন। এরপরও কোন খোঁজখবর না পাওয়ায় রাত ১০টার দিকে ফুলবাড়ী থানায় খবর দেয়া হয়। পরে এস আই এনামুলের নেতৃত্বে একটি টিম আসে। কিন্তু গাড়ীর একটি চাকায় হাওয়া না থাকায় পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। পরে মেকার এমদাদুলের সহায়তায় গাড়ীটি ঠিক করা হলে পুলিশের ড্্রাইভার গাড়ীটি চালিয়ে নিয়ে যায়। তবে আমরা ভয়ে ছিলাম এ গাড়ী দিয়ে কোন অপরাধ সংগঠিত হতে পারে।
কাশিপুর ইউনিয়নের বিটপুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এস আই) এনামুল হক গাড়ী জব্দ করার কথা স্বীকার করেন। তবে কী ধরণের আইনি প্রক্রিয়া গ্রহন করা হয়েছে এবং গাড়ীটি কোথায় তা জানাতে পারেন নি। ওসি স্যারের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানাবো বলেই ফোন কেটে দেন। এরপর কয়েক দফা ফোন দেয়া হলেও তিনি বারবার ফোন কেটে দেন।
এমন অভিযোগের কথা অস্বীকার করে ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ ফজলুর রহমান বলেন, আমার প্রায় দু’বছর কর্মকালে সব চেয়ে বেশী মাদক আটকের ঘটনা ঘটেছে ফুলবাড়ীতে। অস্ত্র ও স্বর্ণ আটকের ঘটনাও ঘটেছে। মাদক গডফাদার কিংবা চোরাকারবারীদের সাথে সম্পৃক্ততার প্রমাণ দিতে পারলে তিনি চাকুরী ছেড়ে দেয়ার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। তবে পুলিশ কর্তৃক আটক ‘কার’টির ব্যাপারে কী কী আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার সঠিক জবাব তিনি দিতে পারেন নি। শুধু জানান, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় প্রকৃত গাড়ীর মালিকের কাছে কার’টি হস্তান্তর করা হয়েছে। কার’টির প্রকৃত মালিক কে এবং কবে হস্তান্তর করা হলো? আদালতের বাইরে থানায় কোন প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করা হলো এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোন তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী বলেন, ফুলবাড়ী উপজেলায় মাদক অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার অভাবে মাদক নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। ফলে যুব সমাজ ধংস হয়ে যাচ্ছে। পুলিশী হয়রানীর কথা স্বীকার করে বলেন, গত ২(মঙ্গলবার) মে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নে মন্দিরে মুর্তি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। গভীর রাতে পুলিশ নিরিহ ৭জনকে আটক করে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন প্রতিবাদ জানায়। ফলে চাপের মুখে তাদের ১৫১ ধারায় কোর্টে চালান দেয় পুলিশ। একদিন পর তারা জামিন লাভ করে।
হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান দুলু বলেন, আইনি বিধান মতে পরিত্যক্ত কিংবা সন্দেহজনক বা চোরাই বলিয়া কথিত বা কোন অপরাধ সংঘটনের সন্দেহ সৃষ্টিকারী অবস্থায় প্রাপ্ত সম্পত্তি বা গাড়ী পুলিশ অফিসার জব্দ করিলে সঙ্গে সঙ্গে তাহা আইনি প্রক্রিয়ায় ম্যাজিস্ট্রেটকে জানাইতে হইবে। বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট উহার হেফাজত ও অর্পণ সম্পর্কে আদেশ দিবেন। এর বাইরে থানায় বসিয়া হস্তান্তর কিংবা অন্য কোনো পদক্ষেপ নিলে তা বেআইনি হইবে।
কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার আল আসাদ মোঃ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, পুলিশের বেআইনি কোনো কাজ করার সুযোগ নেই। অভিযোগগুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।