।। নিউজ ডেস্ক ।।
রাজারহাটে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে প্রাইভেট শিক্ষকের বিরুদ্ধে। কিশোরী ওই শিক্ষার্থীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে একাধিকবার ‘ধর্ষণ’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা মঙ্গলবার (৯ মে) দুপুরে রাজারহাট থানায় মামলা করতে গেলে, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সঙ্গে না থাকায় অভিযোগ নেয়নি পুলিশ।
অভিযুক্ত প্রাইভেট শিক্ষকের নাম রাজু আহমেদ (৪২)। তিনি উলিপুরের পান্ডুল ইউনিয়নের গাবেরতল এলাকার বাসিন্দা ও একই ইউনিয়নের জামতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান পদে কর্মরত।
ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থী ও তার বাবা জানান, লাইব্রেরিয়ান পদে চাকরি করলেও রাজু আহমেদ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বাড়িতে প্রাইভেট পড়ান। কাছাকাছি বাড়ি হওয়ায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাজু আহমেদের কাছে প্রাইভেট পড়তেন। সেই সূত্রে গত ৫-৬ মাস আগে রাজু নিজ বাড়িতে ওই শিক্ষার্থীকে ‘ধর্ষণ’ করেন। এরপর ওই শিক্ষার্থী প্রাইভেটে যাওয়া বন্ধ করে দেন। ধর্ষণের ভিডিও ও ছবি আছে এমন তথ্য জানিয়ে রাজু ওই শিক্ষার্থীকে ভয় দেখান। গত বুধবার (৩ মে) রাতে রাজু ওই শিক্ষার্থীকে ভয় দেখিয়ে বাড়ির বাইরে দেখা করতে বলেন। ওই শিক্ষার্থী বাড়ির বাইরে রাজুর সাথে দেখা করতে গেলে রাজু আবারও ওই শিক্ষার্থীকে ‘ধর্ষণ’ করেন। রাতে ওই শিক্ষার্থীর বাড়ির পাশ থেকে চলে যাওয়ার সময় স্থানীয় কয়েকজন যুবক রাজুকে দেখে ফেলে। তারা রাজুকে রাতে এলাকায় আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলে রাজু কৌশলে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন। পরে ঘটনা প্রকাশ হয়ে যায়।
রাতে কিশোরীর বাড়ির পাশে বাঁশ ঝাড়ে শিক্ষক রাজুকে দেখে আটকের বিষয়ে ফরাদ নামে এক যুবক বলেন, ‘রাত সাড়ে ৯ টার দিকে আমি বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ বাঁশ ঝাড়ের আড়ালে এক ব্যক্তিকে লুকাতে দেখি। আমি মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে ডাকাডাকি করলে আড়াল থেকে রাজু মাস্টার বেরিয়ে আসেন। আমি বুঝতে পারি তিনি ওই শিক্ষার্থীর সাথে গোপনে দেখা করে ফিরছেন। কারণ ওই শিক্ষার্থীর সাথে তার অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে আমরা আগে থেকে আঁচ করতে পেরেছিলাম। এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি আমাকে চিৎকার করতে নিষেধ করেন। ঘটনা প্রকাশ না করার জন্য আমাকে বিভিন্ন প্রস্তাব দেন ও আমার কাছে ক্ষমা চান। সবকিছু অডিও রেকর্ড আমার কাছে আছে।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘রাজু স্যার ভয় দেখিয়ে আমাকে দুইদিন ধর্ষণ করেছেন। তার কাছে ভিডিও আছে এমন ভয় দেখিয়ে আমাকে কাউকে জানাতে নিষেধ করেছেন।’
তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাজু আহমেদ। তার দাবি, প্রেমে বাধা দেওয়ায় ফরাদ নামে এক কিশোর কয়েকজনকে সাথে নিয়ে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
রাজু বলেন, ‘ আমি বুধবার রাতে ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে পড়া দাগিয়ে দেওয়ার জন্য গিয়েছিলাম। সেসময় তার মা ছিলেন। ধর্ষণের অভিযোগ সম্পুর্ণ ভিত্তিহীন। ওই শিক্ষার্থীর পরিবারকে প্রলোভন দেখিয়ে বানোয়াট অভিযোগ করা হচ্ছে। তারা কোনও প্রমাণ দিতে পারলে আমি যেকোনও শাস্তি মেনে নেব।’
তবে রাতে ফরাদকে দেখে বাঁশ ঝাড়ে লুকানোর কথা স্বীকার করেন রাজু। নিজেকে বাঁচাতে ফরাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথাও স্বীকার করেন তিনি। ফরাদের চক্রান্ত থেকে বাঁচতে তিনি এসব করেছেন বলে দাবি করেন।
এ ঘটনায় ফরাদ তাকে ব্লাকমেইল করার চেষ্টার পাশাপাশি তার ওপর হামলা চালিয়েছেন অভিযোগ করে রাজু বলেন, ‘আমি বর্তমানে উলিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় আমি পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।’ তবে রাজুর এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ফরাদ।
এদিকে এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা মঙ্গলবার (৯ মে) থানায় অভিযোগ করতে গেলে ফিরিয়ে দিয়েছেন রাজারহাট থানার ওসি।
তিনি বলেন, ‘রাজু মাস্টার আমার মেয়েকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিয়ে অনেকে টালবাহানা শুরু করেছে। আমি আজ থানায় মামলা করতে আসছি। কিন্তু পুলিশ অভিযোগ নিচ্ছে না।’
ওসির বরাতে ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ে পরীক্ষা দিতে গেছে। ওসি বলছেন, মেয়েকে না আনলে অভিযোগও নেওয়া যাবে না।’
ধর্ষণের অভিযোগ না নেওয়ার বিষয় স্বীকার করে রাজারহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ হিল জামান বলেন, ‘ভিক্টিমকে সাথে না আনায় মামলা নেওয়া হয়নি। ধর্ষণ সংক্রান্ত অভিযোগ হওয়ায় ভিক্টিমকে থানায় আনতে বলেছি। তাকে জিজ্ঞাসা করে জানতে হবে ঘটনা কী, সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে।’
‘ধর্ষণের মামলায় ধর্ষণ সংক্রান্ত ভিক্টিম লাগবে। ভিক্টিমকে আনলে মামলা নেওয়া হবে।’ যোগ করেন ওসি।
//নিউজ/কুড়িগ্রাম//চন্দন/মে/০৯/২৩