।। নিউজ ডেস্ক ।।
‘আমরা এক সাথে ১০ জন চাউল নিয়া আসছি। বাড়ি আনি মাপি দেখি ৮ কেজি করি চাউল দিছে। গরিবের চাউলো চোর করে। কাক বিচার দিমো।’ ঈদ উপলক্ষে ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) কর্মসূচির চাল কম পেয়ে এভাবে বলেন জরিনা। জরিনার বাড়ি কুড়িগ্রাম সদরের বেলগাছা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের পলাশবাড়ী পশ্চিম পাড়া গ্রামে।
ওই ইউনিয়নের সুবিধাভোগী বৃদ্ধা আছিরন বলেন, ‘ আমরা ১০ কেজি করি চাউল পাই। কিন্তু বাড়ি আনি মাপি দেখি ৮ কেজি চাউল দিছে।’
শুধু আছিরন কিংবা জরিনা নন। বেলগাছা ইউনিয়নের ভিজিএফ কর্মসূচির চাল পাওয়া মনোয়ারা খাতুন, আছিয়া ও জেন্নাহ বেগম সহ সুবিধাভোগীরা জানান, তারা দশ জন চাউল নিয়ে এসে মেপে দেখেন প্রত্যেকের ভাগে ৮ কেজি করে চাউল দিয়েছে। অর্থাৎ দশ জনের চালে দুই কেজি করে মোট ২০ কেজি চাল ঘাটতি। এভাবে প্রত্যেক সুবিধাভোগীকে চাল কম দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ সুবিধাভোগীদের।
কুড়িগ্রাম সদরের বেলগাছা ইউনিয়নের ঈদ উপলক্ষে বিতরণ করা সরকারের ভিজিএফ কর্মসূচির চাল বিতরণে ওজনে কম দেওয়ার এমন অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন সুবিধাভোগী হত দরিদ্ররা। ভুক্তভোগীদের এমন অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ওই ইউনিয়নের একাধিক ওয়ার্ড সদস্য। তারা বলছেন, চেয়ারম্যান লিটন মিয়া নিজে এই কারচুপি করছেন। ইচ্ছাকৃতভাবে সুবিধাভোগীদের নির্ধারিত ওজনের চেয়ে কম পরিমাণে চাউল দেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল মিটার কিংবা পাল্লা দিয়ে চাউল মেপে না দিয়ে বালতি দিয়ে অনুমান করে চাল দেওয়া হচ্ছে।
ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ওই ইউনিয়নের মোট ৫ হাজার ৭৬৫ জন সুবিধাভোগীকে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঈদের আগেই এই বরাদ্দ বিতরণ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সুবিধাভোগীদের চাল কম দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বেলগাছা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড সদস্য তছলিম উদ্দিন বলেন,‘ আমার ওয়ার্ডের সুবিধাভোগীদের সাড়ে ৭ কেজি থেকে ৮ কেজি করে চাউল দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান নিজেই এই চাউল কম দিয়েছেন। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ কিছু বলে না।’
তসলিম উদ্দিন বলেন, আমি আজ (বুধবার) পরিষদ চত্বরে দাঁড়িয়ে ছিলাম বলে চেয়ারম্যান তার লোকদের দিয়ে আমার ওপর হামলা করেছে। আমার শার্টের কলার ধরে আমাকে লাঞ্চিত করেছে।’
একই ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড মেম্বার আলমগীর কবির বলেন,‘ আমার ওয়ার্ডের কয়েকজন এসে আমাকে বললো ১০ কেজি চাউল না দিয়ে কাউকে ৮ কেজি আবার কাউকে ৯ কেজি দিয়েছে। বালতি দিয়ে মেপে পরিমাপে কম চাউল দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই।’
এই ইউপি সদস্য বলেন, ‘চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কোনও লাভ নেই। এর আগে আমরা চেয়ারম্যানের অনিয়ম নিয়ে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোনও কাজ হয় নাই।’
সুবিধাভোগী ও ইউপি মেম্বারদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপি সচিব মো. হুমাউন কবির। তিনি বলেন, ‘আমরাতো চাল মেপে দেই না। ৫ জন আসলে একটি বস্তা খুলে তাদের ঢেলে দেই। গোডাউন থেকে মাপে কম থাকলে সেটা আমাদের জানা নেই।’
সুবিধাভোগীদের চাল কম দেওয়ার বিষয়ে জানতেন চাইলে বেলগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিটন মিয়া বলেন, ‘আমিতো চাল মেপে দেই না। পাঁচ জনের স্লিপ এক সাথে করে একটি বস্তার চাল ঢেলে দেই। বস্তায় চাল কম থাকলে সেটা আমার জানা নেই।’
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি কোনও চাল কম দেই নাই। আপনারা পরিষদ চত্বরে এসে বিতরণ দেখতে পারেন। গোডাউন থেকে যে বস্তা আসে সেটার এক বস্তা ৫ জনকে ঢেলে দেই। কিছু লুজ দেওয়া হয় তবে সেই সংখ্যা খুব কম।’
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রাসেদুল হাসান বলেন, ‘এমন অভিযোগ আমি পাইনি। যদি কেউ প্রমাণ সহ অভিযোগ দেন তাহলে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
//নিউজ//উলিপুর//চন্দন/এপ্রিল/২০/২৩