।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
চিলমারীতে কখনও বন্যা, কখনও বা বন্যায় ভেঙ্গে যায় কৃষকের বুক ভরা স্বপ্ন। এবার ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ কেড়ে নিলো হাজারো কৃষকের স্বপ্ন। রোদ, বৃষ্টি, খড়া, বন্যা তবুও থেমে থাকে না, দায়িত্ব নিয়ে যেন মাঠে পড়ে থাকে তারা। চিন্তা ভাবনা যেন একটাই ফসল ফলবে, সবার কাছে খাদ্য চলে যাবে, নিজেরা দু-বেলা দু’মুঠো খাবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন কেড়ে নিতে ধান ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে চিলমারীর কৃষকরা হয়ে পড়েছে দিশাহারা। কৃষি বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের নেই কোন মাথা ব্যাথা।
জানা গেছে, নেক ব্লাস্ট (ধান গাছের গিঁটপচা, শীষের গোড়াপচা) রোগে আক্রান্ত হয়ে চিলমারীর রমনা, থানাহাট, রানীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েক হেক্টর জমির ধানের শীষ চিটা হওয়ায় শত-শত কৃষক সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন। ফসল ঘরে তোলার পূর্ব মুহূর্তে এই ভাইরাস দেখা দেয়ায় চাষিরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। তাদের মুখে হাসির পরিবর্তে ভেসে আসছে আর্তনাদ। মাঠের পর মাঠ ধানের শীষ সাদা হয়ে গেছে। ফসলের রোগ সমাধানের জন্য পাগলের মতো ছোটাছুটি করেছিল কৃষি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন ওষুধের দোকানগুলিতে। তবুও মেলেনি কোনো প্রতিকার।
সরজমিনে জানা গেছে, মাছাবান্দা, সবুজপাড়া, সাতঘড়ি পাড়া, নয়াবাড়ি, জোড়গাছ, রাজারভিটা, রানীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে বোরো ধানে নেক ব্লাস্ট ও পাতা মড়া রোগ। নেক ব্লাস্ট রোগে শতশত বিঘা জমির বোরো ধানের শীষ শুকিয়ে গেছে। দূর থেকে দেখলে ওইসব ক্ষেতের ধান পাকা মনে হলেও কাছে গেলে বোঝা যায় সব ধান শুকিয়ে চিটা হয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এ বছর ৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সামান্য কিছু জমিতে নেক ব্লাস্ট রোগ হয়েছে।
তবে সরজমিনে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে নেক ব্লাস্ট রোগে হেক্টরকে হেক্টর ধান ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। মৌজাথানা এলাকার আঃ লতিফ মনের দুঃখে কাচাপাকা ধান কাটছিল, এসময় কথা হলে তিনি বলেন, হাজার হাজার টাকা খরচ করেছি কিন্তু সব চিটা হয়ে গেছে।
রমনা সাতঘড়ি পাড়া, মাছাবান্দা, রাজারভিটাসহ বিভিন্ন এলাকার বেশকিছু কৃষক অভিযোগ করে বলেন “বিএস (উপ-সহকারী কৃষি অফিসার) ওদের কথা বাদ দেন তারা তো অফিসে বা আড্ডায় বসেই সময় পাড় করে, আর অইলেও তোমার সম্পর্কের দু’চারজনের জমি দেখি চা খাইয়া চলি যায়। তারা আরো বলেন, বান, বর্ষা, বৃষ্টি আর রোগ হইলেই বা ওমার কি? মাস গেইলেই তো হাজার হাজার ট্যাকা বেতন পায়, ওমার তো আর কোন সমস্যা নাই সব সমস্যা হামার। তারা আরো বলেন পরামর্শরের জন্য সঠিক সময় আমরা কৃষি অফিসের লোকজনকে কোন সময় পাশে পাই না।
জমির ফসল জমিতে নষ্ট হতে দেখে শতশত কৃষকের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে চিলমারীর আকাশ বাতাস। কি হবে তাদের, কে শুনবে তাদের আর্তনাদ কেবা দিবে তাদের সান্তনা।
উপজেলা কৃষি অফিসার কুমার প্রণয় বিষাণ দাস জানান, নেক ব্লাস্ট ধানের একটি ছত্রাকজনিত রোগ। এটি কোনো বীজে থাকলে পরে তা জমিতে আসতে পারে। রোগ নির্মূলের জন্য আমাদের লোকজন মাঠে মাঠে গিয়ে পরামর্শ দিচ্ছে।
//নিউজ/চিলমারী//সোহেল/মে/০১/২৩